বাঁকুড়া, 25 এপ্রিল : আমাদের ইতিহাসের বইতে সবাই ছোট বেলায় পড়েছি বিভিন্ন সন্ধির কথা । রাজায় রাজায় যুদ্ধ । যুদ্ধে হেরে গিয়ে বা যুদ্ধ হওয়া আটকাতে বিভিন্ন উপঢৌকন, সোনাদানা ইত্যাদির বিনিময়ে ছিল সন্ধি স্থাপনের রীতি । আরেকটু বড় হয়ে জেনেছি, ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আর সিরাজের মধ্যে আলিনগরের সন্ধি, ইংরেজ-মারাঠার সলবাইের সন্ধি, পেশোয়া আর ইংরেজদের বেসিনের সন্ধি আরও কত কি ! আচ্ছা যদি বলি ইংরেজ সিরাজ এসবের বহু আগে বাঁকুড়ার বুকে হয়েছিল এক ঐতিহাসিক সন্ধি, কি চমকে যাওয়ার মতো ব্যাপার তো? হ্যাঁ, বাঁকুড়া শহরের দ্বারকেশ্বর নদ সাক্ষী আছে এক অনন্য সন্ধির । সেই গল্প ৷ উঁহু গল্প না, গল্প হলেও সত্যিটা তুলে ধরার চেষ্টা করব আমরা । ইতিহাসের চালিকা শক্তিই হল লোকশ্রুতি, এককথায় ইতিহাস গাড়ি হলেও লোকশ্রুত তার চাকা । ফলে এই ঘটনাটি অনেকটা লোকশ্রুতি নির্ভর ।
রাজ্যের পশ্চিম সীমানা (বর্তমানে বাঁকুড়া মেদিনীপুর রোড) বরাবর চলেছে সিন্দুক বোঝাই সারি সারি গরুর গাড়ি । রাজার আদেশ লুন্ঠিত হল সেসব সিন্দুক । কিন্তু এ কী? সিন্দুক খুলেই অবাক হলেন মল্লরাজ । এতে তো সারি সারি পুঁথি ! কোথায় সাত রাজার ধন? ভ্রম ভাঙালেন চৈতন্য দেবের প্রিয় পাত্র শ্রীনিবাস আচার্য্। চৈতন্য দেব আর ফিরবেন না নবদ্বীপ ধামে, মনস্থির করেছেন পুরীতে রয়ে যাবেন তিনি । তাই তাঁর আগ্রহে সমগ্র পুঁথি চলেছিল পুরীতে । কিন্তু মাঝপথে তা লুন্ঠন করেছেন মল্লরাজ । এই পুঁথিতে কী এমন সাত রাজার ধন আছে বুঝে উঠলেন না মল্লরাজ । এরপরই পুঁথি পড়ে শোনালেন শ্রীনিবাস আচার্য্ । সারা সভাগৃহ মাতোয়ারা হলো কৃষ্ণ প্রেমে । ধন্য ধন্য করে উঠলেন মল্লরাজ । বুঝলেন এই পুঁথিতে কী অমূল্য ধন আছে । শাক্ত মল্লরাজ নিলেন বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা, বিষ্ণুপুরে প্রতিষ্ঠা হল রাসমঞ্চ । এই সূত্র ধরেই মল্লরাজ বীর হাম্বিরের সুযোগ্য পুত্র মল্লরাজ রঘুনাথ মল্লের রাজত্বে মল্লভূমে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য নিয়ে আসেন বড়ু চন্ডীদাস । এই সময় হঠাৎ করেই সামন্তভূম (ছাতনা) ত্যাগ করে মল্লরাজ রঘনুাথ মল্লের আশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা গ্রহণ করেন বড়ুচন্ডীদাস ।