পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / sports

Sukumar on Balaram: 'চুনী-পিকে নয়, বলরামই সর্বকালের সেরা', মত সুকুমার সমাজপতির

"আমাকে যদি বলা হয় ভারতের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় কে? তাহলে বলরামদাকেই কোনও দ্বিধা না করে বেছে নেব ।" ঠিক এই ভাষাতেই তুলসীদাস বলরামের প্রশংসা করলেন সুকুমার সমাজপতি (Sukumar Samajpati Shares His Thoughts on Tulsidas Balaram) ৷

Etv Bharat
বলরাম সর্বকালের সেরা বললেন সুকুমার সমাজপতি

By

Published : Feb 17, 2023, 11:20 AM IST

Updated : Feb 17, 2023, 2:57 PM IST

কলকাতা, 17 ফেব্রুয়ারি:তুলসীদাস বলরাম বাংলার ভূমিপুত্র নন । কিন্তু ভারতীয় ফুটবলের 'ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর' হিসেবে চুনী, পিকে, বলরামের নাম এক নিঃশ্বাসে উচ্চারিত হয় আজও । তিনজন ভারতীয় দল ছাড়া কোনও দিন কোথাও একসঙ্গে খেলেননি । তবুও পরস্পরের প্রতি ছিল আন্তরিক শ্রদ্ধা । প্রদীপ বন্দোপাধ্যায় গোঁসাই বলে ডাকতেন চুনী গোস্বামীকে । চুনী গোস্বামী বলতেন বড় বাড়ুজ্জে। দু'জনেই তাঁদের এই তৃতীয় বন্ধু সম্পর্কে ছিলেন শ্রদ্ধাশীল । তাঁর কথা উঠলেই পিকে এবং চুনী পুরো নাম উচ্চারন করতেন । এবার এই কিংবদন্তি ফুটবলারকে নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন সুকুমার সমাজপতি (Sukumar Samajpati Shares His Thoughts on Tulsidas Balaram) ৷

পঞ্চপাণ্ডবের দিন অস্তমিত । নতুন তারার খোঁজে জ্যোতিষ গুহ । ইস্টবেঙ্গলের প্রবাদপ্রতীম কর্তা একদিন হায়দরাবাদে পেলেন তুলসীদাস বলরামের খোঁজ। তাঁর আগ্রহেই পাঁচের দশকের শেষভাগে বলরাম সুদূর হায়দরাবাদ থেকে কলকাতায় খেলতে আসেন । সেসময় কলকাতা প্রকৃত অর্থে ছিল ভারতীয় ফুটবলের মক্কা । আর ভালো মানের ফুটবলারের আঁতুড়ঘর ছিল নিজামের শহর । সেদিক থেকে তুলসীদাস বলরামে ফুটবলার হয়ে ওঠা এই শহরেই । খেলা ছেড়েছেন সেই 1967 সালে । প্রায় পাঁচ দশক হয়ে গেল। তবুও অর্ধশতাব্দী আগের এক ফুটবল তারকার মৃত্যু সংবাদে শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে গোটা ময়দান ও ফুটবল সমাজ । চুনী এবং পিকের পর এবার ফুটবললোকে পাড়ি বলরামের । সেই সঙ্গে বিখ্যাত তিনমুর্তির শেষ সুতোটুকু ছিঁড়ে গেল । তাই বৃহস্পতিবার দুপুরে বলরামের মৃত্যুর খবরে ময়দানে দীর্ঘনিশ্বাস, হাহাকার । বাঙালির ফুটবল, বাংলার ফুটবল, ভারতীয় ফুটবল প্রকৃত অর্থেই রত্নহারা ।

গান স্যালুটের মধ্যে দিয়ে বিদায় জানানো হল তুলসীদাস বলরামকে । দেশের দ্বিতীয় অর্জুন পুরস্কার প্রাপ্ত ফুটবলার । তাছাড়া আর কোনও রাষ্ট্রীয় সম্মান পাননি । যা নিয়ে অভিযোগ কম ছিল না । তবে তা ছিল অনুচ্চকিত । চন্দননগর পুলিশ কমিশেনরেটের পক্ষ থেকে শেষকৃত্যে প্রয়াত তুলসীদাস বলরামকে গার্ড অব অনার ও গান স্যালুট দেওয়া হল । 'আমার মৃতদেহ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে যেন না-যায়', কড়া নির্দেশ ছিল পরিবারের উত্তর প্রজন্মের প্রতি । বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উত্তরপাড়ায় বলরামের বাসভবনের সামনে গৌরি সিনেমা হলের উল্টোদিকে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয় । সেখানেই কিংবদন্তি প্রাক্তন ফুটবলারকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রাক্তন ফুটবলার সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ চক্রবর্তী, সমীর চৌধুরী, প্রশিক্ষক বাস্তব রায়-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ । ইস্টবেঙ্গল ক্লাবেও তার ছবিতে মালা দেওয়া হয়েছে । বলরামের দেহদান করা ছিল বলে জানা গেলেও রাতেই উত্তরপাড়ার শিবতলা শশ্মানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় । তার আগে কলকাতায় যে হাসপাতালে প্রবাদপ্রতীম ফুটবলারটি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন সেখানে গিয়ে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী ।

অমল দত্ত তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, "সর্বকালের সেরা ভারতীয় ফুটবল দল বাছতে দেওয়া হলে প্রতিটা ফুটবলারের নাম লেখার সময় ভাবনা চিন্তা করতে হবে । শুধু একজনের নাম ছাড়া । নির্দ্বিধায় তালিকায় সবার আগে বলরামের নাম লিখব । চুনী গোস্বামীর মতো দৃষ্টিনন্দন ছিল না বলরামের খেলা । প্রদীপ বন্দোপাধ্য়ায়ের মতো বুলডোজিং পাওয়ার ছিল না বলরামের খেলায় । তবু সবচেয়ে কমপ্লিট প্লেয়ার যদি ভারতবর্ষে কেউ জন্মে থাকেন তো তিনি বলরাম ।"

কলকাতায় এখন ফিরে এসেছেন প্রাক্তন অলিম্পিয়ান হকি তারকা গুরুবক্স সিং । তাঁর গলাতেও তুলসীদাসকে নিয়ে মুগ্ধতা । স্মৃতির অতলে ডুব দিয়ে তিনি বলেন, "চুনীর রিসিভিং ছিল অনবদ্য। পিকের ফুটবল ছিল পাওয়ার প্যাকড। বলরামের খেলা ছিল ইউটিলিটিতে ভরা। ডেডিকেশন, ডিটারমিনেশন, ডিভোশন এই তিন ডি ছিল ওর খেলায়। মাঠ এবং মাঠের বাইরে ছিল প্রকৃত ভদ্রলোক ।"

প্রয়াত অমল দত্তর কথার প্রতিধ্বনি সুকুমার সমাজপতির মুখেও । 1960 এবং 61 সালে সুকুমার সমাজপতি ছিলেন ইস্টবেঙ্গলে তুলসীদাস বলরামের সতীর্থ । তিনি বলেন, "আমাকে যদি বলা হয় ভারতের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় কে, তাহলে বলরামদাকেই কোনও দ্বিধা না-করে বেছে নেব। গোল করার ক্ষমতা, খেলা তৈরি করার নিপুনতা সবেতেই বলরামদা ছিলেন সবার ওপরে । মাঠ এবং মাঠের বাইরের প্রকৃত ভদ্রলোক । আমার থেকে বড় হলেও মিশতেন বড় দাদার মত, বন্ধুর মত। কত স্মৃতি রয়েছে । আজ এক লহমায় সব অতীত ৷ 1962 সালের এশিয়ান গেমসের আগে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন । যাওয়া কঠিন ছিল । সেই অবস্থায় পরিবর্ত হিসেবে আমার নাম প্রস্তাব করেছিলেন তিনি । পরে চুনীদা জোর করে নিয়ে যান ওঁকে ৷ গোল করলে ফুটবলারদের কতরকমের সেলিব্রেশন দেখা যায় । তুলসীদাস বলরাম করলে লজ্জিত হয়ে পড়তেন।"

পাঁচের দশকের মাঝামাঝি সময়ে তদানীন্তন অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দরাবাদ থেকে কলকাতায় এসেছিলেন । কলকাতার মাঠে বর্ষার জলে ভেজা কাদার মাঠে খেলতে হত । ভিন রাজ্যের খেলোয়াড়দের তাতে মানিয়ে নিতে সমস্যায় পড়তে হত । আজকের মত সেইসময় কোনও দলের কোচ থাকত না । ফলে দলের অভিজ্ঞদের পরামর্শই একমাত্র পথ নির্দেশ । দর্শকদের মন জয় করতে হবে বলে তুলসীদাস বলরাম মরশুম শুরুর আগে বাড়তি অনুশীলন করে যাচ্ছিলেন । কিন্তু বৃষ্টি ভেজা কাদা মাঠ মিলছে না । কারণ বৃষ্টির দেখা নেই । ভেজা মাঠে অনুশীলন করা হচ্ছে না। একদিন সন্ধ্যাবেলা মেসে শুয়ে আছেন । হঠাৎ প্রবল বৃষ্টি । বলরাম মেস থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সি ধরে সোজা গেলেন ইস্টবেঙ্গল মাঠে । মালিদের ডেকে ক্লাবের গেট খোলালেন । মালিরা অবাক । অন্ধকার মাঠে অঝোর বর্ষণের সাথে বিদ্যুৎ চমকের মধ্যে বলরাম অনুশীলন করে চলেছেন । প্রায় ঘণ্টাখানেক বাদে বৃষ্টি থামলে বলরাম আবার মালিদের ডেকে গেট বন্ধ করতে বলে মাঠ ছাড়লেন ।

আরও পড়ুন:'অসামান্য' নয়া কীর্তির দীপ্তিকে শুভেচ্ছা রাকুলের

পরেরদিন প্র্যাকটিসে জেসি গুহ মহাশয় মালিদের কাছ থেকে ঘটনাটি শুনলেন। সাধারণত জেসি গুহ সর্বসমক্ষে কোন ফুটবলারের প্রশংসা করতেন না। সেদিন সমস্ত প্লেয়ারদের বলরামের নিষ্ঠার কথা বলে করতালি দিয়ে অভিনন্দিত করতে বলেন। এতটাই ছিলো ফুটবলের প্রতি বলরামের নিষ্ঠা।এখন এইসব গল্পগুলোই ময়দানের আনাচে কানাচে ঘুরছে। শুক্রবার প্রয়াত শ্যামল ঘোষ এবং পরিমল দে'র শ্রদ্ধাবাসর ইস্টবেঙ্গলে। তার আগে ফের রত্নহারা লাল-হলুদ মুকুট। যে রত্নের নাম তুলসীদাস বলরাম।

Last Updated : Feb 17, 2023, 2:57 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details