নালন্দার মতোই পরিণতি হবে বিশ্বভারতীর, সতর্কবার্তা অমর্ত্য সেনের বোলপুর, 6 জুলাই: পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় নালন্দা দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে, বিশ্বভারতীর অবস্থাও একই হবে বলে মনে করছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ৷ বিশ্বভারতীর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনায় দুই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন অধ্যাপক সেন ৷ একদা তিনি নালন্দার আচার্য ছিলেন ও বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী ৷ 'নালন্দা হিন্দু প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে' ও 'বিশ্বভারতীতে প্রাচীর উঠছে' বলে বিস্ফোরক বর্ষীয়ান এই অর্থনীতিবিদ । তবে এই পরিস্থিতি বদলানো সম্ভব বলেও পড়ুয়াদের জানান 'ভারতরত্ন' অমর্ত্য সেন ৷
বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সময়কালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিরতা নিয়ে প্রথম থেকেই সরব পড়ুয়ারা । উপাচার্যের কোনও সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেই ছাত্রছাত্রীদের হতে হয়েছে সাসপেন্ড, বসতে দেওয়া হয়নি পরীক্ষায়, কারও আবার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছে, অভিভাবকদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে, এমনকি বহিষ্কারও করা হয়েছে পড়ুয়াদের ।
পাশাপাশি, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা ও বসন্তোৎসব । ভাটা পড়েছে বিশ্বভারতীর বহু প্রথায় ৷ এই সকল বিষয় নিয়ে বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা 'প্রতীচী' বাড়িতে গিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে দেখা করেন ৷ তাঁর পরামর্শ চান ৷ বাড়ির বারান্দায় বসে পড়ুয়াদের পরামর্শ দিতে গিয়ে অধ্যাপক সেন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গে টেনে আনেন ৷
আরও পড়ুন:হিন্দুরাষ্ট্রের পথ প্রশস্ত করতেই নতুন করে ইউনিফর্ম সিভিল কোড, অভিযোগ অমর্ত্য সেনের
তিনি বলেন, "আমি আগে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ছিলাম ৷ বেশ কিছু বছর ছিলাম ৷ তারপর নতুন ভাবে পড়ানো শুরু করেছিলাম ৷ এখন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমশ ছোট হতে হতে হিন্দু প্রতিষ্ঠান হয়ে গেল ৷ যার মধ্যে বৌদ্ধধর্মের যোগ আর দেখা গেল না ৷ পড়াশোনাতে তর্কের মধ্যদিয়ে জানার উপায় ছিল ৷ আগে যাঁরা অধ্যাপক ছিলেন, তাঁরা তর্কে জোর দিতেন ৷ সেটা উঠে গেল ৷ নালন্দাকে ইতিহাসে যেভাবে দেখা হত, এখন দেখা হয় না ৷ এটা খুব দুঃখের ।"
এই ভাবেই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে অমর্ত্য সেন আরও বলেন, "এখন শান্তিনিকেতনে বড় বড় পাথরের দেওয়াল দেখা যায় ৷ এটাও দুঃখের কথা । এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তার শিক্ষা ব্যবস্থার যে বড় রকম ক্ষতি হবে এমনটা না মনে করার কোনও কারণ নেই ৷ আমাদের ভাবতে হবে এটাকে কীভাবে বদলানো যেতে পারে ৷ আমার ধারণা শান্তিনিকেতনেও, নালন্দাতেও একই জিনিস হচ্ছে ৷ যারা এই জিনিস করছে তারা যে খুব শক্ত মাটিতে দাঁড়িয়ে আছে তা নয় ৷ খুবই ভঙ্গুর জমি ৷ হতে পারে রাজনৈতিক দিকটা এত বড় যে দেশের রাজনীতির পরিবর্তন না হলে কোনও পরিবর্তন হবে না ৷ এটা আমি মনে করি না ।"
উল্লেখ্য, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় গঠনে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম সহযোগী ছিলেন অমর্ত্য সেনের দাদামশাই পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন । স্বয়ং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাম রেখেছিলেন 'অমর্ত্য' । তিনি বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী ৷ তাই বিশ্বভারতীর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন অধ্যাপক সেন ৷ সেই উদ্বেগ প্রকাশ করতে গিয়েই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিচারণা করেন তিনি ৷
আরও পড়ুন:ভিয়েতনামে অমর্ত্যর লেখা ছাপানো গেঞ্জি বিকোচ্ছে মার্কিন মুলুকে, টুইট অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর