জলপাইগুড়ি, 16 নভেম্বর: ভারত-ভুটান সীমান্তের বক্সা পাহাড়ের এক কোণায় বাস ডুকপা জনজাতির। রাজ্যের অন্যতম দুর্গম এই বক্সাপাহাড়ে ডুকপা জনজাতির প্রায় 2 হাজার মানুষের বাস (Unique Rituals of Dukpa)। আলিপুরদুয়ারে অবস্থিত বক্সাপাহাড়ের ডুকপা জনজাতির কেউ মারা গেলে বিভিন্ন নিয়ম-কানুন, রীতি রেওয়াজ মেনে মৃতদেহ সৎকার করা হয়। যা গতানুগতিক রীতি থেকে এক্কেবারে আলাদা এবং আশ্চর্যেরও বটে ৷
ডুকপা জনজাতির মানুষেরা চলেন আপন খেয়ালে আপন ভাবধারায়। এলাকার বাসিন্দা জয় ডুকপা জানান, ডুকপা পরিবারের কেউ মারা গেলে তাঁদের মৃতদেহ সৎকার করা হয় বৌদ্ধ লামাদের কথা শুনেই। তাঁরা যেভাবে বলবেন সেভাবেই মৃতদেহ সৎকার করা হবে। এমনও হয় যে মৃতদেহ এক বা দু'দিন অথবা এক সপ্তাহ বাড়িতেই সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। লামারা যেদিন বলেন সেদিনই মৃতদেহ সৎকার করা হয়। শুধু তাই নয়, মৃত্যুর সময় যদি দেখা যায় কোনও দোষ রয়েছে তবে ঘর-সহ মৃতদেহ জ্বালিয়ে দেওয়ারও রেওয়াজও রয়েছে। যদিও সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটেনি।
আরও পড়ুন:দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান, পুজোর আগে খুলে গেল ভুটান গেট
ফুকডেন ডুকপা জানান, মৃতদেহ সৎকারের অনেক নিয়ম আমাদের রয়েছে। মৃতদেহ সংরক্ষণ করা খুব কঠিন ব্যাপার এবং ব্যয়সাপেক্ষ। কেউ মারা গেলে প্রথমেই ডাক পড়ে ভুটানে থাকা লামাদের (ধর্মগুরু)। লামাদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বড় তাঁর কাছে থেকে অনুমতি নিতে হয় মৃতদেহ সৎকার করার জন্য। এই বড় লামা বেশকিছু বৌদ্ধ লামাদের মৃতদেহ সৎকার করার জন্য ওই বাড়িতে পাঠান। যার জন্য কিছু ব্যয় করতে হয়। লামাদের থাকা খাবার সমস্ত খরচ বহন করতে হবে। যেদিন কেউ মারা যাবেন সেদিন থেকে টানা 21 দিন এই লামারা পুজো করবেন। পঞ্জিকা দেখে লামারা বলে দেবেন, কবে, কখন মৃতদেহ সৎকার করতে হবে। যতদিন না পর্যন্ত ভালো দিন আসবে ততদিন পর্যন্ত মৃতদেহ বাড়িতেই রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, "এই ভালো দিন আসতে দু'দিন ও লাগতে পারে বা কুড়ি দিনও । ততদিন মৃতদেহের সামনে 24 ঘণ্টার জন্য কেউ না কেউ থাকবেন এবং নাম মন্ত্রোচ্চারণ করবেন। কিন্তু এতদিন মৃতদেহ রাখার জন্য কিছু নিয়ম বা মৃতদেহ যাতে পচে না যায় তার জন্য লামারা তাঁদের তৈরি উপকরণ বা ঔষধী মৃতদেহের শরীরে লাগিয়ে দেবেন। শরীরে নাক, কান, মুখ-সহ অন্যান্য ছিদ্র ঘি দিয়ে বন্ধ করে দেবেন। ঘরে থাকা মৃতদেহ বাড়ি থেকে কীভাবে বের করতে হবে তাও নিয়মে বলা আছে।