কলকাতা:আগে থেকে ছকে রাখা পথ ধরে দৌড়, ঠিকানা লেখা পাস, নির্ভুল প্লেসমেন্ট আর হ্যাঁ, প্রতিপক্ষকে কাবু করতে মাইন্ড গেম ছাড়া আধুনিক ফুটবল ভাবাই যায় না । অনেকটা সেভাবেই দাবার বোর্ডে ঝড় তোলেন তিনি । স্প্যানিশ আর্মাডার ঢঙে দাবার বোর্ডে প্রতিপক্ষের সব কারিগরি তছনছ করে দেন অনায়াসে । গোটা দুনিয়ার কাছে তিনি বিশ্বনাথন আনন্দ । ভারতীয়দের কাছে ভিশি । বিশ্বকাপ ফুটবলের আবহে টাটা চেস প্রতিযোগিতা উপলক্ষ্যে কলকাতায় এই মুহূর্তে প্রাক্তন বিশ্বের এক নম্বর দাবাড়ু । কথা বললেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি সঞ্জয় অধিকারীর সঙ্গে । বেছে নিলেন, বিশ্বকাপে তাঁর প্রিয় দল । পাশাপাশি ভারতীয় দাবা আগামিদিনে কোথায় পৌঁছবে সেটারও পূর্বাভাস দিলেন । জানালেন, শহর কলকাতার সঙ্গে তাঁর আত্মিকতার কথাও(Viswanathan Anand on Fifa World Cup) ।
প্রশ্ন: আগামিদিনে ভারতীয় দাবার সম্ভবনা কতটা (Viswanathan Anand Shares His Thoughts on Chess ) ?
উত্তর: ভারতীয় দাবার সম্ভবনা সবদিক থেকেই দারুণ । আমার সময়ে বিশ্ব দাবার প্রথম একশোয় আমি ছাড়া অন কোনও ভারতীয়কে পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে । কিন্তু এখন দেশে প্রতিভাবান দাবাড়ুর অভাব নেই । সত্যি বলতে দেশে প্রতিভাবান দাবাড়ুর ছড়াছড়ি । প্রথম একশোর তালিকায় এখন 6-7 জন ভারতীয় আছে জেনে ভালো লাগে । তবে আমেরিকা- ইউক্রেনের মতো দেশ দারুণভাবে এগিয়ে চলেছে । টাটা চেসের মতো প্রতিযোগিতায় ভারতীয় দাবাড়ুরা এঁদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়ে নিজেদের উন্নতি করতে পারবে । পাশাপাশি এখানে মেয়েদের প্রতিযোগিতা হচ্ছে । ওরাও অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাবে ।
প্রশ্ন: পরবর্তী বিশ্বনাথন আনন্দ পেতে কতদিন অপেক্ষা করতে হবে দেশকে?
উত্তর:(একটু হেসে) এই প্রতিযোগিতায় যাঁরা খেলছেন কারও নাম আনন্দ নয় তাই পরবর্তী আনন্দ পেতে আরও একটু অপেক্ষা করতেই হবে । তবে ওই যে বললাম, ভারতীয় দাবা এখন অনেকটাই ভালো জায়গায় আছে(Viswanathan Anand on Indian Chess Players) ।
প্রশ্ন: কলকাতার সঙ্গে আপনার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। কীভাবে দেখেন এই শহরকে ?
উত্তর:আমি 40 বছর ধরে শহরে আসছি। আমার জেঠু আর কাকা কলকাতায় থাকতেন । আমি পারিবারিক ছুটিতে আসতাম । আমার এক বোন এখনও বাংলায় কথা বলে । এক ভাই ভালো বাংলা বুঝতে পারে । আমার দাবার প্রথম বড় প্রতিযোগিতাও কলকাতায় 1986 সালে । গোর্কি সদনের কথা মনে পড়ে । কলকাতার দাবার বিকাশের ক্ষেত্রে এই জায়গাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তাছাড়া বিভিন্ন বড় প্রতিযোগিতা জিতে এই শহরে একাধিক বড় সম্মান পেয়েছি । কলকাতা গুণীদের কদর করতে জানে । এখানে কেউ ভালো খেললে শুধু যে তাঁর প্রশংসা হয় তা নয়, সে কীভাবে এই উচ্চতায় গেল সেটা জানতেও সবার আগ্রহ থাকে । এই সমস্ত কারণে এখানে আসতে ভালো লাগে । আমার দলের দু'জন সদস্য কলকতার।
প্রশ্ন: আপনার ফুটবল প্রেমের কথা সবাই জানে । আপনি নিজে দীর্ঘদিন স্পেনে ছিলেন । এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ দেখছেন ? কাকে এগিয়ে রাখছেন ?
উত্তর:আমার প্রিয় দল স্পেন । কিন্তু ফ্রান্স আর ডেনমার্কের খেলাও ভালো লেগেছে । বিশ্বকাপ দেখতে সবসময়ই ভালো লাগে । মেসিরা প্রথম ম্যাচে হেরে যাওযায় কিছুটা বিস্মিত হয়েছিলাম কিন্তু পরের খেলায় ওরা দারুণভাবে ফিরে এসেছে । এখনও ওরা পরের রাউন্ডে যেতে পারে বলে আমার মনে হয় । তাছাড়া কোনও কোনও সময় জীবনে ধাক্কা খাওয়াও দরকার । আসলে ধাক্কা খেলেই নিজেদের জাত চেনান মেসিরা ।