কলকাতা, 29 জানুয়ারি: কন্যাশ্রীতে সেরা ইস্টবেঙ্গল। এমএলএ কাপের পরে দ্বিতীয় ট্রফি লাল-হলুদে। তবুও আনন্দধারা নেই সমর্থকদের মধ্যে। কারণ ক্লাবের মূলধারা ট্রফিহীন। আইএসএলের মঞ্চে ইস্টবেঙ্গলজুড়ে অন্ধকার। দোষারোপের পালা। তবে শনিবাসরীয় মেয়েদের ফুটবলে সাফল্যের আলো ফুটতেই বাঁধভাঙা হাসি ইস্টবেঙ্গলে (East Bengal Beat Sreebhumi FC) ।
রেফারি ম্যাচ শেষে বাঁশি বাজাতেই ইস্টবেঙ্গলের জয়ধ্বনীতে ভরে উঠল কিশোরভারতী স্টেডিয়াম। আইএসএলে এই দৃশ্য সহজে চোখে পড়ে না। কিন্তু কন্যাশ্রী কাপে লাল-হলুদের জয় যে কোনওভাবেই বিরল বিষয় নয় (East Bengal Wins Kanyashree Cup)। শনিবার কিশোরভারতী স্টেডিয়ামে কাপ ফাইনালেও সেই জয়ের অভ্যাসে কোনও বদল করলেন না রিম্পা হালদার, মৌসুমী মুর্মুরা। শ্রীভূমি এফসিকে 1-0 গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হল কোচ সুজাতা করের দল। 87 মিনিটে একমাত্র গোল করে জয়ের নায়িকা সুলঞ্জনা রাউল।
কন্যাশ্রী কাপে ইস্টবেঙ্গলের মতো দুরন্ত ফর্মে ছিল শ্রীভূমিও। ফলে লড়াইটা হল সমানে-সমানে। কার্যত ডার্বি। শুরুর দিকে লাল-হলুদের আক্রমণ বেশি হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে শ্রীভূমির তেজ। গোলের সুযোগ ইস্টবেঙ্গল বেশিই পেয়েছিল। কিন্তু পেনাল্টি বক্সে নিজেদের ভুলেই গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন মৌসুমীরা। অন্যদিকে, শ্রীভূমির আক্রমণ সফলভাবে ঠেকালেন রত্না হালদার, অনিতা ওরাওঁরা। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে সতীর্থর বুটের আঘাতে মাথায় চোট পেলেও গোলরক্ষক বুলি সরকার। তবে তাতেও মাঠ ছেড়ে যাননি তিনি। মাথায় ব্যান্ডেজ বেধেই খেলা চালিয়ে গেলেন লাল-হলুদের অধিনায়ক।
হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে একেবারে শেষ মুহূর্তে বাজিমাত মৌসুমীদের
এই হার না-মানা মনোভাবই লাল-হলুদের ইউএসপি। যা মেয়েদের ফুটবলে রয়েছে। ছেলেদের ফুটবলে অদৃশ্য। একটা সময় মনে হচ্ছিল, লিগে গোলের ঝড় তোলা দুই প্রতিপক্ষের কেউই গোল করতে পারবে না। তখনই ভিড় থেকে ছিটকে বের হলেন ছোটখাটো চেহারার সুলঞ্জনা। বছর পনেরোর এই ফরোয়ার্ডের হেড জালে জড়াতেই গ্যালারিতে শুরু হয়ে যায় লাল-হলুদের উৎসব। সেই উৎসব আর থামাতে পারেনি শ্রীভূমি। এই জয়ের সুবাদে আইডব্লুএল বা মেয়েদের জাতীয় লিগে খেলার সুযোগ পাবে ইস্টবেঙ্গল।
সুলঞ্জনার গোলে কন্যাশ্রী কাপ এল লাল-হলুদে
আরও পড়ুন:কন্যাশ্রী কাপের দল ঘোষণা ইমামি ইস্টবেঙ্গলের
জোড়া সাফল্যের পর কোচ সুজাতা বললেন, "দলের সব সদস্যই সেরা। ওদের নিয়েই পরবর্তী লড়াইয়ে নামব। তবে সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে আরও কার্যকর হতে হবে আমাদের।" ম্যাচের সেরা সুলঞ্জনা আবার সাফল্যের জন্য তুলে ধরলেন সকলের অবদানের কথা। তবে রেফারি কণিকা বর্মণের ম্যাচ পরিচালনা নিয়ে সরব ইস্টবেঙ্গল। বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়ে অখুশি। তা সত্ত্বেও জয় পাওয়ায় খুশি। কন্যাশ্রী কাপ ফাইনাল উপলক্ষ্যে চাঁদের হাট বসেছিল কিশোরভারতীতে।
রাজ্যের তিন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, সুজিত বসু ও বিরবাহা হাঁসদা, আইএফএ সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত, সচিব অনির্বাণ দত্ত, দুই সহ সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস ও সৌরভ দত্ত, কাউন্সিলার মিতালী বন্দ্যোপাধ্যায়, অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক-অভিনেতা সোহম-সহ অন্যান্যরা। ম্যাচ শেষে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বললেন, "কন্যাশ্রী কাপ বাংলার মেয়েদের তুলে ধরার মঞ্চ। আমি নিশ্চিত বাংলা থেকে বেশ কয়েকজন মহিলা ফুটবলার জাতীয় দলে খেলবেন। এবার ইস্টবেঙ্গল ও মহামেডান মেয়েদের দল গড়েছে। আশা করছি আগামীতে মোহনবাগানও যোগ দেবে।" অন্যদিকে, মেয়েদের জন্য আরও প্রতিযোগিতা আয়োজনের পক্ষে সওয়াল করেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিনেও আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের ব্যর্থতা নিয়ে হতাশা। কর্তারা দায় নিতে রাজি নন। লগ্নিকারীর কোর্টে বল ঠেলছেন। ফলে কিশোর ভারতীতে জয়ে আনন্দের মাঝে আক্ষেপের চোরাস্রোত একই সঙ্গে।