বোলপুর, 26 অগস্ট: দুর্গম হিমালয়ের পাদদেশে প্রত্যন্ত গ্রামের পর গ্রাম পায়ে হেঁটে ঘুরে ঘুরে বৌদ্ধতন্ত্র, বৌদ্ধশাস্ত্র, ভাষার বৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা চালিয়ে গিয়েছেন অধ্যাপক সুনীতিকুমার পাঠক । 100 বছরে পা দিয়েও থেমে নেই তাঁর গবেষণা ।
শান্তিনিকেতনের বাড়িতে বসে এখনও প্রবন্ধের পর প্রবন্ধ লিখে চলেছেন ৷ রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার-সহ স্বর্ণপদক প্রাপ্ত পণ্ডিত সুনীতিবাবুর দখলে বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, তিব্বতি, মঙ্গোলিয়া চিনা, পালি, প্রাকৃত, সংস্কৃতের মতো 9টি ভাষা । এমনকী, সব-কটি ভাষাতেই প্রবন্ধ লেখার দক্ষতা রয়েছে তাঁর । উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, অধ্যাপক সিআর লামা ও সুনীতিবাবুর হাত ধরেই 1954 সালে বিশ্বভারতীতে ভারত-তিব্বতী চর্চা বিভাগের শুরু হয় । গবেষণার সুবাদে তাঁর সংগ্রহে রয়েছে প্রাচীন তালপাতার পুঁথির ভাণ্ডার ৷ যা ভাষাচর্চার জগতে অমূল্য সম্পদ । সেমিনারে আমন্ত্রিত হয়ে এক সময় চষে বেড়িয়েছেন ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলিতে । ইটিভি ভারতে তিনি তাঁর গবেষণার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করলেন ।
1924 সালের 1 মে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মলিঘাঁটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সুনীতিকুমার পাঠক ৷ ছেলেবেলাতেই মাকে হারিয়েছেন । মামার বাড়িতেই তাঁর বড় হয়ে ওঠা । সেখানেই পড়াশোনা । পরবর্তীতে কলকাতার তীর্থপতি ইনস্টিটিউশন, সংস্কৃতি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা । 1938 সালে একবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দেখার সুযোগও হয়েছে তাঁর ।
ছাত্রবৃত্তি নিয়ে তিব্বতী ভাষা শিক্ষা ৷ প্রখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় কালিম্পং-এ গবেষণার সুযোগ পান তিনি । 1954 সালে মাত্র 205 টাকা বেতনে বিশ্বভারতীর পুঁথি বিভাগে যোগদান করেন সুনীতিকুমার পাঠক । সেই বছরই অধ্যাপক সিআর লামার সঙ্গে যৌথ ভাবে বিশ্বভারতীতে ভারত-তিব্বতী চর্চা বিভাগের প্রবর্তন করেন তিনি । অধ্যাপনার পাশাপাশি নিজেও বিশ্বভারতীর চিনাভবনে চিনা ভাষার শিক্ষার জন্য ভর্তি হন ।
1961 সালে ভারত সরকারের নির্দেশ মতো সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন সুনীতিবাবু । ভারতীয় সৈন্যদের সহযোগিতার জন্য লাদাখ সীমান্তে তিব্বতী ভাষার বিভিন্ন তথ্য ইংরেজিতে অনুবাদের কাজে যুক্ত ছিলেন । 1969 সালে পুনরায় বিশ্বভারতীতে যোগদান করেন ৷ 1984 সালে বিশ্বভারতী থেকে অবসর নেন । কিন্তু, এখনও বিশ্বভারতীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিবিড় ।