সাত ও আটের দশকে তাঁকে বলা হত কলকাতা ময়দানের 'বাদশা' । তিন প্রধানে খেলা মহম্মদ আকবরের গোল করার দক্ষতা এতটাই ছিল যে, শুধু বিপক্ষ দল নয়, দাদা মহম্মদ হাবিব পর্যন্ত ভাইকে সমীহ করতেন । 1971 সালে কলকাতায় পা রাখার কয়েকদিন পর থেকেই শুরু হয় মহম্মদ আকবরের জয়যাত্রা ৷ প্রায় প্রত্যেক মরশুমেই তাঁর নামের পাশে গোলের সংখ্যাটা 33, 32, 34 ৷ ফুটবলবোদ্ধারা বলেন, হাবিব ছিলেন বলেই আকবর ‘বাদশা’ হয়েছেন ৷ কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, দাদা পাশে না-থাকলেও বিপক্ষের জালে বল জড়ানোর কাজটা কোনও জড়তা ছাড়াই করে গিয়েছেন তিনি (Interview of Md Akbar) ৷
কিন্তু কলকাতা লিগের ইতিহাসে দ্রুততম গোল (45 বছর যেই রেকর্ড অটুট) কিংবা একাধিক ম্যাচে খাদের কিনারা থেকে তিন প্রধানকে তুলে আনা আকবরের ফুটবল কেরিয়ারে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত কসমসের বিপক্ষে মাঠে নামা । কার্লোস আলবোর্তো, ফ্র্যাঙ্ক বেকেনবাওয়ার, জুয়ান কান্তিলিয়া, জর্জিয়ো চিনাগলিয়া এবং সর্বোপরি পেলে । 1977-এর কসমসে তখন আক্ষরিক অর্থেই চাঁদের হাট ।
আগের বছরই মোহনবাগানে এসেছেন দুই ভাই, হাবিব-আকবর । বড়ে মিয়াঁ-ছোটে মিয়াঁ জাদুতে মুগ্ধ আপামর কলকাতা ৷ তাঁদের দাপটেই দীর্ঘদিন পর কলকাতা লিগ জিতেছে মোহনবাগান । ফলে গঙ্গাপাড়ের তাঁবুতে সেবছর উৎসবের আমেজ । অগস্ট মাস, কলকাতাজুড়ে বৃষ্টির দাপট চলছে । তার মধ্য়েই তৎকালীন সচিব ধীরেন দে জানান, কসমসকে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে । সবকিছু ঠিক থাকলে আর একমাসের মধ্যে পেলের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে হবে ।
স্মৃতিচারণা করতে করতে ছোটে মিয়াঁ ফিরে গিয়েছেন সাড়ে চার দশক আগে । আকবর বলেন, ''অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ । 24 সেপ্টেম্বর ওই ম্যাচের কয়েকদিন আগে পেলে-সহ কসমস দল কলকাতায় এসে গিয়েছে । ওদের রাখা হয়েছে গ্র্যান্ডে । আর অন্যদিকে আমরা জোরকদমে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছি । হোক না প্রস্তুতি ম্যাচ, বিশ্বসেরাদের বিরুদ্ধে তো নিজেদের সেরাটাই দিতে হবে । কিন্তু তাতে বাধ সাধল বৃষ্টি । ম্যাচে তিনদিন আগে থেকে লাগাতার বৃষ্টিতে ইডেন গার্ডেন্সে তখন এক হাঁটু কাদা । মাঠের অবস্থা দেখে বেঁকে বসলেন কসমসের অফিসিয়ালরা । সাফ জানিয়ে দিলেন, খেলোয়াড়দের পায়ের ইনস্যুরেন্স করা রয়েছে । এই মাঠে কিছুতেই ওদের নামতে দেওয়া যাবে না । আমাদের তো তখন হাতে চাঁদ পেয়েও হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা ।'' পঁয়তাল্লিশ বছর পরেও রীতিমতো গলা কাঁপছে ময়দানি বাদশার ।
আরও পড়ুন : ফুটবল মক্কায় ‘বাদশা’ হয়ে ওঠার কাহিনি, ইটিভি ভারতকে শোনালেন আকবর