কলকাতা, 14 ফেব্রুয়ারি:প্রেম কত কিছু বদলে দেয় । প্রেম করে বিয়ে করে বনানী হয়েছিলেন আতিয়া বেগম। ডাক নাম ছিল ঝুমু । কাছের মানুষ জন তাঁকে ডাকতেন ওই নামে । পঞ্চাশ বছর আগে উত্তর কলকাতার বনানী কিন্তু প্রেমের টানে পালটে ফেলেছিলেন ধর্ম । তাঁর স্বামী বা তিনি নিজে কোনওদিন এই ব্যাপারে আলোচনা চাইতেন না । একেবারে গোঁড়া মুসলিম, স্বল্প কথার মানুষ সৈয়দ নইমুদ্দিন কীভাবে বাঙালি মেয়ে বনানীর সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন তা আলোচনার বিষয় ।
1966 সালে নিজামের শহর থেকে কলকাতায় খেলতে এসেছিলেন নইম । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে অনুশীলন করতেন । সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে ফুটবলে প্রতিনিধিত্ব করতেন । সেখান থেকেই দুজনের ভালোলাগা এবং ভালোবাসা। কাছের মানুষরা বলেন, শৃঙ্খলার ঘেরাটোপে থাকতে ভালোবাসা নইমুদ্দিনকে আরও বেশি কেতাদুরস্ত করে তুলেছিলেন তাঁর স্ত্রী । একদা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বনানী তাঁর ভালোবাসার মানুষকে সাফল্যের রাজপথে হাঁটতে দিয়ে নিজেকে কার্যত স্বেচ্ছাবন্দি করে রেখেছিলেন ।
কোভিড অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে । নইম-বনানীর সংসার ভেঙে দিয়েছে মারণ ভাইরাস । দুরুদুরু বুকে ফুটবলের প্রথম দ্রোণাচার্যকে ফোন করেছিলাম বিশ্বজোড়া প্রেম দিবসের আগে । "এত কিছু থাকতে এই ব্যাপারে আমাকে ফোন করলেন কেন ? আমি আগ্রহী নই," সামান্য নীরবতার পরে ফের দ্রোণাচার্যের গলায় প্রয়াত প্রিয় মানুষটির জন্য হাহাকার । "আমাকে বুঝে চলতে পারত । সবকিছু মেনে নিয়ে সংসারটা আগলে রাখত । কীভাবে এখন থাকছি তা উপরওয়ালা জানেন । এই একাকীত্ব কষ্টদায়ক, সহ্য করা যায় না ।"
ফুটবল পরিসংখ্যানবিদ এবং ঐতিহাসিক কুশল চক্রবর্তী বলছিলেন,"কলকাতা ময়দান বড় বিচিত্র দুনিয়া । কলকাতা শহরের একটুকরো ফুসফুসে কত মানুষ কীভাবে শ্বাস খুঁজে পান, তা খুঁজলে একটা এনসাইক্লোপিডিয়া হয়ে যাবে । যেখানে ধর্মের সীমা-না মেনে হৃদয়ের ডাকে সাড়া দেয় সবাই । আল্লা ভগবানের সহাবস্থানের এমন নজির বোধহয় বর্তমান রাম রহিমের ভারতবর্ষে বড় দরকার ।"
ভারতীয় ফুটবলের যাদুকর আমেদ খানের স্বপ্নের রানি ছিলেন মেডিক্যাল কলেজের নার্স অঞ্জলি । চোটের শুশ্রূষা করাতে গিয়ে দুজনের প্রেমের সুত্রপাত । প্রেমিকাকে ডার্বির টিকিট দিয়েছিলেন আমেদ । ওই ম্যাচে মোহনবাগানের অনির দে-র সঙ্গে মারপিট করেছিলেন তিনি । গ্যালারিতে বসে সেই সব দৃশ্য দেখেছিলেন অঞ্জলি । তবে সে দিনের ঘটনা আমেদ-অঞ্জলির প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি । বেঙ্গালুরুতে সংসার পেতেছিলেন ওঁরা।
এই শহরে খেলতে এসে বাঙালি মেয়ে বিয়ে করেছেন আরও অনেকে । ফুটবলারদের মধ্যে প্রয়াত পুঙ্গম কান্নন, ভেঙ্কটেশ, কিংবা উলগানাথন, রামন বিজয়ন সকলেই বাঙালি মেয়ের পানিগ্রহণ করেছিলেন এবং তা চুটিয়ে প্রেম করার পরে ।
এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়ার । কথাটা আরও বেশি করে কানে বাজে কলকাতা ময়দানের ক্রীড়াদুনিয়ার প্রেমপর্বের দিকে তাকালে ।
আরও পড়ুন: প্রেমের দিনে উত্তাপ বাড়াবে সুয্য়িমামাও!