পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

রুক্ষ জঙ্গলমহল আবাদে মুক্তির পথ দেখাচ্ছে "ঊষর মুক্তি"

রাজ্য়ের নয়া প্রকল্পে বৃষ্টির জল ধরে রেখে চাষের ব্যবস্থা হয়েছে ৷ রানিবাঁধ ব্লকের বাড়িকুল থানা এলাকার "ঊষর মুক্তি"র একটি প্রকল্প ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ । হাসি ফুটছে জঙ্গলমহলে৷

By

Published : Aug 26, 2020, 8:21 PM IST

Published : Aug 26, 2020, 8:21 PM IST

water conservation project at Bankura
"ঊষর মুক্তি"

বাঁকুড়া, 15 জুলাই: বাঁকুড়ার দক্ষিণপ্রান্ত ৷ জঙ্গলমহল । বন্ধুর প্রকৃতি । যদিও শাল-সেগুন-মহুয়ার ছায়াময় অরণ্য ৷ তবু অনুর্বর উঁচু-নিচু কাঁকুরে, পাথুরে মাটি । ভূমি অসমতল ৷ ঢালু জমিতে বর্ষার জল জমার উপায় নেই ! ফলে চাষবাসেরও বালাই নেই । উপায়হীন স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষগুলো চাষের মরশুমে "পূবে খাটতে যেত" । রাজ্যের পূব দিকের একাধিক জেলায় যেতেন তাঁরা ৷ মূলত দুই বর্ধমানে ৷ মজুরের কাজে । বরাবরই রুক্ষ মাটির এ পৃথিবীতে জীবীকার তীব্রসংকট ৷ এবার, এতদিনে বদলাচ্ছে পরিস্থিতি ৷ মুক্তির পথ দেখাচ্ছে "ঊষর মুক্তি", রাজ্য সরকারের জল সংরক্ষণ প্রকল্প ৷ বাস্তবিক সবুজ ফসল হয়ে হাসি ফুটতে শুরু করেছে জঙ্গলমহলের খেত-খামারে ! আনন্দ-মাদল বাজছে বাতাসে !

রানিবাঁধ ব্লকের বাড়িকুল থানা এলাকার "ঊষর মুক্তি"র একটি প্রকল্প ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ । তবে, গোটা ব্লকেই "ঊষর মুক্তি"র পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । আপাতত বারিকুল থানার বীরবাঁধ গ্রাম লাগোয়া এলাকায় ঊষর মুক্তি প্রকল্পের সুবিধায় চাষের কাজ শুরু করে দিয়েছেন স্থানীয়রা । কিন্তু, "ঊষর মুক্তি" কীভাবে পাশে দাঁড়াচ্ছে বাবুইঘাসের দেশের চাষিদের ?

আসলে এখানে ভূমি উলটোনো কড়াই চেহারার । ধাপে ধাপে নিচে নেমেছে ৷ বর্ষার জল গড়িয়ে নামে ঢাল বেয়ে ৷ সেই জল ধরে রেখে তাকে চাষের কাজে লাগানোর প্রকল্পই ঊষর মুক্তি । ঢালের প্রতি ধাপে জল ধরে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে ৷ ছোট গর্ত থেকে বড় জলাধার, যত নিচের ধাপের জমি তত বড় জলাধারের ব্যবস্থা ৷ এই পদ্ধতিতে সবচেয়ে বড় জলাধারটি বানানো হয়েছে একেবারে সমতলে ৷ প্রতি ধাপের ছোটো ছোটো চাষের জমিতে জলের ব্যবস্থা হচ্ছে সেই ধাপেরই জলাধার থেকে ৷

জলসঞ্চয় প্রকল্পে হাসি ফুটছে জঙ্গলমহলের খেত-খামারে !

জমির অবস্থান ও চরিত্র অনুযায়ী ছোটো, মাঝারি জলাধারের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে প্রচুর পরিমাণ হাপা (তুলনামূলক বড় জলাধার) । শুধু বারিকুল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই 1, 836 টি হাপা খোঁড়া হয়েছে ৷ হাপাগুলি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে প্রায় 20 ফুট । গভীরতা 10-15 ফুট । উপরের ধাপের গর্ত উপচে হাপাতে জমছে জল । হাপার আশেপাশেও ছোটো, বড় জমি তৈরি করে সম্ভব হচ্ছে চাষ । হাপারও নিচের স্তরে সমতল ভূমিতে বানানো হচ্ছে একটি করে সিপেজ ট্যাঙ্ক (পুকুর জাতীয় বড় জলাশয়) । হাপা থেকে জল উপচে গেলে তা গিয়ে পড়ছে ওই সিপেজ ট্যাঙ্কে ।

বারিকুল ছাড়াও "ঊষর মুক্তি"র কাজ শুরু হয়েছে আরও 7 টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ৷ সেগুলি হল অম্বিকানগর, হলুদ কানালি, পুড্ডি, বাজাকাটা, রানিবাঁধ, বোওতোড়া ও রুদ্র ৷

বীরবাঁধ গ্রামের ঊষর মুক্তি প্রকল্পে প্রায় 70 একর জমিতে হয়েছে চাষের কাজ । রুক্ষ মাটিতে সোনাঝুরি, সেগুন, অর্জুন, আম, কাজুর বাগান তো স্থানীয়রা করেছেনই ৷ ফলছে সবজিও ৷ সকলেই ভিনজেলায় মজুর খাটতে যাচ্ছেন না আর ৷

হাসি মুখে স্থানীয় কৃষক আলোকি টুডু বলেন, "আগে চারা অবস্থাতেই মরে যেত ধান ৷ এখন জল ধরে রাখা যাচ্ছে ৷ জমির অনুপাতে আমরা বেগুনও চাষ করছি এবার ৷"

প্রকল্পের প্রযুক্তি সহায়ক সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, "জল লো-ল্যান্ড বেয়ে নেমে যেত ৷ সেই জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ চাষিরা এখন চাষ করতে সাহস পাচ্ছেন ৷"

রাণীবাঁধের বিধায়ক জ্যোৎস্না মাণ্ডি বলেন, "মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগ সফল হয়েছে প্রকল্প ৷ ঊষর মুক্তি প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে বদলাচ্ছে এখনকার চাষবাসের পরিস্থিতি ৷"

ABOUT THE AUTHOR

...view details