কলকাতা, 16 জুলাই: মিঠুন চক্রবর্তী বলেছিলেন, একজন অভিনেতার জাত চেনাতে একটি ছবিই যথেষ্ট । বলিউড তারকার এই কথাগুলোর রেশ ধরেই বসিরহাটের নাজিমুল হক বলছেন, 1997 সালের 13 জুলাই ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনাল ম্যাচের একটি গোল তাঁকে ময়দানে পরিচিত করার জন্য যথেষ্ট ছিল ।
নাজিমুল হক মানেই ডায়মন্ড ডার্বির বিখ্যাত গোল । অমল দত্তের বিখ্যাত ডায়মন্ড সিস্টেম সেদিন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের এক লাখ 31 হাজার 732 জন দর্শকের সামনে ভেঙে পড়েছিল । হিরের দর্পচূর্ণ হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের 4-1 গোলের রোলার কোস্টারে । সেই ম্যাচে বাইচুংয়ের হ্যাটট্রিক ইতিহাসে জায়গা নিয়েছে । কিন্তু প্রথম গোলটি এসেছিল নাজিমুল হকের বাঁ পায়ে ভলিতে । 23 বছর পরও সেই ম্যাচের কথা উঠলে মনে হয় এইতো সেদিনের ঘটনা । দর্পচূর্ণের সোনালি বিকেলের সহনায়ক নাজিমুল হক পরবর্তী সময়ে তিন প্রধানে দাপিয়ে খেলেছেন । মহমেডানের জার্সি পরে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ম্যাকডাওয়েল কাপের সেমিফাইনালে হ্যাটট্রিক রয়েছে তাঁর । কিন্তু নাজিমুলের কোনও কৃতিত্বই ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালের গৌরবকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি ৷
দরিদ্র পরিবারের ছয় সন্তানের মধ্যে সবার ছোট নাজিমুল । বিবিপুর স্কুলে পড়াশোনা শুরু করলেও প্রথম থেকেই ফুটবলের প্রতি আকর্ষণ ছিল তাঁর । পারিবারিক কারণে বিবিপুর স্কুলের হেডস্যার অহিভূষণ মণ্ডল নাজিমুলকে পাঠিয়ে দেন সেন্ট্রাল কলকাতার একটি অনাথ আশ্রমে । কিছুদিনের মধ্যে সেখানেও ফুটবল পায়ে নজর কাড়তে থাকেন নাজিমুল । পটুয়াতলা বয়েজ ক্লাবের হয়ে খেলে সাফল্য পাওয়ার পাশাপাশি পড়াশোনাতেও উন্নতি হতে থাকে । কিন্তু সমস্যা যেন পিছু ছাড়তে চাইছিল না নাজমুলের । অনাথ আশ্রমে নির্যাতনের শিকার হন সিনিয়র দাদাদের কাছে । প্রথম দিকে বিষয়টি সহ্য করলেও সমস্যা কমার পরিবর্তে বাড়তে থাকে । কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ জানালেও লাভ হয়নি । উলটে শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় কার্যত প্রাণ বাঁচাতেই আশ্রম ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছিলেন । বাড়িতে দারিদ্র তাই ঘুরতে ঘুরতে একদিন চিৎপুরের ফুটপাতে আশ্রয় হয় নাজিমুলের । প্রায় দশদিন এক পোশাকে পথের ধারে পড়েছিলেন । কিন্তু উপায় না দেখে একদিন বাড়ি ফিরতেই হল ৷ ভরতি হলেন বিবিপুরের অবৈতনিক স্কুলে । এবার নাজিমুল নজরে পড়লেন স্কুল শিক্ষিকা কল্যাণী চক্রবর্তীর । তাঁর এক পরিচিত ছিলেন সংবাদ মাধ্যমের যুক্ত । তাঁর হাত ধরেই কলকাতা ময়দানে পা পড়ে নাজিমুলের । এখান থেকেই নাজিমুলের জীবনের মোড় ঘুরে যায় ৷