আলিপুরদুয়ার, 22 নভেম্বর : তিনি বঙ্গরত্ন ৷ এক সময় তাঁর ঢোলের আওয়াজে গমগম করত বাড়ি ৷ ছাত্রদের শিক্ষা দিতে বাড়িতেই খুলেছিলেন গুরুকুল ৷ সেই বাড়িতে আজ একরাশ নিস্তব্ধতা । আর্থিক সংকটে পড়ে বাড়িতে মুদির দোকান খুলেছে বঙ্গরত্ন ঢোলবাদক বলরাম হাজরার পরিবার ৷
তাঁর জীবদ্দশায় গুরুকুলের আনাচ-কানাচ ভরে যেত ঢোলের নতুন নতুন বোলে । বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর ছাত্র আসত ঢোলের জাদুকর বলরাম হাজরার থেকে বাজনা শিক্ষা নিতে । আর এই সমস্ত ছাত্রদের জন্যই তিনি খুলেছিলেন তাঁর সাধের গুরুকুল । আলিপুরদুয়ার সফরে এসে বহুবার তাঁর ঢোলের বাজনা শুনে মুগ্ধ হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ।
এক সময় ঢোল বাজানোর প্রশিক্ষণ নিতেই অনেকেই আসতেন বলরাম হাজরার গুরুকুলে তাঁর মহিমায় সারা দেশ চিনেছে আলিপুরদুয়ারের অখ্যাত গ্রাম পাটকাপাড়ার হাজরাপাড়াকে । দেশের নানা প্রান্তে তিনি তাঁর ঢোলের বাজনায় মানুষের মন জয় করেছেন । নানা পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন । রাজ্য সরকার তাঁকে বঙ্গরত্ন পুরস্কারে ভূষিত করে ।
বলরাম হাজরার গুরুকুল আজ মুদির দোকান 2018 সালের 10 এপ্রিল মারা যান বলরাম হাজরা ৷ তাঁর মৃত্যুর পর প্রচণ্ড আর্থিক সংকটে পড়েন স্ত্রী ভারতী হাজরা ও বিশেষভাবে সক্ষম পুত্র চঞ্চল হাজরা । আগে প্রতিবছর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে শারদ সম্মান প্রদান করা হত । অনেক রাজনৈতিক নেতা মাঝেমধ্যে তাঁর বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিতেন । কিন্তু এখন সে সব অতীত ৷
স্বামীর মৃত্যুর পর কোনও ভাতা বা সরকারি সুবিধা পাননি বলরাম হাজরার স্ত্রী ও পুত্র ৷ তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে গুরুকুল বন্ধ করে দিয়ে ওই ঘরেই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে ছোট্ট একটি মুদির দোকান খুলেছে তাঁর পরিবার ৷ তাই দিয়ে কোনওরকমে দিন গুজরান করছে । এই পরিস্থিতিতে ঢোল বাজানোর পেশাকে একপ্রকার বিদায় জানিয়েছেন পরিবারের বাকি সদস্যরাও ।
শিল্পী নেই ৷ কিন্তু শিল্পীর অসহায় পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে দরকার সরকারি সাহায্য । এটাই এখন একমাত্র প্রার্থনা শিল্পী বঙ্গরত্ন বলরাম হাজরার স্ত্রীর ।