কলকাতা, 27 অগাস্ট : ইস্টবেঙ্গল মানেই ওপার বাংলা থেকে শরণার্থী হয়ে আসা মানুষের জীবন সংগ্রামের মেঠো ছবি । ইস্টবেঙ্গল মানে কাঁটাতারের মনখারাপের খোঁচা । সাড়ম্বরে 100 বছর পালন করছে ইস্টবেঙ্গল । ইতিমধ্যেই বিশিষ্টদের সংবর্ধনা, প্রাক্তনদের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে ক্লাবের তরফে ৷
প্রকাশিত হয়েছে ক্লাবের অফিসিয়াল থিম সং । যেখানে "স্পর্ধার শতবর্ষ"-র কথা উল্লেখ করা হয়েছে ৷ যেখানে রয়েছে ছিন্নমূল প্রসঙ্গ । কিন্তু ক্রীড়া ইতিহাসবিদরা ইস্টবেঙ্গলকে শুধুমাত্র শরণার্থী মানুষের জীবন সংগ্রামের মেঠো মঞ্চ বলতে রাজি নন । এমনকি তারা শরণার্থীদের স্বপ্নপূরণের দাবিকে স্বীকৃতি দিতে রাজি নন । তাঁরা লাল-হলুদ ক্লাবের সঙ্গে ওপার বাংলার সম্পর্কও মানতে রাজি নন।
ইতিহাসবিদদের মত, কুমারটুলি পার্কের জমিদার বাড়ি থেকে ইস্টবেঙ্গলের যাত্রা শুরু ৷ তৎকালীন ফুটবল কর্তাদের মতানৈক্যের ফসল এই ক্লাব । সেইসময়ের ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষকর্তা সারদারঞ্জন রায় ও তাঁদের পরিবারের ভূমিকাকে তারা অন্যভাবে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান ।
তখন কলকাতা থেকে ঢাকা অবধি একটি ফেরি সার্ভিস ছিল রায় পরিবারের৷ যার নাম ছিল ইস্টবেঙ্গল ফেরি সার্ভিস । ক্রীড়া ইতিহাসবিদ শুভ্রাংশু রায় বলছেন ক্লাবের নাম তৈরির পেছনে হয়ত রায় পরিবারের অবদান রয়েছে । যা ইস্টবেঙ্গলের শতবর্ষে অবশ্যই প্রাসঙ্গিক ।
শুভ্রাংশু রায়ের মত, 1920 সালে যখন ইস্টবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠা , সেসময় ভারতবর্ষ অবিভক্ত । 1933 সালে ইস্টবেঙ্গল কলকাতা লিগ জয়ের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিল । তাদের লড়াই প্রশংসা কুড়িয়েছিল সমাজের সর্বস্তরের । 1942 সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বছরে ইস্টবেঙ্গলের প্রথম কলকাতা লিগ জয় ।
লিগ জয়ের সাক্ষী থাকতে শহরের প্রচুর মানুষ মাঠে ভিড় জমিয়ে ছিলেন মাঠে । লিগ জয়ের পর অভিনন্দনের স্রোতে ভেসে গিয়েছিল সেদিনের লাল হলুদ ফুটবলাররা । শুভ্রাংশু বলছেন সেদিনের সাফল্যে দেশভাগের গন্ধ ছিল না । কাঁটাতার পেরোনোর সংগ্রামও ছিল না । তাই ইস্টবেঙ্গল মানে ওপার বাংলার ক্লাব নয় ।
তাহলে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে কীভাবে জড়িয়ে গেল কাঁটাতার,ওপার বাংলার নাম? শুভ্রাংশু বলছেন, "প্রাক স্বাধীনতা পর্বে বেঙ্গল প্রভিন্সের দুটো উল্লেখযোগ্য শহর ছিল কলকাতা ও ঢাকা । দুটো শহর তখন বঙ্গ সংস্কৃতি, শিল্প, শিক্ষা,বাণিজ্যর কেন্দ্র ৷ শুধু তাই নয় দেশীয় আঙ্গিকে এই দুই শহরের গুরুত্ব অপরিসীম । সেসময় শিয়ালদহ রেল স্টেশন থেকে খুলনা-যশোর পর্যন্ত নিয়মিত ট্রেন চলত । খুলনা , যশোরের মানুষ জীবন জীবিকার টানে নিয়মিত রেলপথে কলকাতাতে আসতেন ও ফিরে যেতেন । তাই অধুনা ওপার বাংলার সঙ্গে এই শহরের জীবনের সঙ্গে মিশে ছিল । "
বাঙাল-ঘটি শব্দদুটির মধ্যে বঙ্গ সমাজের অবদান রয়েছে বলে মনে করেন না ক্রীড়া ঐতিহাসিক শুভ্রাংশু রায় । দৃঢ়ভাবে তিনি জানিয়েছেন এই শব্দদুটো কলকাতার মেস সংস্কৃতির অবদান । এটি সৃষ্টি হয়েছিল ওড়িশার থেকে আসা রাঁধুনির ভুল উচ্চারণে । বাঙাল-ঘটির লড়াই পরবর্তী সময়ে বাঙালিকরণ হয়েছে । ইস্টবেঙ্গল চিরকাল ভালো মানের বিদেশি ফুটবলার নিয়ে খেলেছে । শতবর্ষে মজিদ বিসকার নিয়ে মাতামাতি চললেও আরেক জন মজিদ লাল হলুদ জার্সিতে মাঠ মাতিয়ে ছিলেন । 1933 সালে পাকিস্তান থেকে খেলতে আসা পাক স্ট্রাইকারের নাম ছিল মজিদ । তিনবছর লাল হলুদ জার্সি পড়ে খেলে একাধিক ম্যাচ জিতিয়েছিলেন তিনি ৷
শুভ্রাংশু রায়ের মত, ''ইস্টবেঙ্গল মানেই পদ্মাপারের ক্লাব এমনটা মোটেই নয় ৷ ইস্টবেঙ্গল উত্তর কলকাতার একটি ক্লাব, ঠিক মোহনবাগানের মতোই ৷''