প্রিয় শীত,
শীতকালে চিঠি! লেখার অনুরোধ যখন পেলাম সত্যিই বেশ অবাক হয়েছিলাম । আসলে আমি বা আমার মত যারা মাঠের লোক তাদের কাছে লেখার অনুরোধ এলেও চিঠি লেখার অনুরোধ বড় একটা আসে না । খেলার বিশ্লেষণধর্মী লেখা খুব নতুন কিছু নয় আমাদের কাছে কিন্তু শীতকালকে চিঠি লেখা এই প্রথম । ব্যাপারটা আমার কাছে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মতোই উত্তেজনায় ভরা । গৌরচন্দ্রিকা অনেক হল এবার লেখায় ফিরি ।
শীতকাল মানে সারা দিন চাদরের তলায় থাকা । যখন ছোট ছিলাম আম্মার ডাকেও ঘুম ভাঙতে চাইতো না শীতের সকালে । লেপের তলা থেকে বেরিয়ে প্র্যাকটিসে যাওয়াই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের । তারপর ধীরে ধীরে বড় হয়েছি । শীত তোমার তীব্র ঠাণ্ডার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেও শিখে গিয়েছি । তবে সবচেয়ে অবাক হয়েছিলাম অনুর্ধ্ব 16 বাংলা দলের হয়ে দিল্লিতে খেলতে গিয়ে । দিল্লির শীতের সঙ্গে আমাদের রাজ্যের শীতের তুলনা চলে না । কলকাতাতে থেকে সেটা বোঝা যায় না । সেটা 1998 সাল । সেবারই প্রথম দিল্লি যাওয়া । ঘন কুয়াশা,কনকনে ঠাণ্ডায় জুবুথুবু অবস্থা । প্র্যাকটিসে প্রায় ঘণ্টা খানেক গা ঘামানোর চেষ্টার পরে হাত পায়ের জড়তা কাটত । ওখানেই প্রথমবার আমি মেয়েদের সিগারেট খেতে দেখেছিলাম । নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে আমি । মেয়েরা সিগারেট খাচ্ছে আগে দেখিনি । ওখানে ওদের সিগারেট খেতে দেখে অবাক লেগেছিল । এখন অবশ্য একথা শুনে সবাই হাসবে ।
শীত তোমায় বলি, কোনও এক শীতকালেই এক ভীষণ অচেনা ছবির সাক্ষী হয়েছিলাম আমি । নেহেরু কাপে সেবার ভারতীয় দলের কোচ ছিলেন কোভারম্যান । তখন ভারতীয় দলের শিবিরটা ছিল তারকা খচিত । মাঠের বাইরে আড্ডা ইয়ার্কি সব চলত । কিন্তু মাঠে নামলেই সকলের চোখ মুখ পালটে যেত । কোচ কোভারম্যান নিজেও ছিলেন তারকা ফুটবলার । আমাদের প্রচুর পরিশ্রম করাতেন । ক্যামেরুনকে হারিয়ে সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত । নয়াদিল্লিতে সেবার ডিসেম্বর মাসে আয়োজিত হয়েছিল নেহরুকাপ । গুরগাঁওতে বসেছিল শিবির । ঠাণ্ডায় দারুণ কষ্ট করে প্রস্ততি নিতে হয়েছিল । শেষপর্যন্ত চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় উঠতেই সব কষ্ট মুহূর্তে ভুলে গিয়েছিলাম আমরা ৷ আর শীতটা? সত্যিই সেবার হয়েছিল ভীষণ মনোরম ।