কলকাতা, 18 জানুয়ারি : 2018 সালে মেয়াদ শেষ হওয়া 17 টি পৌরসভা ও পৌরনিগমের ডিলিমিটেশন নিয়ে জটিলতা । আজ কলকাতা পৌরনিগম সহ 93 টি পৌরসভার খসড়া সংরক্ষণ তালিকা প্রকাশ হয়ে গেল । কিন্তু বাকি থাকল সিউড়ি আর বোলপুর। সেখানে এখনও ডিলিমিটেশনের কাজই শেষ হয়নি । সংরক্ষণের খসড়া হিসেবে প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি। তার জেরে এপ্রিলে ওই দুই পৌরসভার ভোট নিয়ে তৈরি হয়ে গেছে জটিলতা ।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, যেকোনও পৌরসভা ও পৌরনিগমের বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার 6 মাস আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় তৎপরতা । নিয়মমতো নির্বাচন কমিশনের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয় সংশ্লিষ্ট পৌরসভার কিংবা পৌরনিগমের আসন কিংবা ওয়ার্ডের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হবে কি না । রাজ্য প্রশাসন সেই বিষয়ে সবুজ সংকেত দিলে সংশ্লিষ্ট জেলার রিটার্নিং অফিসার অর্থাৎ জেলাশাসককে সেই কাজ করার নির্দেশ দেয় কমিশন ।
বোলপুর-সিউড়িতে এপ্রিলে ভোট নিয়ে সংশয় আগামী অক্টোবরের মধ্যে রাজ্যের 111 টি পৌর নিগম এবং পৌরসভার মেয়াদ শেষ হয়েছে কিংবা হবে। দার্জিলিঙের পৌরবোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছিল । সেই সূত্রে সংখ্যাটা দাঁড়াচ্ছে 112টি । রাজ্যের যে কটি পৌরসভা এবং পৌরনিগমের ডিলিমিটেশন বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছিল প্রশাসন, তার প্রায় সবকটি শেষ করে ফেলা হয় যথাসময়ে । শুধুমাত্র বাকি রয়ে গেছে সিউড়ি এবং বোলপুরের ডিলিমিটেশনের কাজ । যদিও বীরভূম প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই সিউড়ি ডিলিমিটেশনের খবর পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে । কিন্তু নির্বাচন কমিশনের তরফে তাদের প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে এখনও পর্যন্ত জেলা প্রশাসনকে ডিলিমিটেশনের চূড়ান্ত নোটিফিকেশন জারির কথা বলা হয়নি । অর্থাৎ সিউড়ির জটিলতা প্রায় কেটে গেছে । কিন্তু বিশ্বস্ত সূত্র জানাচ্ছে, বোলপুর নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে বিস্তর।
সূত্রের খবর , প্রাথমিকভাবে যে ডিলিমিটেশন করা হয়েছিল বোলপুরের ক্ষেত্রে, তাতে বিশ্বভারতী দুটি ওয়ার্ডে ভাগ হয়ে যায় । বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে আপত্তি রয়েছে । তাতে প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হবে । বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে এ বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে রিটার্নিং অফিসারের দপ্তরে । অন্যদিকে, বোলপুর পৌরসভার সীমানা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে জেলা প্রশাসন । সেটি আপাতত নবান্নের বিবেচনাধীন । জানা গেছে, বোলপুর লাগোয়া একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের থেকে বড় অংশ বোলপুর পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।
এই বিষয়ে নবান্নের সবুজ সংকেত পেলে তারপর নতুন করে সীমানা নির্ধারণ হবে ওই পৌরসভার। সূত্র জানাচ্ছে, সেই কাজ করতে আরও অন্তত 15 দিন সময় লাগবে। অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের আগে সেই কাজ শেষ হওয়া সম্ভব নয়। এরপর করতে হবে সংরক্ষণের তালিকা প্রস্তুতের জটিল অঙ্ক। এই কাজ সিউড়ি এবং বোলপুরের একসঙ্গেই শুরু হতে পারে । সেই কাজ শেষ হতে মাঝ ফেব্রুয়ারি গড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। জেলা প্রশাসনের তরফে সেই কাজ শেষ হওয়ার পর তা পাঠানো হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে। তারপর প্রকাশ করা হবে সংরক্ষণের খসড়া। এই পুরো প্রক্রিয়া ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হওয়া খুবই কঠিন বলে মেনে নিচ্ছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ।
রাজ্যের পৌর আইন বলছে, সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশের ন্যূনতম 70 দিন পরে ভোট করতে হয় । সেক্ষেত্রে যদি ফেব্রুয়ারির শেষেও সংরক্ষণের খসড়া প্রকাশ করা হয়, তবে এপ্রিলের মধ্যে ভোট হওয়া সম্ভব নয় । আবার এপ্রিলের 24 কিংবা 25 তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে রমজান মাস । ওই সময় ভোট করার পক্ষপাতী নন মুখ্যমন্ত্রী । এর আগে তিনি বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন । সেক্ষেত্রে রমজানের পরে ওই দুই পৌরসভার ভোট হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।