আলিপুরদুয়ার, 25 জুন : গাছে অল্প আঁচড় কাটলেই, লাল তরল বেরিয়ে আসে । আর তা দেখতেই ভিড় জমান রাজ্যের নানা প্রান্তের মানুষ । আলিপুরদুয়ার বনবিভাগের তরফে জানা গেছে, এই মুহূর্তে পুরো জঙ্গলে মোট 26টি গাছ রয়েছে । যা পশ্চিমবঙ্গ তথা দেশের কোনও জঙ্গলে বা জাতীয় উদ্যানেও পাওয়া অসম্ভব । প্রায় বিরল এই রামগুনা গাছের জেরেই অন্যতম আকর্ষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আলিপুরদুয়ারের চিলাপাতার জঙ্গল ।
আলিপুরদুয়ার শহর থেকে মাত্র 25 কিলোমিটার দূরে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান । পাশেই রয়েছে চিলাপাতার জঙ্গল । এখানেই মেলে রামগুনা বা রামগুয়া বৃক্ষের । এর বৈজ্ঞানিক নাম মাইরিসটিকানিকা(mairistikanika)। দেখতে খানিকটা সুপারি গাছের মতো, তাই স্থানীয়রা এই গাছকে রামসুপারি গাছ বলেও ডাকেন । বনবিভাগের দাবি, আমাজ়ন,মাসইমারা,কংগোর মতো বৃষ্টিচ্ছায় অরণ্যেও এখনও পর্যন্ত এই প্রজাতির উদ্ভিদের হদিস মেলেনি । এই বিষয়ে চিলাপাতা রেঞ্জের রেঞ্জার সন্দীপ দাস বলেন, "কোনও একসময়ে জঙ্গলে এই গাছ লাগানো হয়েছিল । অথবা কোনও পাখির বিষ্টা থেকে গাছগুলি জঙ্গলে জন্ম নেয় । অন্য কোনও জঙ্গলে এই গাছ নেই ।"
এই মুহূর্তে মোট 26টি রামগুনা গাছ রয়েছে জঙ্গলে । গত 100 বছরে এই গাছের নতুন করে আর কোনও বংশবিস্তার হয়নি । এমনই জানাচ্ছেন বনবিভাগের কর্মীরা । অনেক চেষ্টা সত্বেও না কি এই গাছের বংশবৃদ্ধি সম্ভব হয়নি । বনবিভাগের তরফে জানানো হয়েছে, দেশ-বিদেশের একাধিক সংস্থাও এই গাছের বংশবিস্তার নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে । এই গাছের বীজ এবং ডালপালা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে কোচবিহারের পুন্ডিবাড়ি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় । তবে আজ পর্যন্ত কোনও সাফল্য মেলেনি । বনকর্মী আইনুল মিয়া জানিয়েছেন, নতুন করে আর এই গাছ জন্মাচ্ছে না । গাছের ফল-বীজ সবই আছে । তবে নতুন গাছ তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না ।
আলিপুরদুয়ারের চিলাপাতার জঙ্গলে এখন মোট 26টি রামগুনা গাছই সম্বল এই রামগুনা গাছের একটি বিশেষত্ব হল, গাছের গায়ে অল্প আঘাত করলেই রক্তের মত একধরনের লাল তরল পর্দাথ ঝরতে থাকে । আর এই দৃশ্য দেখতেই ভিড় জমান পর্যটকরা । গাছের গায়ে অনেকেই অল্পবিস্তর আঘাত কর, আঁচড় কেটে দেখেন । কিন্তু এর জেরে বেশ কয়েকটি গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । পর্যটকরা গাছে কোনওরকম আঘাত যাতে না করেন, সেজন্য বনবিভাগের তরফে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ।