বাঁকুড়া, 11 জুলাই : 1973 সালে চিপকো আন্দোলনের কথা তো সবারই জানা ৷ গাছেদের বাঁচানোর জন্য আন্দোলন ৷ পরিবেশবিদ সুন্দরলাল বহুগুণার নেতৃত্বে গাছেদের জড়িয়ে আন্দোলনে নেমেছিল উত্তরাখণ্ডের মানুষগুলি ৷ আবারও তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে বাঁকুড়ায় ৷ সেই একই ছবি ৷ গাছেদের জড়িয়ে চলছে সাধারণ মানুষের আন্দোলন ৷ দাবি, রাস্তার কাজের জন্য গাছ কাটতে দেওয়া যাবে না ৷
কথা হচ্ছে বাঁকুড়ার সারেঙ্গার ৷ পিরোলগাড়ির মোড় থেকে বামুনডিহা যাওয়ার চার নম্বর রাজ্য সড়কের উপর আমঝোর ও সুখাডালির মাঝে এই জায়গা । পাশেই সাহেব বাঁধ ৷ সারি সারি শালবন, লাল কাঁকুরে মাটি, মাঝে বাঁধের শান্ত জল, পাশে সারি সারি এক পায়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে 209টি তাল গাছ । দেখলেই মনে পড়ে যাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই বিখ্যাত কবিতা "তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে/ সব গাছ ছাড়িয়ে/উঁকি মারে আকাশে ৷" বাঁকুড়ার এই তালগাছগুলি সেই ব্রিটিশ আমলের ৷ শুধু তালগাছ নয় ৷ আরও মূল্যবান গাছ রয়েছে ৷ কিন্তু, কালের নিয়মে গাছগুলি এখন ধ্বংসে মুখে ৷ সম্প্রতি পাবলিক ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্ট রাজ্য সড়ক সম্প্রসারণের জন্য তাল গাছগুলিকে কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।
একটা মন খারাপের বিকেল বা অবসাদ দূর করতে স্থানীয় মানুষ বারবার ছুটে আসে এখানে । পাশেই সাহেব বাঁধ। এই নামের সঙ্গে জুড়ে আছে ইতিহাসের ছায়াচিত্র । আর সেই বাঁধের পাশের সারিবদ্ধ তাল গাছ যেমন ইতিহাসের পাতাকে জীবিত করে রেখেছে বর্তমান প্রজন্মের কাছে । তেমনই সারেঙ্গা রাজ্য সড়কের উপর সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তি হয়ে গাছগুলি দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম । কথিত আছে, ব্রিটিশ শাসনকালে আয়েঙ্গার সাহেব ও দূরদর্শী কালেক্টর সাহেব ওই তাল গাছগুলি রোপণ করেছিলেন । আর পাশেই যে বাঁধ খনন করা হয় তার নাম হয় সাহেব বাঁধ । সেই থেকেই এলাকার ল্যান্ডমার্ক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমঝোর সাহেব বাঁধের তালগাছগুলি । শুধু তাই নয়, সাহেব বাঁধ সন্নিহিত শাল জঙ্গল আর বাঁধের পাড়ের ওই তালের সারির সৌন্দর্যের বাতাবরণে এখানে তৈরি হচ্ছিল ইকো ট্যুরিজম পার্ক । যদিও তা অসম্পূর্ণ । সব মিলিয়ে জায়গাটা, এখানকার তালগাছগুলি স্থানীয়দের কাছে নস্ট্যালজিয়া ।
আরও পড়ুন,দিলীপ কুমারের স্মৃতিচারণায় এখন শুধু মন খারাপের সুর তিনধারিয়ায়