বাঁকুড়া, 25 জুলাই : ধোঁয়া ওঠা ভাত ৷ অনুষঙ্গ হিসাবে ডাল, আলুভাজা বা সরষে বাটা দিয়ে মাছের ঝাল । মর্টিন তৈরির কারখানার সামনের খাবারের দোকানগুলিতে এমন খাবার চেটেপুটে খেতেন সেখানকার শ্রমিকরা । পান্নাদার হোটেল, পাঁচকড়ির চায়ের দোকান বা বড়দার হোটেল চলত রমরমিয়ে ৷ এইসব দোকানে বসে গরম চায়ে চুমুক দিয়ে কাজে ঢুকতেন শ্রমিকরা । কারখানা বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে এই পান্নাদা, বড়দা বা পাঁচকড়িদের হোটেল-দোকানগুলিরও ঝাঁপ বন্ধ ৷ শুধু ওই কারখানাই নয়, বড়জোড়ায় আরও তিনটি বন্ধ কারখানার আশপাশেও হুবহু একই ছবি ৷ এসব কারখানায় শিল্পের পুনরুত্থান হয়নি । তার প্রভাব পড়েছে নাগরিক জীবনেও ।
প্রান্তিক এই জনপদে কারখানার সাইরেন বাজলেই দলে দলে মানুষের ভিড় দেখা যেত রাস্তায় । হন্তদন্ত হয়ে কাজে ঢুকতেন শ্রমিকরা । চেনা সেই ব্যস্ত ছবিটা এখন ঝাপসা ৷ তারপর এক এক করে কারখানায় তালা ঝুলে যায় । কোনও কারখানার যন্ত্রপাতিতে মরচে পড়ে গিয়েছে, কোথাও আবার বন্ধ কারখানার চৌহদ্দি ৷ ঝোপ-জঙ্গলে ভর্তি । সেখানে সাপখোপ, শেয়ালের বাসা ।
এসব কারখানার শ্রমিকদের অবস্থা সহজেই অনুমেয় । কাজ হারিয়ে সংসার চালাতে ভিন্ন ছোটখাটো পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা ৷
বড়জোড়া শিল্পতালুকে বন্ধ কারখানা খুলুক চান কর্মীরা ৷ বাঁকুড়ার বড়জোড়ার এই শিল্পতালুকে চারটি কারখানা রয়েছে ৷ তবে বন্ধ ৷ উৎপাদন নেই ৷ এখানকার বি.কে.এম ইন্ডাট্রিজ লিমিটেড তাদের দু'টি কারখানায় 2015 সাল এবং মানাকসিয়া স্টিল লিমিটেড তাদের দু'টি কারখানায় 2017 সাল থেকে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে ৷ কারণ বাজার পড়ে গিয়েছে ৷ তারপর থেকেই গেটে ঝুলছে তালা ৷ গোটা শিল্পতালুকে একটা সময় কাজ করতেন ছ-সাতশো কর্মী ৷ কোম্পানিগুলির ফেলে যাওয়া কিছু সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিকিউরিটি গার্ড, শ্রমিক আর দু-চারজন কর্মচারী ৷ সব মিলিয়ে পাঁচ-সাতজন ৷ এভাবেই কোনও রকমে অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রেখেছে দুই গোষ্ঠী ৷
ইদানীং দুই সংস্থার কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন প্রতাপ ঘোষ ৷ তিনি বলেন, "1999 সালে শুরুটা হয়েছিল বোতলের ঢাকা তৈরি দিয়ে ৷ পরবর্তীতে মর্টিন ধূপ তৈরি শুরু হয় ৷ তারপর বাজারে মন্দা দেখা দিলে বন্ধ হয়ে যায় কারখানা ৷" কারখানার এক শ্রমিক বলেন, "আগে এক সঙ্গে 600-700 লোক রোজ কাজ করতেন ৷ এখন তা 5-7 জনে ঠেকেছে ৷" তাঁর দাবি, মালিকপক্ষ তাদের নিজেদের সুবিধা বুঝে যদি ফের কারখানা চালু করে তাহলে অনেক মানুষ উপকৃত হবেন ৷
সাধারণ মানুষকে ভাত-কাপড়ে রাখা এই শিল্পতালুক কোন দিকে এগোচ্ছে তা কেউ জানে না । তবে সেখানকার সকলস্তরের কর্মীরা আশায় বুক বাঁধছেন, ফের আগের ছন্দের ফিরবে সব ৷ আবার সব ঠিক হয়ে যাবে সব ৷
আরও পড়ুন : Bridge Problem : রুজির টান, রেলসেতু দিয়ে ঝুঁকির চলাচল বাঁকুড়ায় পঞ্চাশটি গ্রামের বাসিন্দাদের