কলকাতা, 29 জুন : পাথর ছুড়ে আম পাড়ায় সিদ্ধহস্ত ৷ একেবারে অব্যর্থ নিশানা ৷ গাছের আম মাটিতে ফেলতে পারলেই লাফিয়ে উঠত মিষ্টি মেয়েটি ৷ ধনুকের ছিলায় তির পরিয়ে নিশানায় লক্ষ্যভেদ করার নেশাটা তখন থেকেই ৷ ক্রিকেটের ঝাঁ চকচকে গ্ল্যামার তাঁকে টানেনি ৷ হাতে তুলে নিয়েছিলেন তির-ধনুক ৷ পৃথিবীর প্রাচীনতম খেলার মধ্যে একটি ৷
একটা সময় ছিল যখন রাঁচি নামটা শুনলেই মানসিক হাসপাতালের কথা মনে পড়ত ৷ সেই 'বদনাম' ঘুচিয়ে রাঁচিকে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি দিয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি ৷ দেশকে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতানো প্রাক্তন অধিনায়ক রাঁচির গর্ব ৷ ওই শহরেই তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা, ক্রিকেটে হাতেখড়ি ৷ তবে ধোনির শহর আরও একজনের জন্য গর্ব করতেই পারে ৷ গর্ব করাটা উচিত ৷ তিনি তিরন্দাজ দীপিকা কুমারী ৷ ভারতীয় তিরন্দাজের পোস্টার গার্ল ৷ টোকিয়ো অলিম্পিকসে দেশের হয়ে পদক জয়ের অন্যতম দাবিদার ৷
রাঁচি থেকে 15 কিমি দূরে রাতু ছাত্তি গ্রামের বাসিন্দা শিবনারায়ণ মাহাতো এবং গীতা মাহাতো ৷ সকাল হতেই অটো রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন শিবনারায়ণ ৷ গীতা পেশায় ছিলেন নার্স ৷ দুজনের আয় যা হত তাতে মেয়ে দীপিকাকে নিয়ে কোনওক্রমে সংসার চলে যেত ৷ কিন্তু মাহাতো একদিন দম্পতি ফাঁপরে পড়লেন মেয়ের আবদারে ৷ তিরন্দাজ হতে চায় মেয়ে ৷ দীপিকার প্রতিভা মাহাতো দম্পতির কাছে অজানা ছিল না ৷ কিন্তু নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারটির যা আয় তাতে মেয়েকে তিরন্দাজ হিসেবে গড়ে তোলার কথা ভাবাটাই ছিল স্বপ্ন ৷
সমস্যা থাকলেও মেয়েকে স্বপ্ন দেখতে বাধা দেননি ৷ অনুশীলনের জন্য বাঁশের তির ধনুক তৈরি করে দেন ৷ সেটি ছিল প্রথম ধাপ ৷ 2005 সালে ঝাড়খণ্ডের অর্জুন আর্চারি অ্যাকাডেমিতে অনুশীলনের সুযোগ পান দীপিকা ৷ খারসাওয়ানের সেই অ্যাকাডেমিটি ছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুণ্ডার স্ত্রী মীরা মুণ্ডার ৷ একটা বছর সেখানেই কাটে ৷ দীপিকা কুমারী পেশাদার তিরন্দাজিতে পা রাখেন 2006 সালে ৷ জামশেদপুরের টাটা আর্চারি অ্যাকাডেমিতে অনুশীলনের জন্য তিরন্দাজির উপযুক্ত সরঞ্জাম এবং ইউনিফর্ম পান ৷ মাসে 500 টাকা স্টাইপেন্ডও পেতেন ৷ তিনবছর পর যখন অ্যাকাডেমি থেকে বাড়ি ফিরলেন ততদিনে ক্যাডেট ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের খেতাব এসে গিয়েছে দীপিকার ঝুলিতে ৷ সেটা 2009 সাল ৷