কলকাতা , 23 সেপ্টেম্বর : জওহরলাল নেহরু রোডের ধারে কলকাতার বিখ্যাত বিধানচন্দ্র মার্কেট । যা ময়দান মার্কেট নামেই বেশি পরিচিত । ধর্মতলা চত্বরে এই মার্কেট ক্রীড়াদুনিয়ার কার্যত সব পেয়েছির আসর । খেলোয়াড় থেকে ক্লাব কর্তা কিংবা ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের খেলাধুলো সংক্রান্ত চাহিদার সেরা ঠিকানা ময়দান মার্কেট ।
চলতি বছরের গত সাতমাস ময়দান মার্কেটে শুধুই হতাশা । খেলাধূলা বন্ধ । ফলে জোগান থাকলেও চাহিদা নেই । তা সত্ত্বেও আশা ছিল IPL ঘিরে । ইডেনে খেলা থাকলে চাহিদা বাড়ে জার্সি সহ বিভিন্ন ক্রীড়া সরঞ্জামের । মাঠ খেলা দেখতে আসা কিংবা বাড়িতে খেলা দেখা দর্শকরা সকলেই IPL-এর মরসুমে ময়দান মার্কেট ছুঁয়ে যান । প্রিয় দলের প্রিয় ক্রিকেটারের জার্সির খোঁজে ভিড় জমান ।
ময়দান মার্কেটে স্বাভাবিক সময়ে সারা বছর প্রায় ষাট কোটি টাকার বেচাকেনা হয় । লাভ-ক্ষতির জোয়ার ভাটায় এই মার্কেটের দোকানিরা হাসিমুখেই থাকেন । সেই হাসিমুখ কেড়ে নিয়েছে কোরোনা । কোরোনার হাত থেকে রেহাই পায়নি ময়দানের জার্সির বিক্রেতারা । দীর্ঘদিন ময়দান মার্কেটে জার্সি বিক্রি করেন আবদুল সালাম । তিনি বলেন " চাহিদা একদম নেই । দুবাইয়ে খেলা হচ্ছে এখানে তার কোনও প্রভাব নেই। পরিস্থিতি কঠিন। মানুষের রুটি রোজগার প্রশ্নের মুখে। এই অবস্থায় জার্সির কেনার জন্য কে আসবে বলুন? তার উপর দেশে IPL হলে একরকম। ইডেনে খেলা হলে জার্সি প্রচুর বিক্রি হত। এখন কিছুই নেই । "
কোরোনা কেড়েছে মুখের হাসি , IPL বিদেশে হওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে ময়দানের জার্সি ব্যবসায়ীরা "IPL শুরুর দিনে চেন্নাই সুপার কিংসের একটি মাত্র জার্সি বিক্রি হয়েছে। দাম মাত্র দেড়শো টাকা। তারপর থেকে শুধুই জার্সি ঝুলিয়ে খদ্দেরের আশায় বসে আছি । ইডেনে IPL ম্যাচ থাকলে ছয় থেকে দশ হাজার টাকার জার্সি বিক্রি হয় । এখন কিছুই নেই । জার্সির দাম বেড়েছে এমন নয় । একশো, দেড়শো টাকা দাম জার্সির, পঞ্চাশ টাকারও জার্সি আছে । তা সত্ত্বেও লোক নেই।" বলছিলেন মুস্তাক আমেদ । তিনিও দীর্ঘদিন ধরে জার্সি বিক্রি করেন । অবস্থা এতটাই খারাপ যে নতুন জার্সির অর্ডার দিতে পারেননি অধিকাংশ জার্সি বিক্রেতা । গতবছরের মজুত করা জার্সিই এবছর বিক্রি করছেন অনেকে ।
সবে তো IPL শুরু, চাহিদা বাড়বে না?
আবদুল এবং মুস্তাক দুজনেই বলছেন সম্ভাবনা কম । কলকাতায় খেলা হলে চাহিদা তৈরি হয় । ইডেনে খেলা হলে ধর্মতলা চত্বর জুড়েই ব্যস্ততা দেখা যায় । এখন বারোটা একটায় দোকান খুলে চারটে পাঁচটার মধ্যে গুটিয়ে ফেলতে হচ্ছে । KKR কলকাতায় খেললে হলে চাহিদা বাড়ত । কিন্তু দুবাইয়ে খেলা । ফলে চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা নেই ।
করোনার আবহে কারিগর পাওয়া যাচ্ছে না। তার উপর বাইরের জিনিস ক্রয়ের উপর অনেকেই আশঙ্কায় থাকছেন। ফলে সার্বিক একটা ধাক্কা লাগছে। তাই ময়দান মার্কেটের ভিতর বাইরে সব জায়গাতেই এখন হাহাকারের ছবি। IPL মরুশহরে আলো জ্বালালেও তিলোত্তমার ক্রীড়া সরঞ্জাম, জার্সি বিক্রেতাদের মনে শুধুই অন্ধকার ।