কলকাতা, 18 অক্টোবর : ম্যান অব দ্য ম্যাচ, ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট, শীর্ষ গোলদাতা- সাফ কাপে তিনটি পুরস্কারই ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর দখলে ৷ আটবার সাফ কাপ ঘরে তোলার দিনে সুনীল ছটায় ভারতীয় ফুটবল আলোকময় ৷ মালদ্বীপের মালেতে হতাশাজনক পারফরমেন্স দিয়ে সাফ কাপ অভিযান শুরু করার পর পোডিয়াম ফিনিশ মেন ইন ব্লু’র ৷ প্রথম ম্যাচে সতীর্থদের পারফরমেন্স নিয়ে হতাশা প্রকাশ করা অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী, আজ দলের পারফরমেন্স নিয়ে গর্বিত ৷ কিন্তু, সাজঘরে দলকে তাতিয়ে তুলতে অধিনায়কই ব্যাটনটা তুলে নিয়েছিলেন ৷ মাঠে পারফরম্যান্স করে বাকিদের সামনে উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন ৷ সাঁইত্রিশ বছর বয়সেও সুনীল ছেত্রীর দুরন্ত পারফরমেন্সে মুগ্ধ সুব্রত, মনোরঞ্জন, শিশিরের মতো ভারতীয় ফুটবলের প্রাক্তনরা ৷
সুব্রত ভট্টাচার্য--
ব্যক্তিগত এবং ফুটবল মাঠ দুটো জায়গা থেকে সুনীলকে দেখেছি ৷ একজন ফুটবলার, কোচ হিসেবে জানি এই বয়সে এই মানের পারফরমেন্স করা কতটা চ্যালেঞ্জের ৷ সাফ কাপে অধিনায়ক হিসেবে পুরো দলটাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিল ৷ এটাই একজন অধিনায়কের কাজ ৷ যা পুরো দলকে তাতিয়ে দেয় ৷ ফাইনালে বিরতির আগে রাশ পায়ে নিলেও গোল পায়নি ভারত ৷ বিরতির পরে দলের প্রথম গোল সুনীলের ৷ একজন ডিফেন্ডারকে ঘাড়ের ওপর নিয়েও ঠাণ্ডা মাথায় বল জালে রাখল ৷ সত্যিই চ্যাম্পিয়ন ৷ তবে, সুনীলের পর কে ? এই প্রশ্নটা উঠেছে ৷ প্রশ্নটা কিন্তু ভেবে দেখার ৷ নতুন স্ট্রাইকার তুলে নিয়ে আসার ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে হবে ৷ মনবীর ভাল খেলছে ৷ লিস্টন, কোলাসোরা উঠছে ৷ তবুও, সুনীলের উত্তরসূরি পাওয়া এত সহজে সম্ভব নয় ৷
আরও পড়ুন : Sunil Chhetri: সতীর্থদের পরিশ্রমেই কাপ জয় সম্ভব হয়েছে, প্রশংসা সুনীলের
মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য--
সুনীল সত্যিই চমকে দিচ্ছে ৷ যত দিন যাচ্ছে ততই পরিণত হয়ে উঠেছে ৷ তাড়াহুড়ো নয়, প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের ভুলের অপেক্ষায় থেকে তা কাজে লাগানো যেকোনও ভালো স্ট্রাইকারের গুন ৷ সুনীল কিন্তু সেটাই করে চলেছে এবং তাঁর গোল করার ক্ষমতার কারণেই বিশ্ব ফুটবলের সেরা গোলদাতাদের তালিকায় উপরের দিকে জায়গা করে নিয়েছে ৷ টুর্নামেন্ট, ম্যাচের সেরার পুরস্কার, সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া, ওর ধারাবাহিক ভাল খেলার পুরস্কার ৷ প্রতিটি টুর্নামেন্টে দেশের হয়ে খেলার সময় একটা অদৃশ্য জাত্যাভিমান ওর মধ্যে কাজ করে ৷ তাই ভারতীয় ফুটবলে সুনীল সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন ৷ তবে, ওর পর কে এই প্রশ্নটা সত্যিই চিন্তার ৷ কারণ বিজয়ন, বাইচুংয়ের পরে সুনীল উঠে আসলেও বর্তমানে ছবিটা আশার দেখাচ্ছে না ৷
আরও পড়ুন : Calcutta Football League : কলকাতা ফুটবল লিগের ম্যাচ ঘিরে অনিশ্চয়তা
শিশির ঘোষ--
আমি নিজে স্ট্রাইকার ছিলাম ৷ সুনীলকে দেখে চমকে যাচ্ছি, মুগ্ধ হচ্ছি ৷ বয়স যত বাড়ছে, তত ধার বাড়ছে সুনীলের খেলায় ৷ কখন স্পিড বাড়াতে হবে, নিজেকে ব্যবহার করতে হবে সবকিছু অঙ্ক কষে করছে ৷ প্রতিপক্ষকে মেপে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ৷ সেই মতো নিজের খেলায় পরিস্থিতি অনুযায়ী মেলে ধরছে ৷ ফাইনালে গোল করার সময় দেখলাম একটু দেরিতে দৌড় শুরু করে নেপালের ডিফেন্ডারদের এড়ালো ৷ যখন প্রতিপক্ষ বুঝতে পেরেছে ততক্ষণে গোল করার জায়গায় সুনীল পৌঁছে গিয়েছে ৷ তাই এই সাফ কাপ সুনীলের ৷
অলোক মুখোপাধ্যায়--
সুনীলকে প্রথম দিন থেকে দেখছি ৷ ময়দানে যখন খেলতে এলো তখন বাচ্চা ছেলে ৷ বাইচুংয়ের আড়ালে হারিয়ে যাওয়া নয়, বরং শিখে নিয়েছে ৷ ফলে বিজয়ন, বাইচুংয়ের পরে দলের নেতৃত্বের ব্যাটন ওর হাতে ৷ গোলটা চেনে ৷ এই ধরনের ফুটবলারদের সামান্য সুযোগ দিলেই বাজি মেরে দেওয়ার আশঙ্কা থাকে ৷ ফাইনালে সেটাই হল ৷ তবে সুনীলের ফিটনেস আমাকে মুগ্ধ করছে ৷ বয়স হয়েছে, প্রতিপক্ষকে মেপে নিজেকে সেইভাবে মেলে ধরার ক্ষমতা হয়েছে ৷ তবে, ওর পরে কে বা সুনীলের উত্তরসূরিকে এই প্রশ্নটা এখন বড় হয়ে উঠছে ৷