রাবাত (মরক্কো), 14 ডিসেম্বর: হিন্দ সাবউনি গর্ব অনুভব করেন, যখন তিনি নিজের দেশ মরক্কোর ঐতিহাসিক বিশ্বকাপ অভিযানের কথা স্মরণ করেন ৷ মরক্কো তার ফিফা বিশ্বকাপ (FIFA World Cup 2022) অভিযানে একের পর এক ইউরোপীয় ফুটবল পাওয়ার হাউস এবং প্রাক্তন আফ্রিকার উপনিবেশিক শক্তিগুলিকে টুর্নামেন্ট থেকে বের করে দিয়েছে ৷ যার শুরুটা হয়েছিল গ্রুপ পর্বে বেলজিয়ামকে দিয়ে ৷ পরবর্তী সময়ে নকআউটে স্পেন ও পর্তুগালের বিশ্বকাপ অভিযানে ইতি টেনেছে মরক্কো ৷ সেই সঙ্গে প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে এই গল্ফ কান্ট্রি ৷ এবার প্রতিপক্ষ ফ্রান্স (Morocco Faces France in Politically Charged Semifinal) ৷
মরক্কোর রাজধানীর বাসিন্দা 26 বছর বয়সি ইংরেজির শিক্ষকের কথায়, উত্তর আফ্রিকান এই দেশে সকল নাগরিক এবং অধিকাংশ প্রবাসীর জন্য এটা একটা গর্বের মুহূর্ত ৷ সেমিফাইনালে মরক্কোর সামনে এবার ফ্রান্স ৷ কুড়ি শতকের প্রথমদিকে অধিকাংশ সময় মরক্কোয় ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে শাসন করেছে ফরাসিরা ৷ বুধবারের ম্যাচ তাই দুই দেশের জন্য শুধু রাজনৈতিক নয়, তাঁদের আবেগের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে ৷ এই ম্যাচ সেই সব গ্লানিকে ঘুচিয়ে দিতে পারে, যা এখনও ফ্রান্সের সঙ্গে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে জড়িয়ে রয়েছে ৷
সেমিফাইনালে উঠে মরক্কোবাসীর উচ্ছ্বাস পর্তুগালের বিরুদ্ধে ম্যাচ চলাকালীন মরক্কোর এক ক্যাফের বাইরে মানুষের ঢল এনিয়ে হিন্দ সাবউনি বলেন, ‘‘আমরা বাকি বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চাই যে, আমরা মরক্কোবাসীরা এখনও ফ্রান্সের ঐতিহ্যকে বয়ে নিয়ে বেরাচ্ছি না ৷ আর এটা ফ্রান্সের উপনিবেশও নয় ৷ প্রাক্তন যোদ্ধাদের জন্য, গতবারের বিশ্বজয়ীদের বিরুদ্ধে এই ম্যাচটি আমাদের কাছে দেখানোর একটা সুযোগ ৷ যে মরক্কো একটি শক্তিশালী দেশ, অন্তত ফুটবলের মাঠে ৷’’ প্রসঙ্গত, গত কয়েক দশকে ফ্রান্সের সঙ্গে মরক্কোর সম্পর্ক অনেকটাই বদলে গিয়েছে ৷ সাবউনি জানান, তাঁদের জেনারেশন মরক্কোর উপর ফ্রান্সের এই আধিপত্যে বিরক্ত হয়ে গিয়েছে ৷
কোয়ার্টারে ফ্রান্সের সমর্থকদের ম্যাচ দেখার উচ্ছ্বাস আরও পড়ুন:চেরি অন দ্য কেক ! দেশের জার্সি গায়ে 'শেষ' ম্যাচে নজির ছুঁতে মরিয়া লিও
আর সেই কারণে, ফ্রান্সের একসময়ের উপনিবেশ মরক্কোর বর্তমান প্রজন্ম ফ্রেঞ্চ ভাষায় কথা বলে না ৷ তাঁরা ইংরেজিতে কথা বলতে বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করেন ৷ পাশাপাশি, ফ্রেঞ্চ সামগ্রীর বদলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা দ্রব্য বর্তমান মরক্কোবাসীরা বেশি ব্যবহার করছে ৷ আর পুরোটাই ফ্রান্সের ছত্রছায়া থেকে যে তারা বেরিয়ে এসেছে, তা প্রমাণ করার জন্য ৷ সেই সঙ্গে এটাও প্রমাণ করা যে, মরক্কোবাসী ফ্রান্সকে বর্জন করেও, ভালোভাবে স্বচ্ছন্দের সঙ্গে জীবনধারণ করতে সক্ষম ৷ তাই আজ রাতের দ্বিতীয় ফিফা বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল, দুই দেশের বিশেষত মরক্কোর অস্তিত্বের লড়াই ৷