বাঁকুড়া, 31 অগাস্ট : নয় মাস আগেও জীবনটা ছিল অন্যরকম । আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই হেসে-খেলে দিন কাটত পাঁচ বছরের ঋষি লোহারের । ICDS-তে গিয়ে পড়াশোনাও করত । কিন্তু 9 মাস আগে হঠাৎই একদিন ভুল বকতে শুরু করে ঋষি । ভয় পেয়ে যান বাবা-মা । তড়িঘড়ি স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান তাঁরা । সুফল না মেলায় তাকে বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালে ভরতি করেন । কিন্তু তাতেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি । এরপর বাঁকুড়া সম্মেলনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে সেখান থেকে SSKM হাসপাতালে চিকিৎসা চলে তার । পরে কর্তৃপক্ষ জানায়, ঋষির দুরারোগ্য ব্যাধি হয়েছে । কোনও চিকিৎসা নেই ।
বাঁকুড়ার জয়পুরের বাসিন্দা বুধন লোহার ও রবি লোহারের দ্বিতীয় সন্তান ঋষি । SSKM হাসপাতাল থেকে ফেরার পর পেশায় রাজমিস্ত্রি বুধন লোহার শেষসম্বল হারিয়ে একপ্রকার ধার দেনা করেই ঋষিকে পুদুচেরির জিপমার হাসপাতালে নিয়ে যান । সেখানে তার বেশ কিছুদিন চিকিৎসা চলে । জিপমার হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, ঋষির SSPE (Subacute sclerosing panencephalitis) নামে এক দুরারোগ্য ব্যাধি হয়েছে । ভারতে এখনও যার চিকিৎসা পদ্ধতি শুরু হয়নি ।
কী এই SSPE রোগ? জিপমার হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী ঋষির মা রবি লোহার জানান, SSPE রোগে আক্রান্ত শিশুরা এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে । এই রোগে মস্তিষ্কের একটি অংশ বিকল হয়ে যায় । আর তা দিনে দিনে আরও অবনতির দিকে যেতে থাকে ।
এমতবস্থায় ঋষির ওষুধ ও খাবারের জোগান দিতে লোহার পরিবারের প্রতি মাসে প্রায় 6 থেকে 7 হাজার টাকা খরচ হয় । কোনওরকমে দিনপাত করা বুধনবাবু প্রতি মাসে এই খরচ সামলে উঠতে পারছেন না । এই অবস্থায় বুধনবাবু জয়পুরের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারি (BDO) বিট্টু ভৌমিকের কাছে সাহায্যের আবেদন করেন । যার জেরে মানবিক প্রকল্পে তাঁকে প্রতি মাসে 1000 টাকা ভাতা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক । তবে ওই টাকাতে ঋষির চিকিৎসা এবং ওষুধপত্রের জোগান দেওয়া কোনওমতেই সম্ভব নয় । এব্যাপারে বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক মানস মণ্ডল বলেন, "এই বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছি । BDO-কেও জানানো হয়েছে । আমরা দেখছি, বাচ্চাটির জন্য আর কী কী সাহায্য করা যায় ।" পাশাপাশি রাজ্য সরকারের প্রতিমন্ত্রী শ্যামল সাঁতরার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "আমরা এই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই ।"
একদিকে ছেলের ওষুধপত্র ও খাবার, অন্যদিকে নিজেদের দু'বেলা দু'মুঠো ভাত । এই দুইয়ের মাঝে দিশেহারা জয়পুরের লোহার পরিবার । আর ঋষি? ঋষি এখন শয্যাশায়ী । নিশ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য নাকে লাগানো পাইপই ভরসা । শুধুমাত্র তরল খেয়ে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে বিছানাতে শুয়ে দিন কাটাচ্ছে সে ।