কলকাতা, 3 মার্চ : ভারতীয় ফুটবলের দুই হুজুরের গল্প । খেলোয়াড়ি জীবনে পারস্পরিক স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতায় দেশের ফুটবলকে উজ্জ্বল করেছিলেন । ক্লাব ফুটবলে এনেছিলেন সোনা ঝরা বিকেল । মাঠের বাইরে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে অনেক কথা শোনা যেত । তার সত্যতা কতটা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে । তবে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ছিল অটুট । প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে চুনী গোস্বামী ডাকতেন বাঁড়ুজ্জে বলে । আর প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ক তাঁর অধিনায়ককে ডাকতেন গোঁসাই বলে । ভারতীয় ফুটবলের দুই মহারথী মাঠের বাইরে ছিলেন আড্ডাবাজ, সঙ্গীত প্রিয় ব্যক্তিত্ব । তাঁদের অন্তিম যাত্রার ব্যবধান মাত্র একমাসের । করোনা ভাইরাসের পূর্ণ গ্রাসের কয়েকদিন আগে প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় পরলোকে যাত্রা করেছিলেন । চুনী গোস্বামী তাঁকে অনুসরন করেন একমাসের মধ্যেই । সেই সময় অতিমারির প্রকোপে ঘরবন্দী ছিল মানুষ ।
ভারতীয় ফুটবলের দুই মহাতারকার শ্রদ্ধাবাসর একবছর পরে হলেও আয়োজন করেছিল মোহনবাগান ক্লাব । দুই হুজুরের শ্রদ্ধাবাসরে উপস্থিত এদেশের ফুটবলের একাল সেকাল । প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় খেলোয়াড়ি জীবনের বাইরেও ছিলেন তারকা কোচ । তাই তাঁর শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানে প্রিয় শিষ্যদের আবশ্যিক আগমন ছিল। সবুজ মেরুন জার্সিতে 1976 সালের দাপুটে একাদশের হাবিব, আকবর, সুভাষ ভৌমিক, সুব্রত ভট্টাচার্য, প্রদীপ চৌধুরী, কম্পটন দত্ত, গৌতম সরকার, প্রসুন বন্দ্যোপাধ্যায়রা স্মৃতির সরণিতে হাঁটলেন । তাদের গল্পে ফিরল ম্যানেজমেন্ট পটু পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় । এবং তার অব্যর্থ ভোকাল টনিকের গল্প ।
আরও পড়ুন :আইএসএলের ব্যর্থ দলের ট্র্যাজিক হিরো কারা ?
চুনী গোস্বামীর ক্যারিশমার কথাও শোনা গেল তাঁদের মুখে । সেই সময় ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিসের সর্বোচ্চ পর্যায়ের তাঁর পারফরম্যান্স করার গল্প এবং তার সামাজিক প্রভাবের কথা শোনালেন সেদিনের ফুটবলাররা । পরবর্তী সময়ের মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, অলোক মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণেন্দু রায়, তারও পরে গৌতম ঘোষ, বাইচুং ভুটিয়ারা শোনালেন দুই কিংবদন্তির ফুটবল ব্যক্তিত্বে মোহিত হওয়ার কথা । জানালেন ম্যান ম্যানেজমেন্টের কুশলতার কথা । গানে গল্পে বুধবারের বিকেলের মোহনবাগান তাঁবুর লনে রণজি জয়ী ক্রিকেট অধিনায়ক জানালেন তাঁদের সেরা হওয়ার নেপথ্যে প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোকাল টনিকের অবদান ।
মোহনবাগান ক্লাবের পক্ষ থেকে পিকে, চুনীকে শ্রদ্ধার্ঘ্য চাঁদা না দেওয়ার জন্য একদিন চুনী গোস্বামীর সদস্য পদ খারিজ করে দিয়েছিল মোহনবাগান ক্লাব কর্তৃপক্ষ ৷ সেই সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল তা মানলেন মোহনবাগানের ক্লাব কর্তারা । বর্তমান সচিব সৃঞ্জয় বসু ক্লাবের প্রবেশদ্বার চুনী গোস্বামীর নামে নামাঙ্কিত করার কথা ঘোষণা করেন । ক্লাবের নবনির্মিত জিমন্যাশিয়ামের নাম পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে হবে তা ঘোষিত হল সচিবের মাধ্যমে । ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার শোনালেন দুই ফুটবল ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কের কথা ।
বাঁড়ুজ্জে আর গোঁসাইয়ের গল্পে ময়দানে ফিরল সোনালি বিকেলে আরও পড়ুন : অবিস্মরণীয় দিন ! করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার পর প্রতিক্রিয়া পেলের
মোহনবাগানের সংগ্রহশালায় চুনী গোস্বামীর পরিবার তুলে দিল কিংবদন্তীর ব্যবহৃত সবুজ মেরুন জার্সি এবং মোজা । প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার তুলে দিল ভারতীয় দলের ব্লেজার । প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধ্যাপক কন্যা পলা বন্দ্যোপাধ্যায় শোনালেন ফুটবল গুরু পিকের ছাত্রদের আগলে রাখার গল্প । চুনী গোস্বামী জায়া বাসন্তী গোস্বামী শোনালেন তাঁর মোহনবাগান মাঠে এসে খেলা দেখা এবং সচিব ধীরেন দের নির্দেশে পার্ক স্ট্রীটে ডিনার বাতিলের গল্প ।
বাঁড়ুজ্জে এবং গোঁসাইয়ের আকর্ষণে ময়দানের মিলল এক ছাতার তলায় ।