বাঁকুড়া, ৮ মার্চ : ডোকরা শিল্প। ১৯৬৫ সালে বাঁকুড়ার ডোকরা গ্রামে শুরু হয়েছিল যার পথচলা। পাঁচটি পরিবারের মাত্র দশজন শিল্পীকে নিয়ে এর উত্থান। প্রথমে শুধুমাত্র ছেলেরাই এই কাজ করতেন। কিন্তু ছেলেরা নেশায় আসক্ত হওয়ায় ডোকরা শিল্পের হাল ধরেন মহিলারা। বর্তমানে সেখানে ডোকরা শিল্পীর সংখ্যা ২০০। তাঁদের মধ্যেই অনেকে দেশ বিদেশে যাচ্ছেন প্রশিক্ষণও দিতে।
বিভিন্ন লড়াইয়ের মধ্যে দিয়েই উত্থান ডোকরা শিল্পের। গ্রামে পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সঙ্গ দিয়েছেন মহিলা শিল্পীরা। আজ এই শিল্পের চাহিদা দেশ বিদেশ সর্বত্রই। শিল্পীরা দেশের বিভিন্ন কলেজে যাচ্ছেন প্রশিক্ষণ দিতে। পুরুষদের পাশে নিজেদের স্থান অর্জন করার এই লড়াই কী ভাবে সম্ভব হল, তা জানালেন এক ডোকরা শিল্পী গীতা কর্মকার।
ছোটো নাগপুর থেকে এই ডোকরা শিল্পীরা আসে বাঁকুড়া শহরের রামপুর মনোহর তলায়। সেখানেই শুরু করে বসবাস। শুধুমাত্র পুরুষরাই এই শিল্পের কাজে নিযুক্ত থাকত। আর তাদের অধিকাংশই নেশায় আসক্ত ছিল। ফলে শিল্পের প্রসারে তাদের সেরকম ভূমিকা দেখা যায়নি। সত্তরের দশকে এই শিল্পকে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসেন যুদ্ধ কর্মকার নামে এক শিল্পী। তবে তখন শিল্পের কাজ পুরোটাই ছিল মহাজনদের কাছ থেকে ঋণের উপর ভিত্তি করে। ১৯৮৭ সালে এই গ্রামে বিয়ে হয় গীতা কর্মকারের। তিনিই প্রথমে একটি সোসাইটি গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। বছরখানেকের চেষ্টার পর তিনি সফল হন। এরপর জেলা শিল্পকেন্দ্র বা DIC-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শুরু হয় ডোকরা শিল্প প্রসারের পথ চলা। এরপর একে একে বহু সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে এসেছে এই ডোকরার কাজ এবং ডোকরা শিল্পীদের উন্নয়নে। এখন সরকারি মেলাতে ডাক পান ডোকরা শিল্পীরা। পসরা সাজিয়ে বিক্রি-বাট্টাও বেশ ভালোই হয়। তারপর আছে প্রদর্শনী। বিভিন্ন দেশের মানুষের সান্নিধ্য পান বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের ডোকরা।