পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / sports

শেষ বেলায় ফেরা হল না প্রিয় ক্লাবে, নিমতলা ঘাটে শেষকৃত্য কিংবদন্তি ফুটবলারের - কৃষানু দের মৃত্যু দিন

গত 7 ফেব্রুয়ারি থেকে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি ছিলেন প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে পিকে ব্যানার্জি ৷ শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি ৷ তাঁর চিকিৎসক জানিয়েছেন ভরতি হওয়ার পর কোনও দিনই ভেন্টিলেশনের বাইরে আসার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি ৷ শুক্রবার দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রবাদপ্রতিম ফুটবলার ৷ তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হল ভারতীয় ফুটবলের এক মহাকাব্যের ৷

image
নিভে গেল ময়দানের প্রদীপ

By

Published : Mar 20, 2020, 11:43 PM IST

কলকাতা, 20 মার্চ : আজ ছিল কৃশানু দে'র মৃত্যু দিন । একই দিনে নিভে গেল ময়দানের প্রদীপ । একমাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে ভরতি থাকার পর আজ দুপুর 2 টো বেজে 8 মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ শোকের ছায়া নেমে এল বাংলার ক্রীড়াজগতে ৷

গত 7 ফেব্রুয়ারি থেকে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি ছিলেন প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে পিকে ব্যানার্জি ৷ তবে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের ভেন্টিলেশনেই ছিলেন তিনি ৷ তাঁর চিকিৎসক জানিয়েছেন ভরতি হওয়ার পর কোনওদিনই ভেন্টিলেশনের বাইরে আসার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি ৷ শুক্রবার দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রবাদপ্রতিম ফুটবলার ৷ তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হল ভারতীয় ফুটবলের মহাকাব্যের ৷

অসাধারণ ফুটবলার, কৌশলী কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সমসাময়িকদের কাছে ছিলেন প্রকৃত অর্থেই নায়ক ৷ তাঁর অধীনে খেলা ফুটবলারদের কাছে পিকে ছিলেন মহাগুরু ৷ শুক্রবার তাঁর শারীরিক অবস্থা অতিসংকটজনক, খবর ছড়িয়ে পড়তেই বাইপাসের ধারে বেসরকারি হাসপাতালে ভিড় করতে শুরু করেছিলেন মন্ত্রী, ফুটবলার সহ সমাজের বহু বিশিষ্টজন ৷

দাদা চলে যাওয়ার খবর পেতেই সাংসদ ভাই প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় দাদার মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন৷ দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর গলাতেও স্বজন হারানোর বেদনা ৷ মহানাগরিক ববি হাকিমের কাছেও ভারতীয় ফুটবলের কোহিনুর হারানোর যন্ত্রণা ৷ লক্ষ্মীরতন শুক্লার কাছে প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তি ৷ বাংলার রণজি ট্রফি জয়ী দলের অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে বিখ্যাত ভোকাল টনিকের গল্প ৷ প্রাক্তন ফুটবলার সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সুকুমার সমাজপতি, বিদেশ বসু, শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়, অলোক মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণেন্দু রায়, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়দের কাছে প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু দ্বিতীয় বার পিতৃ হারানোর সমান৷ প্রত্যকেই একমত ফুটবলারদের কাছ থেকে সেরাটা আদায় করে নেওয়ার অসাধারণ কৌশল প্রদীপ দা জানতেন ৷ সোমেন মিত্র, সূর্যকান্ত মিশ্ররাও গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন ময়দানের কিংবদন্তির প্রয়াণে ৷

কোরোনা আতঙ্ক প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ময়দানে ফিরতে দিল না ৷ বিদায়বেলায় তাই পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় স্পর্শ করতে পারলেন না কলকাতার তিন প্রধান ক্লাবের মাটি ৷ চিরকালীন বাগ্মী, আমুদে, আড্ডাবাজ মানুষটি ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিশেষ বন্ধু ৷ মহানায়ক উত্তমকুমারের সঙ্গেও ছিল তাঁর বিশেষ সখ্যতা ৷ ঘরোয়া আড্ডায় সচিন কর্তার গান শোনাতেন দরাজ গলায় ৷ রবীন্দ্র সংগীত ছিল তাঁর বিশেষ প্রিয় ৷ পরিবারের সদস্যদের বলেছিলেন তাঁর শেষকৃত্য যেন নিমতলা শ্মশানে করা হয় ৷ কারণ সেখানে তাঁর প্রিয় রবি ঠাকুর শুয়ে আছেন ৷

বিকাল 5টা শববাহী শকটে চেপে প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিথর দেহ পৌঁছায় তাঁর বিধাননগরের বাড়িতে ৷ শেষবারের মতো তিনি বাড়িতে প্রবেশ করলেন ৷ কিন্তু শোনা যায়নি পরিচিত গমগমে স্বর বরং অচেনা প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে বাড়িটাও যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ৷ এরপর 7টার সময় তাঁর নিথর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় নিমতলা মহাশ্মশানের উদ্দেশ্যে ৷ শ্মশানে হাজির ছিলেন শহরের বহু ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ৷ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজির ছিলেন দাবাড়ু দিব্যেন্দু বড়ুয়া, মহিলা ফুটবলার কুন্তলা ঘোষদস্তিদার প্রমুখরা ৷

নিমতলা ঘাটে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ও গ্যান স্যালুটে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় পদ্মশ্রী পিকে'কে ৷ সেখানেই হাজির ছিলেন কলকাতার দুই প্রধান ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের প্রতিনিধিরা ৷ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ক্রীড়াজগৎ ৷ সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, অভিষেক ডালমিয়ারা টুইট করে শোকবার্তা পাঠান ৷ AIFF সভাপতি প্রফুল্ল প্যাটেলও টুইটে শোক প্রকাশ করেন ৷ শোকপ্রকাশ করেন বলিউড অভিনেতা অজয় দেবগণ ৷ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও ৷ রাজ্যপালের কথায় প্রদীপের মৃত্যু এক মহীরূহের পতন ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details