আলিপুরদুয়ার, 7 এপ্রিল : NRC-র জন্য দুর্গাপুজোর মরশুমে প্রতিবেশী রাজ্য অসম থেকে একটিও প্রতিমার বরাত পাননি আলিপুরদুয়ারের মৃৎশিল্পীরা ৷ মহাজনদের থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে অসমের বরাত থেকে বঞ্চিত হয়ে আর্থিক সংকটে পড়েছিলেন তাঁরা ৷ এই সংকটের প্রভাব সরস্বতী পুজোতেও পান মৃৎশিল্পীরা ৷ সব লোকসান বাংলা নববর্ষে পূরণ করে নেবেন বলে ভেবেছিলেন ৷ নববর্ষের হালখাতায় লক্ষ্মী-গণেশ পুজোয় কিছুটা লাভের আশা দেখেছিলেন ৷ কিন্তু, কোরোনার জেরে তাও বন্ধ ৷ বর্তমানে একেবারে কর্মহীন আলিপুরদুয়ারের মৃৎশিল্পী মহলের ছোটো বড় সব শিল্পী ৷
কোরোনার জেরে আর্থিক সংকটে আলিপুরদুয়ারের একাধিক মৃৎশিল্পী
দুর্গাপুজো থেকে কাজ বন্ধ ৷ অসম থেকে আসেনি কোনও মূর্তি তৈরির বরাত ৷ নববর্ষের আগে যে বায়নাগুলি পাওয়া গিয়েছিল, সেগুলিও কোরোনার কারণে বাতিল হয়ে যায় ৷ বর্তমানে কর্মহীন আলিপুরদুয়ারের প্রায় 1000 মৃৎশিল্পী ৷ এভাবে চললে কীভাবে ক্ষতি পূরণ হবে, কিছুতেই বুঝতে পারছেন না তাঁরা ৷
বিগত বছরগুলোতে পয়লা বৈশাখের জন্য জেলা থেকে প্রায় লাখ খানেক ছোটো-বড় লক্ষ্মী, গণেশের মূর্তি রপ্তানি হত উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে ৷ কিন্তু, এবার কোনও কাজ না পাওয়ায় মহাজনদের সুদ কীভাবে মেটাবেন, সংসারই বা চালাবেন কীভাবে তা নিয়ে চিন্তায় দিন কাটছে মৃৎশিল্পীদের ৷ প্রতি বছর পয়লা বৈশাখের মাস দুই আগেই ভিনরাজ্যের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বায়না করে যেত ৷ এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি ৷ বায়না নিয়ে মূর্তি বানানোর কাজও চলছিল জোর কদমেই ৷ কিন্তু, কোরোনার ফলে লকডাউনে সব আগাম বায়না বাতিল করে দেয় ভিনরাজ্যের ব্যবসায়ীরা ৷
অনেক ক্রেতারাও লকডাউনের ফলে আগাম বায়না বাতিল করে দিয়েছেন ৷ কুমারগ্রাম ব্লকের বারোবিশা বটতলা পালপাড়ার মৃৎশিল্পী অহেন্দ্র পাল বলেন, "দূর্গা পুজো থেকেই ক্ষতি শুরু হয়েছে ৷ বাসন্তী, গঙ্গা প্রতিমাগুলিও বিক্রি হয়নি ৷ প্রতি বছর আমরা নববর্ষের আগে থেকেই লক্ষ্মী-গণেশের মূর্তি তৈরি করে রাখতাম ৷ সবাই ভালো উপার্জনই করতাম ৷ তবে এবছর আমরা একেবারেই সর্বস্বান্ত ৷ আমরা প্রশাসনের কাছেও আর্থিক সাহায্য চাইব ৷" বারোবিশা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক কার্তিক সাহা জানান, "প্রতি বছর অন্য রাজ্য থেকে বিপুল পরিমাণে বরাত আসে ৷ এবছর সব বাতিল হয়ে গেছে ৷ জানি না কীভাবে এই বিরাট ক্ষতি পূরণ হবে ৷"