পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

কাটা হবে বাঁকুড়ার ব্রিটিশ আমলের সারি সারি তালগাছ, বাঁচাতে আন্দোলন - পাবলিক ওয়ার্ক ডির্পাটমেন্ট

বাঁকুড়ার সারেঙ্গা ৷ পিরোলগাড়ির মোড় থেকে বামুনডিহা যাওয়ার চার নম্বর রাজ্য সড়কের উপর আমঝোর ও সুখাডালির মাঝে এই জায়গা । পাশেই সাহেব বাঁধ ৷ আর রয়েছে ব্রিটিশ আমলের তালগাছ ৷ শুধু তালগাছ নয় ৷ আরও মূল্যবান গাছ রয়েছে ৷ কিন্তু, পাবলিক ওয়ার্ক ডির্পাটমেন্ট রাজ্য সড়ক সম্প্রসারণের জন্য তাল গাছগুলিকে কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । আর গাছগুলি বাঁচাতে আন্দোলনের পথে নেমেছেন স্থানীয়রা ৷

বাঁকুড়ার শতাব্দী প্রাচীন ব্রিটিশ আমলের সারি সারি তালগাছ
বাঁকুড়ার শতাব্দী প্রাচীন ব্রিটিশ আমলের সারি সারি তালগাছ

By

Published : Jul 11, 2021, 4:51 PM IST

বাঁকুড়া, 11 জুলাই : 1973 সালে চিপকো আন্দোলনের কথা তো সবারই জানা ৷ গাছেদের বাঁচানোর জন্য আন্দোলন ৷ পরিবেশবিদ সুন্দরলাল বহুগুণার নেতৃত্বে গাছেদের জড়িয়ে আন্দোলনে নেমেছিল উত্তরাখণ্ডের মানুষগুলি ৷ আবারও তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে বাঁকুড়ায় ৷ সেই একই ছবি ৷ গাছেদের জড়িয়ে চলছে সাধারণ মানুষের আন্দোলন ৷ দাবি, রাস্তার কাজের জন্য গাছ কাটতে দেওয়া যাবে না ৷

কথা হচ্ছে বাঁকুড়ার সারেঙ্গার ৷ পিরোলগাড়ির মোড় থেকে বামুনডিহা যাওয়ার চার নম্বর রাজ্য সড়কের উপর আমঝোর ও সুখাডালির মাঝে এই জায়গা । পাশেই সাহেব বাঁধ ৷ সারি সারি শালবন, লাল কাঁকুরে মাটি, মাঝে বাঁধের শান্ত জল, পাশে সারি সারি এক পায়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে 209টি তাল গাছ । দেখলেই মনে পড়ে যাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই বিখ্যাত কবিতা "তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে/ সব গাছ ছাড়িয়ে/উঁকি মারে আকাশে ৷" বাঁকুড়ার এই তালগাছগুলি সেই ব্রিটিশ আমলের ৷ শুধু তালগাছ নয় ৷ আরও মূল্যবান গাছ রয়েছে ৷ কিন্তু, কালের নিয়মে গাছগুলি এখন ধ্বংসে মুখে ৷ সম্প্রতি পাবলিক ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্ট রাজ্য সড়ক সম্প্রসারণের জন্য তাল গাছগুলিকে কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।

আরও একটা ৷ আন্দোলনে সামিল স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পরিবেশবিদরা

একটা মন খারাপের বিকেল বা অবসাদ দূর করতে স্থানীয় মানুষ বারবার ছুটে আসে এখানে । পাশেই সাহেব বাঁধ। এই নামের সঙ্গে জুড়ে আছে ইতিহাসের ছায়াচিত্র । আর সেই বাঁধের পাশের সারিবদ্ধ তাল গাছ যেমন ইতিহাসের পাতাকে জীবিত করে রেখেছে বর্তমান প্রজন্মের কাছে । তেমনই সারেঙ্গা রাজ্য সড়কের উপর সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তি হয়ে গাছগুলি দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম । কথিত আছে, ব্রিটিশ শাসনকালে আয়েঙ্গার সাহেব ও দূরদর্শী কালেক্টর সাহেব ওই তাল গাছগুলি রোপণ করেছিলেন । আর পাশেই যে বাঁধ খনন করা হয় তার নাম হয় সাহেব বাঁধ । সেই থেকেই এলাকার ল্যান্ডমার্ক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমঝোর সাহেব বাঁধের তালগাছগুলি । শুধু তাই নয়, সাহেব বাঁধ সন্নিহিত শাল জঙ্গল আর বাঁধের পাড়ের ওই তালের সারির সৌন্দর্যের বাতাবরণে এখানে তৈরি হচ্ছিল ইকো ট্যুরিজম পার্ক । যদিও তা অসম্পূর্ণ । সব মিলিয়ে জায়গাটা, এখানকার তালগাছগুলি স্থানীয়দের কাছে নস্ট্যালজিয়া ।

সাহবে বাঁধ

আরও পড়ুন,দিলীপ কুমারের স্মৃতিচারণায় এখন শুধু মন খারাপের সুর তিনধারিয়ায়

কিন্তু, গাছগুলি কেটে ফেলা হবে ৷ ব্রিটিশ আমলের ঐতিহ্যবাহী গাছগুলি আর থাকবে না ৷ একথা জানার পর থেকেই সরব হয়েছেন স্থানীয়রা ৷ তড়িঘড়ি নড়ে বসেছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে জেলার সমস্ত প্রকৃতি প্রেমী মানুষজন । স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই ব্রিটিশ আমলের ঐতিহ্যবাহী সম্পদগুলিকে রক্ষা করেই তৈরি হোক রাস্তা । গাছ কাটা হোক কখনওই তাঁরা চান না ৷ তাই গাছগুলিকে জড়িয়ে তাঁরাও আন্দোলনে নেমেছেন ৷ সঙ্গী গ্রিন ফোর্স নামে একটি সংগঠন ৷ গাছ বাঁচানোর দাবি নিয়ে সারেঙ্গা ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের একটি স্মারকলিপিও জমা দিয়েছে তারা ৷

এই বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রামহরি পাত্র জানাচ্ছেন, "আমরা চাই ব্রিটিশ আমলের এই সাহেব বাঁধের পাড় রক্ষা করা হোক ৷ এর জন্য যা প্রয়োজন আমি সব করতে রাজি রয়েছি ৷ আমরা লড়ব ৷ ঐতিহ্য যাতে বজায় থাকে তার জন্য যেন ব্যবস্থা করা হয় ৷" অন্যদিকে, গ্রিন ফোর্সের এক সম্পাদক আশিস পাল বলছেন, " ব্রিটিশ আমলে বাঁধটা তৈরি হওয়ায় নাম হয়েছে সাহেব বাঁধ ৷ আর এর পারে প্রায় 2 কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে রয়েছে তালগাছ ৷ আমরা ছোট থেকে দেখছি ৷ এটা সারেঙ্গার ল্যান্ডমার্ক ৷ এটা যাতে নষ্ট না হয়ে যায় তার জন্য আমরা এই আন্দোলনে সামিল হয়েছি ৷"

গাছকে জড়িয়ে আন্দোলন চলছে

আরও পড়ুন,গত হয়েছে ম্যাটিনি-ইভনিং-নাইট, মনকেমনের সাক্ষী রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য চণ্ডীদাস চিত্র মন্দির

পরিবেশবিদ মৈনাক অধিকারী জানাচ্ছেন , "আমরা সরকারি উন্নয়নের বিরুদ্ধে নই ৷ সরকারি কাজে আমরা বাধা দিতেও চাই না ৷ বরং উন্নয়নকে সমর্থন করি ৷ তবে কীভাবে কী উন্নয়ন করা যেতে পারে তা নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে ৷"

কাটা হবে বাঁকুড়ার ব্রিটিশ আমলের সারি সারি তালগাছ, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন
এই বিষয়ে একাধিক বার প্রশাসনের কাছে গেলেও প্রশাসন কোনওভাবে মুখ খুলতে চায়নি । গাছ কেটে রাস্তা নাকি গাছ বাঁচিয়ে হবে রাস্তা ৷ সেই অপেক্ষায় দিন গুনছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সকল প্রকৃতি প্রেমিক মানুষ ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details