বোলপুর, 25 মে: তাদের জীবনযাত্রা আরও পাঁচটা মেয়েদের মত নয় ৷ রোজ বাবা-মায়ের সঙ্গে যেতে হয় মাঠে ৷ হাতে হাত মিলিয়ে করতে হয় চাষের কাজ ৷ ফলে সেখানে শিক্ষা কেবল বিলাসিতা মাত্র ৷ তবু পায়ে হেঁটে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যাওয়াটাই সার ৷ প্রাইভেট টিউশন নেওয়ার মতো আর্থিক ক্ষমতা নেই ৷ তবে পড়াশুনার ইচ্ছে প্রবল ৷ আর কথায় বলে, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয় ৷ সেই ইচ্ছের ডানায় ভর করেই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে এবারে মাধ্যমিকে বসেছিল আদিবাসী অধ্যুষিত শান্তিনিকেতনের প্রত্যন্ত গ্রামের চারটি মেয়ে ৷ পাশ করে নজির গড়েছে তারা ৷ চার ছাত্রীর উত্তীর্ণে খুশি গ্রামবাসীরা ৷
শান্তিনিকেতন থানার অন্তর্গত কংকালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের সাহেবডাঙ্গা আদিবাসী অধ্যুষিত প্রত্যন্ত একটি গ্রাম । উন্নয়নের আলো সেভাবে পৌঁছায়নি এই গ্রামে । পাশাপাশি শিক্ষার আলো থেকেও এতকাল বঞ্চিত ছিল গ্রাম ৷ অথচ, শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতির পীঠস্থান হিসাবে পরিচিত শান্তিনিকেতন । কিন্তু, প্রবাদবাক্য আছে 'প্রদীপের তলায় অন্ধকার' । যদিও, এই প্রবাদবাক্যকে উপেক্ষা করে এই প্রথম এই গ্রাম থেকে চারজন মেয়ে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হল ।
বোলপুর পারুলডাঙ্গা শিক্ষানিকেতন আশ্রম বালিকা বিদ্যাপীঠের ছাত্রী বাসন্তি টুডু, লতিকা মুর্মু, মিরু হাঁসদা ৷ তাদের বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব পাঁচ কিলেমিটার ৷ গুসকড়ার পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আবাসিক স্কুলের ছাত্রী সুমিত্রা টুডু ৷ তার বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব 15 কিলেমিটার ৷ সেই পথ রোজ হেঁটে যাত্রা করেছেন তারা ৷ এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এই চারজনই । এর আগে এই গ্রাম থেকে কোনও মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেইনি, উত্তীর্ণ হওয়া তো দূরের কথা ৷ নারী শিক্ষার অগ্রগতি নিয়ে আন্দোলন চলছে বহু দিন ধরেই ৷ সেই আন্দোলনের নজির বলা যায় চার আদিবাসী কন্যার সাফল্যকে ৷