বাঁকুড়া, 15 জুলাই: বাঁকুড়ার দক্ষিণপ্রান্ত ৷ জঙ্গলমহল । বন্ধুর প্রকৃতি । যদিও শাল-সেগুন-মহুয়ার ছায়াময় অরণ্য ৷ তবু অনুর্বর উঁচু-নিচু কাঁকুরে, পাথুরে মাটি । ভূমি অসমতল ৷ ঢালু জমিতে বর্ষার জল জমার উপায় নেই ! ফলে চাষবাসেরও বালাই নেই । উপায়হীন স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষগুলো চাষের মরশুমে "পূবে খাটতে যেত" । রাজ্যের পূব দিকের একাধিক জেলায় যেতেন তাঁরা ৷ মূলত দুই বর্ধমানে ৷ মজুরের কাজে । বরাবরই রুক্ষ মাটির এ পৃথিবীতে জীবীকার তীব্রসংকট ৷ এবার, এতদিনে বদলাচ্ছে পরিস্থিতি ৷ মুক্তির পথ দেখাচ্ছে "ঊষর মুক্তি", রাজ্য সরকারের জল সংরক্ষণ প্রকল্প ৷ বাস্তবিক সবুজ ফসল হয়ে হাসি ফুটতে শুরু করেছে জঙ্গলমহলের খেত-খামারে ! আনন্দ-মাদল বাজছে বাতাসে !
রানিবাঁধ ব্লকের বাড়িকুল থানা এলাকার "ঊষর মুক্তি"র একটি প্রকল্প ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ । তবে, গোটা ব্লকেই "ঊষর মুক্তি"র পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । আপাতত বারিকুল থানার বীরবাঁধ গ্রাম লাগোয়া এলাকায় ঊষর মুক্তি প্রকল্পের সুবিধায় চাষের কাজ শুরু করে দিয়েছেন স্থানীয়রা । কিন্তু, "ঊষর মুক্তি" কীভাবে পাশে দাঁড়াচ্ছে বাবুইঘাসের দেশের চাষিদের ?
আসলে এখানে ভূমি উলটোনো কড়াই চেহারার । ধাপে ধাপে নিচে নেমেছে ৷ বর্ষার জল গড়িয়ে নামে ঢাল বেয়ে ৷ সেই জল ধরে রেখে তাকে চাষের কাজে লাগানোর প্রকল্পই ঊষর মুক্তি । ঢালের প্রতি ধাপে জল ধরে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে ৷ ছোট গর্ত থেকে বড় জলাধার, যত নিচের ধাপের জমি তত বড় জলাধারের ব্যবস্থা ৷ এই পদ্ধতিতে সবচেয়ে বড় জলাধারটি বানানো হয়েছে একেবারে সমতলে ৷ প্রতি ধাপের ছোটো ছোটো চাষের জমিতে জলের ব্যবস্থা হচ্ছে সেই ধাপেরই জলাধার থেকে ৷
জমির অবস্থান ও চরিত্র অনুযায়ী ছোটো, মাঝারি জলাধারের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে প্রচুর পরিমাণ হাপা (তুলনামূলক বড় জলাধার) । শুধু বারিকুল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই 1, 836 টি হাপা খোঁড়া হয়েছে ৷ হাপাগুলি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে প্রায় 20 ফুট । গভীরতা 10-15 ফুট । উপরের ধাপের গর্ত উপচে হাপাতে জমছে জল । হাপার আশেপাশেও ছোটো, বড় জমি তৈরি করে সম্ভব হচ্ছে চাষ । হাপারও নিচের স্তরে সমতল ভূমিতে বানানো হচ্ছে একটি করে সিপেজ ট্যাঙ্ক (পুকুর জাতীয় বড় জলাশয়) । হাপা থেকে জল উপচে গেলে তা গিয়ে পড়ছে ওই সিপেজ ট্যাঙ্কে ।