12 ঘণ্টার বাংলা বনধ আদিবাসীদের বাঁকুড়া ও উত্তর দিনাজপুর, 8 জুন: বৃহস্পতিবার 12 ঘণ্টার বাংলা বনধের ডাক দিয়েছে 25টি আদিবাসী সংগঠন ৷ সকাল থেকেই বনধের ব্যাপক সারা পড়ল রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। আদিবাসী সংগঠনগুলি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি সম্প্রতি রাজ্যের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার উপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে আজ 12 ঘণ্টার বাংলা বনধের ডাক দেওয়া হয়েছে ।
জঙ্গলমহলে কুড়মি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এবার আদিবাসীরা যৌথ মঞ্চ তৈরি করে নিজেদের দাবি রক্ষার আন্দোলনকে আরও মজবুত করার ডাক দিয়েছে । বাঁকুড়ার রাঢ় অ্যাকাডেমিতে একটি কনভেনশনে মোট 14টি আদিবাসী সংগঠন সম্মিলিতভাবে 'ইউনাইটেড ফোরাম অফ অল আদিবাসী অর্গানাইজেশনস অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল' গঠন করে । এই ফোরামই এ দিন বনধের ডাক দিল ৷
12 ঘণ্টার বাংলা বনধের ডাক আদিবাসীদের তফশিলি উপজাতি অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে রাজ্যের পশ্চিমের জেলাগুলিতে ক্রমশ আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াচ্ছে কুড়মি সমাজ । দাবিপূরণ না হলে আগামিদিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে কুড়মিরা । এতদিন বিভিন্ন ইস্যুতে পৃথক পৃথক ভাবে লড়াই চালিয়ে আসছিল ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল, ভারতীয় আদিবাসী ভূমিজ সমাজ, কোড়া সমাজ, শবর ও মাহালি সমাজ, সারা ভারত সাঁওতাল একক সংগঠন-সহ বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন । এবার তারা এক ছাতার তলায় এসে নিজেদের জাতিগত দাবিদাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন শক্তিশালী করছে ।
25টি সংগঠনের ঐক্যবদ্ধভাবে 12 ঘণ্টা বাংলা বনধ আরও পড়ুন:কুড়মিদের আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত না-করার দাবি, বুধবার আদিবাসী সংগঠনের ডাকে বাংলা বনধ
এ দিন সকালে বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন ব্লকে ব্লকে পথ অবরোধে সামিল হন আদিবাসী সমাজ । বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন রাজ্য সড়কের পাশাপাশি জাতীয় সড়কেও যান চলাচল সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায় । বিভিন্ন জায়গায় জায়গায় পুলিশ মোতায়ন করা রয়েছে । যদিও সারা জেলা জুড়ে এখনও পর্যন্ত অপ্রীতিকর ঘটনার কোন খবর নেই । আদিবাসীদের মূল দাবি, যারা প্রকৃতপক্ষে আদিবাসী নয় তাদের আদিবাসী করার চেষ্টাকে থেকে বিরত থাকতে হবে ৷ এছাড়াও আরও একাধিক ইস্যু রয়েছে তাদের ৷ বৃহস্পতিবারের সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত বনধ চলবে বলেই খবর ।
উত্তর দিনাজপুরেও ছবিটা একইরকম ৷ 12 ঘণ্টার বাংলা বনধ সফল করতে সকাল থেকে রাস্তায় নেমে পরেছে ইউনাইটেড ফোরাম অফ অল আদিবাসি অরগানাইজেশন । বিভিন্ন জায়গায় বনধ সমর্থকেরা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রেখেছে । জরুরি পরিবাষেবাকে বনধের আওতায় বাইরে রাখা হলেও জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখে বনধ সমর্থনকারীরা । কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য রায়গঞ্জ শহর জুড়ে মোতায়ন করা হয়েছে ব্যাপক পুলিশি ।
বনধের জেরে রাস্তাঘাট ফাঁকা আরও পড়ুন:অভিষেকের কনভয়ে হামলার ঘটনায় গ্রেফতার 4, ধৃতদের 3 দিনের পুলিশ হেফাজত
উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন ধরে কুড়মি জনজাতির মানুষের আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে । এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জেলা জুড়ে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে । তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার কনভয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে । পুলিশ এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন কুড়মি নেতা-সমর্থককে গ্রেফতার করে । এই ঘটনার পর কুড়মি সমাজকে চাপে ফেলতে বনধ ডাকার কথা ঘোষণা করেছিলেন মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা । কুড়মিদের আদিবাসী সম্প্রদায়ের অর্ন্তভুক্ত না করার দাবিতে বৃহস্পতিবার আদিবাসীদের 25টি সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে 12 ঘণ্টা বাংলা বনধ এবং চাক্কা জ্যাম কর্মসূচি পালন করছে । সকালের দিকে সরকারি বাস বের হলেও দেখা নেই ট্রেকার, আটো, টোটোর ৷ পাশাপাশি খোলেনি দোকানপাট, হাটবাজার । রাস্তাঘাট একবারে শুনশান ।