কলকাতা, 17 ফেব্রুয়ারি:তুলসীদাস বলরাম বাংলার ভূমিপুত্র নন । কিন্তু ভারতীয় ফুটবলের 'ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর' হিসেবে চুনী, পিকে, বলরামের নাম এক নিঃশ্বাসে উচ্চারিত হয় আজও । তিনজন ভারতীয় দল ছাড়া কোনও দিন কোথাও একসঙ্গে খেলেননি । তবুও পরস্পরের প্রতি ছিল আন্তরিক শ্রদ্ধা । প্রদীপ বন্দোপাধ্যায় গোঁসাই বলে ডাকতেন চুনী গোস্বামীকে । চুনী গোস্বামী বলতেন বড় বাড়ুজ্জে। দু'জনেই তাঁদের এই তৃতীয় বন্ধু সম্পর্কে ছিলেন শ্রদ্ধাশীল । তাঁর কথা উঠলেই পিকে এবং চুনী পুরো নাম উচ্চারন করতেন । এবার এই কিংবদন্তি ফুটবলারকে নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন সুকুমার সমাজপতি (Sukumar Samajpati Shares His Thoughts on Tulsidas Balaram) ৷
পঞ্চপাণ্ডবের দিন অস্তমিত । নতুন তারার খোঁজে জ্যোতিষ গুহ । ইস্টবেঙ্গলের প্রবাদপ্রতীম কর্তা একদিন হায়দরাবাদে পেলেন তুলসীদাস বলরামের খোঁজ। তাঁর আগ্রহেই পাঁচের দশকের শেষভাগে বলরাম সুদূর হায়দরাবাদ থেকে কলকাতায় খেলতে আসেন । সেসময় কলকাতা প্রকৃত অর্থে ছিল ভারতীয় ফুটবলের মক্কা । আর ভালো মানের ফুটবলারের আঁতুড়ঘর ছিল নিজামের শহর । সেদিক থেকে তুলসীদাস বলরামে ফুটবলার হয়ে ওঠা এই শহরেই । খেলা ছেড়েছেন সেই 1967 সালে । প্রায় পাঁচ দশক হয়ে গেল। তবুও অর্ধশতাব্দী আগের এক ফুটবল তারকার মৃত্যু সংবাদে শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে গোটা ময়দান ও ফুটবল সমাজ । চুনী এবং পিকের পর এবার ফুটবললোকে পাড়ি বলরামের । সেই সঙ্গে বিখ্যাত তিনমুর্তির শেষ সুতোটুকু ছিঁড়ে গেল । তাই বৃহস্পতিবার দুপুরে বলরামের মৃত্যুর খবরে ময়দানে দীর্ঘনিশ্বাস, হাহাকার । বাঙালির ফুটবল, বাংলার ফুটবল, ভারতীয় ফুটবল প্রকৃত অর্থেই রত্নহারা ।
গান স্যালুটের মধ্যে দিয়ে বিদায় জানানো হল তুলসীদাস বলরামকে । দেশের দ্বিতীয় অর্জুন পুরস্কার প্রাপ্ত ফুটবলার । তাছাড়া আর কোনও রাষ্ট্রীয় সম্মান পাননি । যা নিয়ে অভিযোগ কম ছিল না । তবে তা ছিল অনুচ্চকিত । চন্দননগর পুলিশ কমিশেনরেটের পক্ষ থেকে শেষকৃত্যে প্রয়াত তুলসীদাস বলরামকে গার্ড অব অনার ও গান স্যালুট দেওয়া হল । 'আমার মৃতদেহ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে যেন না-যায়', কড়া নির্দেশ ছিল পরিবারের উত্তর প্রজন্মের প্রতি । বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উত্তরপাড়ায় বলরামের বাসভবনের সামনে গৌরি সিনেমা হলের উল্টোদিকে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয় । সেখানেই কিংবদন্তি প্রাক্তন ফুটবলারকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রাক্তন ফুটবলার সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ চক্রবর্তী, সমীর চৌধুরী, প্রশিক্ষক বাস্তব রায়-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ । ইস্টবেঙ্গল ক্লাবেও তার ছবিতে মালা দেওয়া হয়েছে । বলরামের দেহদান করা ছিল বলে জানা গেলেও রাতেই উত্তরপাড়ার শিবতলা শশ্মানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় । তার আগে কলকাতায় যে হাসপাতালে প্রবাদপ্রতীম ফুটবলারটি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন সেখানে গিয়ে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী ।
অমল দত্ত তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, "সর্বকালের সেরা ভারতীয় ফুটবল দল বাছতে দেওয়া হলে প্রতিটা ফুটবলারের নাম লেখার সময় ভাবনা চিন্তা করতে হবে । শুধু একজনের নাম ছাড়া । নির্দ্বিধায় তালিকায় সবার আগে বলরামের নাম লিখব । চুনী গোস্বামীর মতো দৃষ্টিনন্দন ছিল না বলরামের খেলা । প্রদীপ বন্দোপাধ্য়ায়ের মতো বুলডোজিং পাওয়ার ছিল না বলরামের খেলায় । তবু সবচেয়ে কমপ্লিট প্লেয়ার যদি ভারতবর্ষে কেউ জন্মে থাকেন তো তিনি বলরাম ।"