কলকাতা, 16 ফেব্রুয়ারি: আটচল্লিশ মিনিটের ঝোড়ো বোলিং জয়দেব উনাদকট এবং চেতন সাকারিয়ার। তাতেই রঞ্জি ট্রফি ফাইনালের প্রথম দিনে বেকায়দায় বাংলা । শাহবাজ আহমেদের 69 বিপর্যয়ের ধ্বংসস্তুপে জ্বলজ্বল করলেও স্বস্তিতে নেই মনোজ তিওয়ারি অ্যান্ড কোম্পানি । তেত্রিশ বছর পর ফের ঘরের মাঠে ট্রফি ফেরানোর হাতছানি । তারমধ্যেই প্রথম ইনিংসে মাত্র 174 রানে ফুরিয়ে গেল বাংলা (Bengal borad 174 runs in First Innings of Ranji Trophy) ।
প্রত্যুত্তরে ব্যাট করতে নেমে সৌরাষ্ট্র দিনের শেষে 2 উইকেট হারিয়ে 81। জয় গোহিল ব্যক্তিগত 6 রানে আকাশদীপের বলে ফিরে গিয়েছেন । বিশ্বরাজ জাদেজাকে 25 রানে ফিরিয়েছেন মুকেশ কুমার । উইকেটে রয়েছেন হার্ভিক দেশাই (37) এবং 'নৈশপ্রহরী' চেতন সাকারিয়া (2) । বাংলার পেসাররাও দাপট দেখাচ্ছেন। দ্বিতীয় দিনের সকালে ব্যাটিং ব্যর্থতা ভুলে বল হাতে শক্ত চ্যালেঞ্জ ছোড়ার বার্তা দিচ্ছেন বাংলার বোলাররা (Sourashtra trail by 93 runs)।
'জয় যাত্রায় যাও গো', এই বার্তায় লক্ষ্মীবারের সকালটা শুরু হয়েছিল। সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ইডেনের বেল বেজে বল গড়ানোর সংকেত, শেষ রঞ্জি ট্রফি জয়ী দলের সদস্যদের উপস্থিতিতে ইডেনে উৎসবের আবহ। নবদ্বীপ থেকে বাংলাকে সমর্থন করতে ছুটে আসেন অশোক চক্রবর্তী । 23 বছর ধরে তিনি ইডেনে আসছেন । ক্লাব হাউজের লোয়ার টায়ারে বসে শঙ্খ বাজিয়ে বাংলাকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু যাদের নিয়ে উৎসব, অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা তাঁরাই তো বিপর্যয়ে ।
সকালে টস জিতে সৌরাষ্ট্র অধিনায়ক জয়দেব উনাদকাট বাংলাকে ব্যাট করতে পাঠান । সবুজ উইকেটে সৌরাষ্ট্রের দুই বাঁ-হাতি পেসার অধিনায়ক উনাদকাট এবং চেতন সাকারিয়া বাংলাকে দুঃস্বপ্ন উপহার দিলেন । রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে বাংলার জার্সিতে অভিষেক হল সুমন্ত গুপ্তর । কিন্তু অভিমন্যু ঈশ্বরণের সঙ্গে ইনিংস শুরু করতে নেমে ব্যক্তিগত এক রানে ফিরলেন তিনি। তার আগে দিনের প্রথম ওভারেই চার বল খেলে ব্যক্তিগত শূন্য রানে ফিরে যান অভিমন্যু ঈশ্বরণ। এইসময় 2 রানে দুই ওপেনার চলে যাওয়ার সঙ্গেই আশংকার কালো মেঘ জমতে শুরু করেছিল । মনে করা হয়েছিল, ওপেনারদের ব্যর্থতা মিডল-অর্ডার ব্যাটাররা থামিয়ে দেবেন । কিন্তু চেতন সাকারিয়ার দুরন্ত ইন-সুইংগারে ফিরে যান সুদীপ ঘরামি (0) ।
দলের বিপর্যয় সামলাতে মনোজ তিওয়ারি এবং অনুস্টুপ মজুমদার নামলেও উনাদকাট, চেতন সাকারিয়ারা আগুন ঝরালেন । নির্দিষ্ট লাইন এবং সবুজ পিচের আর্দ্রতাকে কাজে লাগিয়ে বিধ্বংসী বোলিং করে গেলেন জুটিতে । দুই বাঁ-হাতির দাপটের সামনে সংযমী ব্যাটিংয়ের প্রয়োজন ছিল । মনোজ তিওয়ারি, অনুস্টুপ মজুমদার সেটাই করছিলেন । এই সময় পরিস্থিতি কঠিন হলেও বোধহয় দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটারদ্বয় সামলে দেবেন । কিন্তু মনোজ (7) কঠিন সময়ে উনাদকাটের পাঁচ নম্বর স্ট্যাম্পের বলকে ড্রাইভ করতে গিয়ে গালিতে ধরা পড়েন । সহজভাবে বললে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এলেন বাংলার অধিনায়ক ।
পরিস্থিতি কঠিন হওয়ার সঙ্গে চওড়া হয় অনুষ্টুপের ব্যাট । অতীতে সেটাই ছিল পরিচিত ছবি । সোমবার ইডেনে 34টি বলে ছিল অনুষ্টুপের লড়াকু মানসিকতার ছাপ । কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত 16 রানে চিরাগ জানির বলে ধরা পড়ে যান বাংলার ব্যাটিংয়ের নীরব সাধক । 34 রানে 5 ব্যাটারকে হারায় বাংলা । এই অবস্থায় বিপর্যয় আরও কঠিনভাবে আছড়ে পড়ত যদি আকাশ ঘটক এবং অভিষেক পোড়েলকে সঙ্গে করে মরিয়া লড়াই না-ছুঁড়ে দিতেন শাহবাজ আহমেদ । প্রতিপক্ষের আগুনে বোলিং সামলে 69 রান বাংলার 174 রানের ইনিংসের মূল স্তম্ভ, যা সাজানো 11টি বাউন্ডারিতে । অভিষেক পোড়েলের 50 রান শাহবাজের লড়াকু 69-এর পাশে যোগ্য সঙ্গত ।
আরও পড়ুন:ব্যাটিং বিপর্যয় ! শাহবাজ-অভিষেকের লড়াইয়েও দু'শোর আগেই শেষ বাংলা