শান্তিনিকেতন, 27 জুলাই: বিভিন্ন ইস্যু, বিতর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাঝে মাঝেই মাথাচাড়া দেয় হিংসা ও হানাহানির ঘটনা ৷ ধর্মীয় বিভেদ মাঝেমাঝেই সাপের ফণার মতো মাথা তোলে আমাদের সমাজে ৷ তবে সম্প্রীতিরও হাজারও নজিরও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আমাদের চারপাশে ৷ এই সম্প্রীতিই হল ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ ৷ বীরভূমের শান্তিনিকেতনের সুরুল গ্রাম এরকমই এক সম্প্রীতির নজির গড়ছে (Birbhum Surul Village Temple) ৷
এখানে প্রায় 350 বছরের প্রাচীন মন্দির সংস্কার করছেন মুসলমান সম্প্রদায়ের শিল্পীরা । এই মন্দিরের গায়ে আঁকা রয়েছে বহু দেবদেবীর প্রতিকৃতি । আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুরুল জমিদার বাড়ি । বর্ধমান জেলার নীলপুর গ্রাম থেকে বীরভূমের শান্তিনিকেতনের সুরুল গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেছিলেন ভরত চন্দ্র ঘোষ ('সরকার' পদবি ইংরেজ প্রদত্ত ) । তাঁর ছেলে কৃষ্ণহরি সরকার এখানে জমিদারির সূচনা করেন ৷ সুরুল গ্রামে লক্ষ্মী জনার্দন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কৃষ্ণহরি সরকার । আনুমানিক 350 বছরের প্রাচীন এই মন্দির, জানাচ্ছেন সরকার বাড়ির সদস্যরা । এই মন্দিরের গায়ে রয়েছে অজস্র দেবদেবীর মূর্তি, বর্ণিত কাহিনী সমূহ ৷
সরকার বাড়ির সদস্যরা জানিয়েছেন, প্রাচীন এই মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল ৷ তাই ঐতিহ্য, শিল্প, সংস্কৃতি ধরে রাখতে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয় ৷ তবে এই প্রাচীন শিল্পকলা মুদ্রিত মন্দির সংস্কার করতে সব শিল্পী পারেন না ৷ তার জন্য পুরাতত্ত্ব বিভাগের বিশেষজ্ঞ শিল্পী চাই৷ সেই মতো মুর্শিদাবাদ থেকে একদল শিল্পীকে নিয়ে আসা হয় মন্দির সংস্কারের জন্য ৷ মহম্মদ তাজেম শেখের তত্ত্বাবধানে চলছে এই মন্দির সংস্কারের কাজ ।
আরও পড়ুন : সঙ্গী দারিদ্রতা, গিনেস বুক অফ রেকর্ডসে নাম তুলতে মরিয়া সমরেশ
শিল্পী মহম্মদ তাজেম শেখের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, এর আগেও তিনি বেলুড় মঠে বিভিন্ন সংস্কারের কাজ করেছেন, সারদাদেবীর সিঁড়িঘাট, দেউল মন্দির, শ্রীরামপুরে গীর্জা, ইম্ফল মন্দির প্রভৃতি সংস্কারের কাজও তারাই করেছেন । তিনি বলেন, "আমরা কর্মটাই দেখি ৷ যতটুকু শিল্পকর্ম জানি সেটুকুই করি ৷ মন্দির, মসজিদ, গির্জা সব জায়গায় কাজ করি ।" সুরুল জমিদার বাড়ির সদস্য জয়দেব সরকার বলেন, "আমাদের কাছে ওদের পরিচয় শিল্পী বলেই ৷ শিল্পীর আলাদা করে কোন জাত-ধর্ম হয় না ৷ প্রাচীন এই মন্দির ওরাই সংস্কার করছে ৷ পুরাতত্ত্ব বিভাগ থেকেই ওদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ৷ এখানে থেকেই মন্দিরের কাজ করছে মুর্শিদাবাদের শিল্পীরা ৷"