শ্রীনগর, 12 নভেম্বর: আমার হাত বান্ধিবি, পা বান্ধিবি, মন বান্ধিবি কেমনে ? সত্যিই মানুষ যে কেবল মনের জোরে সপ্তসাগর পেরোতে পারে, সেটা প্রতিমুহূর্তে মনে করাচ্ছেন উপত্যকার শীতল দেবী (Shital Devi) ৷ মনের জোর, পারিপার্শ্বিক সাহচর্য অটুট থাকলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জীবনের এগিয়ে যাওয়ার পথে কোনও বাধা হতে পারে না। দু'বাহু নেই ৷ তাতে কী? পায়ের সাহায্যে ধনুক তাক করে বুলস আই'য়ের লক্ষ্যে অবিচল শীতল ৷ এমন নজির কেবল ভূ-ভারত কেন, সারা বিশ্বে বিরল ৷ সবমিলিয়ে শীতল দেবী একটি লড়াইয়ের নাম (Shital Devi a para archer from Jammu and Kashmir is inspiration to all)।
কেবল শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নয়, জম্মু-কাশ্মীরের কৃষক পরিবারের মেয়ে শীতলের আর্থিক প্রতিবন্ধকতাও নিত্যসঙ্গী। বিশেষভাবে সক্ষম কন্যাসন্তানকে নিয়ে কার্যত আতান্তরে পড়েছিলেন শীতলের মা-বাবা। দৃত হিসেবে উদয় হয় বেঙ্গালুরুর প্রীতি নামে এক সহৃদয় মহিলা ৷ তাঁর সৌজন্যেই শীতল ভারতীয় প্যারা আর্চার দলের কোচ কুলদীপ কুমার বেদওয়ানের কোচিংয়ে সুযোগ পান।
মাত্র আট মাস আগে তাঁর কোচিংয়ে যোগ দেওয়া এমন শিক্ষার্থীকে পেয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন কোচও। তবে সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সদস্য হাল না-ছেড়ে বরং শীতলের প্রতিভায় শাণ দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন। সন্তুষ্টির সুরে কুলদীপ বলেন, "প্রথমবার এমন একজন তিরন্দাজ শিক্ষার্থী পেয়েছিলাম যার দু'টো হাত নেই। এই অবস্থায় ধনুকের যন্ত্রাংশে কয়েকটি পরিবর্তন নিয়ে আসতে হয়েছিল। যা বিশেষভাবে তৈরি করিয়েছিলাম। এমন একটা যন্ত্রাংশ তৈরি করি যা থুতনি দিয়ে চালানো সম্ভব। যত সহজে বললাম ততটা সহজ ছিল না। অনেক চিন্তা এবং খোঁজাখুজির পর এই যন্ত্রাংশ তৈরি করে শীতলের তির ছোড়ার বিষয়টি সমাধান করতে পেরেছিলাম। এরপর পা এবং কাঁধের সাহায্যে ধনুকে তির সংযোজন এবং থুতনি দিয়ে ছোড়ার কাজটি করার প্রক্রিয়াটি অভ্যস্ত করিয়েছি। আমি মনে করে কেউ যদি মন থেকে কিছু করতে চায় তাহলে অসম্ভব কোনও কিছুই থাকে না।"