মেরি কমের গল্প
ভাবলে বিস্ময় জাগে যে, সেই মেয়েটি আদপে ঠিক কেমন ছিল । যে নিজের স্বপ্নের খোঁজে রোজ বাড়ি থেকে বেরোত, কীভাবে সে জীবনের নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করত, কীভাবে কঠোর পরিশ্রম করত আর কীভাবেই বা সব বিদ্বেষ–বৈষম্যের পাহাড় জোরালো একটা পাঞ্চে গুঁড়িয়ে একেবারে ধুলোয় মিশিয়ে দিত । বর্তমানে তিনি একজন সহধর্মিণী, যিনি নিজের স্বামীকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসেন, সমর্থন করেন । আবার পাশাপাশি তিনি একজন মা-ও । তবু তিনি যতবার বক্সিং রিংয়ে নামবেন, ততবারই তেরঙার জয় হবে । বক্সিং গ্লাভস হাতে তাঁকে দেশের জনসংখ্যার অন্তত অর্ধেক অংশই আর্দশ হিসাবে মানে ।
নারী দিবস উপলক্ষে আসুন, আমরা সকলে এই মহিলা বক্সারের জীবনযাত্রার দিকে একবার ফিরে তাকাই ৷ তাঁর কৃতিত্বের জয়ধ্বনি দিই ৷ মেরি কম পদ্মবিভূষণ সম্মানের যোগ্য প্রাপক । একইসঙ্গে আবার ‘চতুর্ভূজাকৃতি গোলক’ তথা বক্সিং রিংয়ের আটবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও ৷
মণিপুরের বাসিন্দা মেরি কমের জন্ম চূড়চন্দপুরে জেলায় 1983 সালের 1 মার্চ । তাঁর বাবা-মা ছিলেন কৃষক। মেরির আসল নাম মাঙ্গতে চুগনিচুং মেরি কম । যদিও অনুরাগীদের কাছে তিনি পরিচিত এমসি মেরি কম নামেই । রাজ্যসভার সদস্য মেরি আজ নিজেকে সমাজের যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন, তার জন্য তাঁকে প্রচুর বাধাবিপত্তি পেরিয়ে আসতে হয়েছে । অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে ।
কঠোর সংগ্রামকে পালটেছেন বিজয়গাথায়
ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে মাঠে যেতেন মেরি কম । তাঁদের চাষের কাজে সাহায্য করতেন । কিন্তু তখন থেকেই বক্সার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন ৷ যার কারণ তাঁর শৈশবের আইডল, দিনকো সিং। দিনকোর কাছে বক্সিং শেখার ইচ্ছা ছিল মেরির, আর তিনি সে ইচ্ছা পূরণও করেছিলেন । পরীক্ষায় কোনওদিনই শীর্ষ স্থান অধিকার করতে পারেননি মেরি কারণ তাঁর সমস্ত মনোযোগ আর আগ্রহ ছিল খেলাধূলার প্রতি । 37 বছর বয়সি দেশের সেরা মহিলা বক্সার তখন ভাবতেও পারেননি যে একদিকে বক্সিং নিয়ে পরিবারের আপত্তি এবং অন্যদিকে পিঠে পাহাড়প্রমাণ আর্থিক অনটনের বোঝা সামলে উঠে কোনওদিন এই উচ্চতায় পৌঁছতে পারবেন । তেজিয়ান, একগুঁয়ে সেই বছর পনেরোর মেয়েটি হাতে বক্সিং গ্লাভস পরে নিজের ইচ্ছাপূরণের যাত্রা শুরু করেছিলেন ৷ পরবর্তীকালে অনেক পরে পরিবার তাঁর পাশে দাঁড়ায় ৷ শেষ পর্যন্ত ২০০১ সালে তাঁর আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাঁর কেরিয়ারের সূচনা হয়।