পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Independence Day 2023: শান্তিনিকেতনে বসে সাক্ষাতে-চিঠিতে নেতাজি-গান্ধিজির মনান্তর দূর করতে উদ্যোগী ছিলেন কবিগুরু - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Tagore tried to reduce distance between Netaji-Gandhi: শান্তিনিকেতনে বসেই সাক্ষাতে ও চিঠিতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও মহাত্মা গান্ধির মধ্যের মনান্তর দূর করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৷ স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে বিশেষ প্রতিবেদন ৷

Independence Day 2023
নেতাজি-গান্ধিজির মনান্তর দূর করতে উদ্যোগী ছিলেন কবিগুরু

By

Published : Aug 14, 2023, 4:37 PM IST

Updated : Aug 14, 2023, 4:42 PM IST

নেতাজি-গান্ধিজির মনান্তর দূর করতে উদ্যোগী ছিলেন কবিগুরু

বোলপুর, 14 অগস্ট: গুরুদেব উপলব্ধি করেছিলেন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধি ও সুভাষচন্দ্র বসুর মতবিরোধ দূর করতে হবে । তাই শান্তিনিকেতনে বসে নেতাজিকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি চিঠি লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । এমনকী, শান্তিনিকেতন সফরে দুই সংগ্রামী নেতার সঙ্গে পৃথক পৃথক ভাবে আলোচনাও করেছিলেন তিনি ৷ অর্থাৎ, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন কোন পথে যাবে বা নিয়ে যাওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বসু ও মহাত্মা গান্ধির আলোচনা হয় শান্তিনিকেতনের মাটিতে ।

1934 সালের 17 অগস্ট কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতন থেকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে একটি চিঠিতে লিখছেন, "মহাত্মা গান্ধির চরিত্রের মধ্যে একটা প্রবল নৈতিক শক্তিকে ভক্তি যদি করতে না পারি, তবে সেটাই বলব অন্ধতা ৷ অথচ তাঁর সঙ্গে আমার স্বভাবের, বুদ্ধির ও সংকল্পের বৈপরীত্য অত্যন্ত প্রবল ৷ কিন্তু দেশের নির্জীব চিত্তে হঠাৎ যে বল এনে দিয়েচেন, একদিন তা সমস্ত ক্ষতিকে উত্তীর্ণ করে টিকে থাকবে । আমরা কেউই সমস্ত দেশকে এই প্রাণশক্তি দিই নি ।"

অর্থাৎ, এই চিঠির মধ্যে দিয়ে মহাত্মা গান্ধির প্রশংসা করে স্নেহের সুভাষকে মনান্তর দূর করতে উৎসাহিত করেছেন গুরুদেব ৷ 1939 সালের 19 জানুয়ারি শান্তিনিকেতনের উত্তরায়ণ থেকে একটি চিঠিতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখছেন,

"আগামী কংগ্রেসে তোমাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রকাশ্য সমর্থন করবার জন্য আমার কাছে উপরোধ এসে পৌঁচেছে । আমার বক্তব্য তোমাকে জানিয়ে রাখছি । এ সম্বন্ধে আগ্রহ প্রকাশ করে পূর্বেই আমি গান্ধীজী ও জহরলালকে চিঠি লিখেছিলাম বোধ হয় জানো ।"

অর্থাৎ, এই চিঠির মধ্যে দিয়ে জাতীয় কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট হিসাবে সুভাষচন্দ্রকে সমর্থন করার কথা উঠে আসে । 1914 সালে ছাত্রাবস্থায় প্রথম শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু । পরে 1939 সালে বিশ্বকবির আমন্ত্রণে শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন নেতাজি । গুরুদেবের উপস্থিতিতে আম্রকুঞ্জে তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন আশ্রমিকগণ । সেই সময় দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অভিমুখ নিয়ে সুভাষকে একাধিক পরামর্শ দিয়েছিলেন গুরুদেব ।

নেহরুর সঙ্গে কবিগুরু

বোলপুর কলেজের অধ্যাপক মিঠুনকুমার দে বলেন, "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব যখন স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন, সেটা স্বাভাবিকভাবেই অন্য মাত্রা পায় । সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি রবীন্দ্রনাথের একটা দুর্বলতা ছিল । তাঁকে জাতীয় স্তরে প্রতিনিধি হিসেবে চাইছিলেন তিনি । সে কথা নেহেরুকে জানিয়েও ছিলেন তিনি । তবে রবীন্দ্রনাথ এও মনেপ্রাণে চাইছিলেন যে, সুভাষচন্দ্র ও গান্ধিজির বিরোধ প্রশমিত হোক । 1938-39 সালে শান্তিনিকেতনে বসেই কংগ্রেসের বৈঠক নিয়ে সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে আলোচনা হয় । একই ভাবে গান্ধিজির সঙ্গেও আলোচনা হয় ৷ শান্তিনিকেতনে বসে সমগ্র দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের উত্তাপকে আত্মীকরণ করে দেশনেতাদের বরণ ও তাঁদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেছেন গুরুদেব, এটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।"

প্রসঙ্গত, 1915 সালের 10 মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার ফিনিক্স স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে প্রথম শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন মহাত্মা গান্ধি ৷ এরপর 1920, 1925, 1940 সালে শান্তিনিকেতনের এসেছিলেন গান্ধিজি । এমনকী, 1945 সালে রবীন্দ্রনাথশূন্য শান্তিনিকেতনেও এসেছিলেন তিনি । স্ত্রী কস্তুরবা গান্ধিকে নিয়ে উত্তরায়ণের শ্যামলী গৃহতেও থেকেছেন মহাত্মা । সেই সময় গান্ধিজির সঙ্গে গুরুদেবের গুরুগম্ভীর বিস্তর আলোচনা হয় । যার অধিকাংশটাই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে কীভাবে স্বরাজ আসবে তা নিয়ে ।

রবীন্দ্রনাথকে লেখা নেতাজির চিঠি

আরও পড়ুন:নেই সংগ্রহশালা, বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর স্মৃতিবিজড়িত পালাড়া গ্রাম ও চন্দননগর বিস্মৃতির অতলে

এক কথায় গুরুদেব উপলব্ধি করেছিলেন, 'দেশনায়ক' নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও 'জাতির জনক' মহাত্মা গান্ধির মনান্তর দূরীকরণ হলে দেশ লাভবান হবে । তাই শান্তিনিকেতনের মাটিতে বসেই দুই নেতাকে একাধিক চিঠি দিয়ে সেই মেলবন্ধনের কাজটাই করে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ । এমনকী, জহরলাল নেহেরু যখন শান্তিনিকেতনে এসে গুরুদেবের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, শ্রীনিকেতনে বসে তাঁকেও একই কথা বলেছিলেন বিশ্বকবি । বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালা ও বৈদ্যবাটি নেতাজি সুভাষ আকাদেমিতে সেই সমস্ত মূল্যবান পত্রাদি সংরক্ষিত রয়েছে ।

গান্ধিজির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ

উল্লেখ্য, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে শান্তিনিকেতনে সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধি, জওহরলাল নেহরু প্রমুখ দেশনেতারা সাক্ষাৎ করেন । এই লালমাটি থেকেই স্থির হয়েছিল স্বরাজের জন্য ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের গতিপথ ।

Last Updated : Aug 14, 2023, 4:42 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details