কলকাতা, 20 অগস্ট:কিংবদন্তি ভারতীয় ফুটবলার সমর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনাবসান (Samar Bannerjee Passed Away)। বদ্রু ব্যানার্জি নামে অধিক সমাদৃত এই তারকা ফুটবলার শুক্রবার রাত 2টো নাগাদ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল 92 বছর । বেশ কিছু দিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন 1956 সালের মেলবোর্ন অলিম্পিকে ভারতীয় ফুটবল দলের এই অধিনায়ক । এই অল্মিপিকেই ভারত চতুর্থ স্থান অধিকার করেছিল। যা আজ অবিশ্বাস্য বলে মনে হয় । তাঁর প্রয়ানে শোকস্তব্ধ ফুটবল মহল ।
আরও পড়ুন: ফেডারেশন সভাপতির দৌড়ে পাহাড়ি বিছে, জমা দিলেন মনোনয়ন
1930 সালের 30 জানুয়ারির হাওড়ার বালিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বদ্রু । ফুটবল খেলার পাশপাপশি পড়াশুনোয় যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন । তারই ফলশ্রুতিতে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হয়েছিলেন । কিন্তু তাঁর যাবতীয় প্রতিষ্ঠা ফুটবলকে ঘিরেই । মাত্র 18 বছর বয়সে 1948 সালে বালি প্রতিভায় যোগ দেন তিনি । বছরখানেক সেখানে খেলার পর 1949 সালে যোগ দেন বিএনআরে। তিন বছর সেখানে দূরান্ত ফুটবল খেলার পর 1952 সালে মোহনবাগানে আসেন । তখন মোহনবাগানে চলছে শৈলেন মান্নাদের যুগ । কিন্তু অসাধারণ ফুটবল প্রতিভায় ভর করে খুব তাড়াতাড়ি প্রথম একাদশে নিজের জায়গা পাকা করে নেন । ফরওর্য়াড হিসেবে গোল করতে পটু বদ্রু ক্লাব ফুটবলের পাশাপাশি জাতীয় দলেও দ্রুত জায়গা করে নেন । 1956 সালের মেলবোর্ন অলিম্পিকের অধিনায়কত্ব করার আগে বদ্রু সবুজ মেরুন জার্সিতে দেশের সমস্ত ট্রফি জিতেছিলেন ।
চির বিদায় ! সবুজ ঘাসকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন বদ্রু ভারতীয় ফুটবল তখন সোনালি যুগ। এশিয়ান গেমসে সোনা জয়, অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা এবং বিদেশ সফরে ভারতীয় ফুটবলাররা নিজেদের জাত চেনাচ্ছেন। ফলে মেলবোর্নেও ভারতীয় ফুটবল দল দারুণ পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছিল। ওই অলিম্পিকে হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে ওয়াকওভার পেয়েছিল ভারত। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে 4-2 গোলে জিতেছিল ভারত। সেমিফাইনালে যুগস্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে 4-1 গোলে পরাজিত হয়ে চতুর্থ হয়েছিল। 2009 সালে মোহনবাগান রত্ন সম্মানে সম্মানিত বদ্রু ব্যানার্জী 1958 সালে সবুজ মেরুনের অধিনায়ক হয়েছিলেন। দেশের নেতৃত্বের পরে ক্লাবের নেতৃত্ব দানের ঘটনা ভারতীয় ফুটবলে বিরল। ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পরে কোচ হিসেবে বড়িশা ক্লাবে আত্মপ্রকাশ। বাংলা দল 1961 সালে তার কোচিংয়ে সন্তোষ ট্রফি জয় করেছিল। বাংলা দলের নির্বাচক হিসেবেও নতুন প্রতিভা তুলে নিয়ে আসার কাজ করেছিলেন তিনি। সদা হাস্যমুখ মানুষটির প্রয়াণে ময়দানে শোকের ছায়া। একই সঙ্গে তাঁর মৃত্যুতে ভারতীয় ফুটবলের সোনালি বিকেলের অন্যতম মহীরুহ পতন।
ফুটবল মাঠে প্রতিপক্ষের মনে ত্রাসের সঞ্চার করা মানুষটি ব্যক্তিগত জীবনে বহু শোক সহ্য করেছেন । স্ত্রী প্রয়াত হয়েছিলেন আগেই । ছেড়ে চলে গিয়েছেন ছেলেও । এবার সবুজ ঘাসকে কাঁদিয়ে চিরকালের মতো বিদায় নিলেন বাঙালির প্রাণের বদ্রু ।