কলকাতা, 11 জুলাই: অনলাইনে কুস্তির ট্রেনিং ? কথাটা শুনলেই বিস্ময়ে চোখ কপালে ওঠে । অনলাইনে শপিং হতে পারে, পড়াশোনাও হতে পারে ৷ তা বলে কুস্তি ? লকডাউন আর কোরোনা আতঙ্কে সেটাও সম্ভব হয়েছে ৷ সিডনিতে বসে অনলাইনের মাধ্যমে বাংলার কুস্তিগীরদের ট্রেনিং দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক রেসলার অনিরুদ্ধ সাহা ৷
বর্তমানে কোরোনা ভাইরাসের কারণে সবকিছু স্তব্ধ । ক্রীড়াদুনিয়াও তার ব্যতিক্রম নয় । ধীরে ধীরে বল গড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু তাতে বিরাট সাড়া পড়েছে এমন নয় । বেশকিছু খেলা রয়েছে যেখানে দুই প্রতিযোগীর পক্ষে সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব নয় । সেইসব খেলাধুলোর ভবিষ্যৎ কোন পথে গড়াবে তা সবার অজানা । মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মাঠের বাইরে থাকতে বাধ্য হওয়ার অভ্যাস ক্রীড়াবিদদের শুধু শারীরিকভাবে পিছিয়ে দিচ্ছে না, মানসিকভাবে দূর্বল করছে । আর সেই খেলা যদি কুস্তির মত বডি কনট্যাক্ট গেম হয় তাহলে সমস্যা আরও বাড়বে ।
বাংলার কুস্তির হালটা বর্তমানে সিঙ্গল স্ক্রীন সিনেমা হলগুলোর মতো । বেশিরভাগ ক্লাব অস্তাচলে । যে কয়েকটি টিকে রয়েছে তাদের পরিকাঠামো ভাড়ে মা ভবানী । এই অর্ন্তজলী যাত্রার মধ্যেও কুস্তি নিয়ে যাবতীয় উৎসাহ গোয়াবাগানের পঞ্চানন ব্যায়াম সমিতির আখড়ায় । আধুনিক রেসলিং ম্যাট রয়েছে সেখানে । জনা পঞ্চাশ পালোয়ান কুস্তির চর্চা করেন । এরাই বাংলার কুস্তির মুখ। কোরোনা ভাইরাসের কারণে সেই ক্লাবও বন্ধ । ফলে পালোয়ানরা বেকায়দায় পড়েছেন । নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে কুস্তি করতে আসা পালোয়ানদের অবস্থা এখন শোচনীয় । অনেকেই অন্য পেশায় হাত পাকাতে বাধ্য হচ্ছেন । কারণ নিউ নর্মালে কুস্তির ভবিষ্যৎ কোন পথে গড়াবে তা কেউ জানে না । এখান থেকেই বাংলার পালোয়ানদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন অনিরুদ্ধ সাহা এবং তার ইতালিয়ান সহধর্মিণী । বর্তমানে সিডনিতে রয়েছেন অনিরুদ্ধ । সেখান থেকে অনলাইনে বাংলার পালোয়ানদের ট্রেনিং দিচ্ছেন। এই কঠিন সময়ে কি করা উচিত। খেলার সময় কীভাবে পারফরম্যান্স করলে প্রতিপক্ষকে নকআউট করানো যাবে তার প্যাঁচ পয়জার শেখাচ্ছেন অনিরুদ্ধ ।
সিডনি থেকে অনলাইনে ট্রেনিং দিচ্ছেন বাঙালি রেফারি উত্তর কলকাতার পঞ্চানন ব্যায়াম সমিতিতে একসময় কুস্তি করতেন অনিরুদ্ধ । তাঁর পরিবার পাঁচ প্রজন্ম ধরে কুস্তির সঙ্গে জড়িত । একসময় কেডি যাদবের মত অলিম্পিয়ান গোয়াবাগানের সাহা বাড়িতে থেকে এবং পঞ্চানন ব্যায়াম সমিতিতে কুস্তি করে 1948 সালের লন্ডন অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিলেন । বলিউডের সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তীর কুস্তি শিক্ষাও এই আখড়ায় । অনিরুদ্ধর বাবা অসিত সাহা জাতীয় পর্যায়ের কুস্তিগীর ছিলেন । পরবর্তীকালে ভারতীয় দলের কোচের দায়িত্ব সামলেছেন । ইন্টারন্যাশনাল রেসলিং আম্পায়ার হয়েছিলেন । পূর্বসূরিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অনিরুদ্ধ কুস্তির ইন্টারন্যাশনাল আম্পায়ার হয়েছেন ।
কঠিন সময়ে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে ইতিবাচক থেকে তরতাজা থাকার কথা বলছেন অনিরুদ্ধ ৷ তাঁর দেখাদেখি অনলাইন ট্রেনিংকে কাজে লাগিয়েছে SAI । তারাও অনলাইন প্লাটফর্মে কুস্তির পাঠ দিচ্ছে । অনিরুদ্ধ নিজে অস্ট্রেলিয়ার রেসলিং ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত । ফলে কোরোনা ভাইরাস পরবর্তী সময়ে কুস্তিতে কী কী পরিবর্তন হতে চলেছে তা জানতে পারছেন তিনি ৷ যা নিয়ে ইতিমধ্যে বাংলার কুস্তিগীরদের সঙ্গে কথা বলেছেন । একই সঙ্গে জানিয়েছেন টোকিয়ো অলিম্পিক আয়োজন সম্ভব হলে ভারতীয় রেসলারদের সফল হওয়ার সুযোগ রয়েছে । তবে আপাতত তাঁর ভাবনায় শুধুই বাংলার পালোয়ানরা । যাদের পাশে দাঁড়ানোকে ব্রত করেছেন তিনি । সেটা সিডনি থেকে করতে হলেও পিছিয়ে আসেননি তিনি ।