কলকাতা থেকে বাঁকুড়ায় পাড়ি মহিলা মৃৎশিল্পীর বাঁকুড়া, 7 অক্টোবর: নদীর চরে-মাঠে কাশের দোলা ৷ আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ, ছোট ছোট শিশুরা ভিড় জমিয়েছে মণ্ডপে। প্রকৃতির এই চিত্রই যেন জানান দিচ্ছে মা আসছেন। ঠিক তখনই রক্ত-মাংস দিয়ে গড়া বাস্তবের দুর্গা, মৃন্ময়ী মাকে চিন্ময়ী রূপ দিতে সুদূর কুমোরটুলি থেকে পাড়ি দিয়েছেন বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে। কিছুটা নেশা ও কিছুটা পারিবারিক পেশাকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে চার বছরের ছোট্ট শিশুকে পরিবার-পরিজনদের কাছে রেখে তাঁর হাতের নিপুণ শিল্পকলায় গড়ে তুলছেন দশভূজাকে।
তাঁর হাতের ছোঁয়ায় মাটির প্রতিমা পাবে দশভূজার রূপ। সেই প্রতিমা গড়া দেখতে দুর্গা মণ্ডপে সকাল-সন্ধ্যা ভিড় জমিয়েছেন খুদে শিশু থেকে পাড়ার বাসিন্দারা। এই পুজো প্রতিবারই কিছুটা অন্যরকমের ৷ তবে এবার বাস্তবের দুর্গার হাতে গড়ে তোলা হচ্ছে দশভূজাকে। ছবিটা বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের সারেঙ্গা ব্লকের নেতুরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জামবনি গ্রামের। জামবনি, সারেশকোল, পাঞ্জুনিয়া, হরিনারায়ণপুর দুর্গাপুজো কমিটির পুজো এবার 63তম বর্ষে পদার্পণ করেছে।
এই পুজোয় এবার প্রতিমা গড়ছেন কলকাতার কুমোরটুলির মহিলা প্রতিমা শিল্পী সুস্মিতা রুদ্র পাল মিত্র। জার্নালিজম এবং মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা ৷ তবে বাবা-কাকার পারিবারিক পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং তাঁদের কাছ থেকে শেখা শিল্পকলাকে ফুটিয়ে তুলতে বেছে নিয়েছেন এই পেশাকে। প্রায় 18 বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত তিনি, এমনটাই জানিয়েছেন এই মৃৎশিল্পী। তাঁর হাতে গড়া প্রতিমা বাংলা ছাড়িয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে অনেকবার। এবারও তাঁর প্রতিমা পাড়ি দেবে বেনারসে।
তার আগে জঙ্গলমহলে এসে তিনি তাঁর নিপুণ শৈলী দিয়ে গড়ে তুলছেন দশভূজাকে। তিনি বাড়িতে রেখে এসেছেন চার বছরের ছোট্ট সন্তানকে ৷ মায়ের কাছে সুস্মিতার প্রার্থনা 'সকলের ভালো হোক' ৷ কিন্তু যিনি প্রায় 18 বছর ধরে তাঁর নিপুণ হাতের শৈলীতে গড়ে তুলছেন একের পর এক দেবদেবীর মূর্তি এতে তিনি কি পেয়েছেন শিল্পী হিসাবে সরকারি স্বীকৃতি? বর্তমান দিনে প্রতিমা তৈরিতেও চলে দ্বন্দ্ব, সাবেকিয়ানা না থিমের প্রতিমা। সুস্মিতা দেবী বলেন, "মা দুর্গার ভরসাতেই তিনি চার বছরের শিশুপুত্রকে বাড়িতে রেখে এসেছেন ৷ সকলের ভালো হোক, মঙ্গল হোক ৷"
আরও পড়ুন:কলকাতায় ফের পুজো পরিদর্শনে ইউনেসকোর প্রতিনিধিরা, 26টি মণ্ডপ ঘুরবেন তাঁরা