বীরভূম, 22 জুন : টানা আট দিনের বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে বীরভূমের বাদাম চাষ ৷ লাভের আশায় বাদাম চাষ করে এ বছর চরম লোকসানের সম্মুখীন জেলার চাষিরা ৷ টানা বৃষ্টির জেরে সব বাদাম নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷
বীরভূম জেলায় মূলত ধান, আখ, আলু, পেঁয়াজ, বিভিন্ন রকমের শাক ও তিল প্রভৃতি চাষ হয়ে থাকে । কিন্তু বিগত চার বছর যাবৎ বাদাম চাষে লাভের মুখ দেখছেন বীরভূমের একাধিক এলাকার চাষিরা ৷ অজয় নদের তীরবর্তী গ্রামগুলিতে ব্যাপক হারে বাদাম চাষ করেন চাষিরা । প্রায় 300 বিঘা জমিতে এ বছর বাদাম চাষ করেছিলেন তাঁরা ৷
চাষিদের কথায়, বেলে-দোআঁশ মাটি বাদাম চাষের জন্য উপযোগী । অজয় নদের তীরবর্তী এলাকায় এই ধরনের মাটি থাকায় বাদাম চাষ ভাল হয় । তাই গত চার বছর ধরে অজয় নদের তীরে বড় শিমুলিয়া, ছোট শিমুলিয়া, সুলতানপুর, রসুলপুর প্রভৃতি গ্রামগুলিতে চাষিরা বাদাম চাষ শুরু করেছেন ৷ লাভও হচ্ছিল ভালই ৷
কিন্তু এ বছর তাতে বাধ সাধল বর্ষা ৷ অতি সক্রিয় বর্ষার পাশাপাশি গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণাবর্ত ৷ এই দুইয়ের জেরে টানা আট দিন ধরে বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে বাদাম চাষ । টানা বৃষ্টির জেরে জমিতে জল জমেছে । ফলে পচতে শুরু করেছে মাটির নিচে থাকা বাদাম ৷ বিঘার পর বিঘা জমির বাদাম এখনও জমিতেই পড়ে রয়েছে । ঘরে তুলতে পারেননি চাষিরা । যে সব বাদাম ঘরে তোলা হয়েছে সেগুলিতেও কালো দাগ হয়ে গিয়েছে । ফলে তা ন্যায্য মূল্যে আর বিক্রি করতে পারবেন না ৷
বাড়ির মেয়েরা বাদাম ছাড়ানোর কাজ করছেন বাদাম চাষের বিষয়ে চাষিদের কাছ থেকে জানা গেল একাধিক তথ্য ৷ বছরে দু'বার বাদাম চাষ হয় । খরিফ ও রবি মরসুমে । খরিফ মরসুমে এপ্রিল থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বাদামের বীজ রোপণ করতে হয় । বাদাম চাষের জন্য কম করে জমি দু'বার লাঙল দিয়ে চাষ করতে হয় । দু'বার সেচ দিলেই হয় । সার তেমন লাগে না । তবে পোকার হাত থেকে গাছ বাঁচাতে কীটনাশক দিতে হয় ।
পায়ের সাহায্যে চলছে বাদাম শোকানোর কাজ সব মিলিয়ে বিঘা প্রতি দশ হাজার টাকা খরচ বাদাম চাষে ৷ এক বিঘা জমিতে প্রায় 4 কুইন্টাল বাদাম হয়ে থাকে । সঠিক ভাবে ফলন হলে প্রতি বিঘা থেকে লাভের পরিমাণ দ্বিগুণ । চাষীদের কাছ থেকে কাঁচামাল হিসেবে প্রতি কেজি বাদাম 50 টাকা কিলো দরে কিনে নেয় মোয়াজ্জেমরা ।
প্রসঙ্গত, বাদামে শতকরা 48 থেকে 50 শতাংশ তেল থাকে ৷ 22 থেকে 29 শতাংশ থাকে প্রোটিন । তাই ভোজ্য তেল উৎপাদনের জন্যই মূলত বাদামের চাহিদা সর্বাধিক । এছাড়াও, চানাচুর, কেক, বিস্কুট সহ বিভিন্ন শুকনো খাবার তৈরিতে বাদাম ব্যবহৃত হয়ে থাকে । কাঁচা ও ভাজা দুই রকমের বাদামেরই ভাল চাহিদা থাকায় চাষিরা আগ্রহী হন বাদাম চাষে ৷ কিন্তু এ বছর বৃষ্টিতে সব নষ্ট ৷ বিঘা প্রতি দশ হাজার টাকা খরচ করে যে চাষ করেছিলেন , সেই টাকাই বা উঠবে কীভাবে তা ভেবে পাচ্ছেন না চাষিরা ৷ এই অবস্থায় সরকারি সহায়তা কী মিলবে ? এখন সেদিকেই তাকিয়ে চাষিরা ।
টানা বৃষ্টিতে বীরভূমে ক্ষতিগ্রস্ত বাদাম চাষ এক বাদাম চাষি শের আলি বলেন, "প্রতি বছর ভালই লাভ হত । তাই বাদাম চাষ শুরু করেছিলাম । এবার বৃষ্টির জন্য সব শেষ হয়ে গেল ৷ কত বাদাম পচে গিয়েছে, ঘরে তুলতে পারলাম না ।"
চাষি পরিবারের মেয়ে আলমা খাতুনের গলায় আক্ষেপের সুর, "রোদ নেই, তাই বাদামে কালো দাগ হয়ে গিয়েছে । বৃষ্টির জন্য ঘরে তুলতে পারলাম না । এ বছর অনেক ক্ষতি হয়ে গেল ।"
এ বিষয়ে বোলপুর-শ্রীনিকেতনের ব্লক আধিকারিক সেখ জসিমউদ্দিন বলেন, "যশ ও তার পরবর্তী টানা বৃষ্টিতে শুধু বাদাম নয়, তিল চাষ-সহ একাধিক চাষের ক্ষতি হয়েছে । অনেক চাষি এই নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছে । আমাদের কৃষি আধিকারিকরা চাষের জমি ঘুরে দেখছেন । সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে ।"
আরও পড়ুন :সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দূষণমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্ন অরণিবাবুর