কলকাতা, 17 ফেব্রুয়ারি: বঙ্গক্রিকেটের আক্ষেপ এখনও খাদের সুরে বাজতে শুরু করেছে বাংলার সাজঘরে । আত্মসমীক্ষার আতশকাঁচে রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল ফ্রন্টিয়ারে অনুষ্টুপ মজুমদার, মনোজ তিওয়ারি, শাহবাজ আহমেদরা সকলেই পর্দার আড়ালে মানছেন, ব্যাট করার সময় ঝুঁকি না-নিলে হয়তো সৌরাষ্ট্র এত সহজে ইডেনে শাসকের কুর্সিতে বসতে পারত না । রঞ্জি ফাইনালে 174 রানের পুঁজি নিয়ে ম্যাচের শাসক হওয়ার জন্য প্রয়োজন আগ্রাসী বোলিং । ইডেনে প্রথম দিনের পড়ন্ত বিকেলে দু'টো উইকেট তুলে নিলেও বাংলার বোলাররা অন্তত তিরিশ রান বেশি দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছিলেন বঙ্গ সাজঘরে থাকা ব্যক্তিরা (Sourashtra is in the driving seat against Bengal) ।
দ্বিতীয় দিনে প্রত্যাঘাতের হাত ধরে প্রত্যাবর্তনের আশা করা হয়েছিল । দিনের শেষে বলতে হচ্ছে, সম্ভাবনা কমছে বাংলার । ট্রফি থেকে দূরে সরছেন মনোজরা । ফাইনাল চলাকালীন মাঠের মধ্যে রঞ্জি ট্রফিটি সামনে রাখা হয় । ইডেনেও ব্যতিক্রম হয়নি । ট্রফিটি রাখা হয়েছে সৌরাষ্ট্র সাজঘর লাগোয়া । ম্যাচের পরিস্থিতির বিচারে ট্রফির এই অবস্থান যেন ইডেনের রঞ্জি ফাইনালের ওয়ান লাইনার । রঞ্জি ট্রফির দ্বিতীয় দিনের শেষে সৌরাষ্ট্র পাঁচ উইকেটে 317 । ক্রমশই রাশ শক্ত করছে জয়দেব উনাদকাটের দল । যা হয়তো বাংলার জন্য ইনিংসে পরাজয়ের লজ্জা বয়ে নিয়ে আসতে পারে ।
2 উইকেটে 81 রানে খেলা শুরু করে উনাদকাটের দল বাংলার পেসারদের সামলাতে সমস্যায় পড়েছিল । প্রথমদিনের অপরাজিত ব্যাটসম্যান হার্ভিক দেশাই ব্যক্তিগত 50 রানে মুকেশ কুমারের বলে এলবিডব্লিউ হন । এইসময় মনে হয়েছিল, সকালের ইডেনের উইকেটের আর্দ্রতা কাজে লাগিয়ে বাংলার পেসাররা বোধহয় সৌরাষ্ট্রকে কড়া চ্যালেঞ্জের সামনে ফেলবেন । কিন্তু গোটা দু'য়েক হাফ চান্সের পরিস্থিতি তৈরি হওয়া ছাড়া মুকেশ কুমার, আকাশদীপরা প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের ব্যাকফুটে ঠেলতে ব্যর্থ । নৈশপ্রহরী চেতন শাকারিয়াকে ব্যক্তিগত 8 রানে ফেরত পাঠান ঈশান পোড়েল । মাত্র 8 রান করার চেয়েও বড় কথা, শাকারিয়া 45টি বল খেলে গেলেন, যা বাংলার বোলারদের ব্যর্থতার ছবি ।
অথচ মেঘলা আকাশ, সবুজ উইকেটে সৌরাষ্ট্রের ব্যাটারদের বেকায়দায় ফেলার পরিস্থিতি দ্বিতীয় দিনের সকালে ছিল । সেল্ডন জ্যাকসন ব্যক্তিগত 59 রানে ফিরে যান । অর্পিত ভাষাওয়াদা দিনের শেষে 81 রানে অপরাজিত রয়েছেন । ইডেনের দ্বিতীয় সেশনে উইকেট সহজ হয় । সেইসময় ব্যাটাররা দাপট দেখান । সৌরাষ্ট্র ইতিমধ্যে 143 রানে এগিয়ে । ফলে বাংলার ফিরে অসার কাজটা কঠিন । নির্দিষ্ট লাইনে বল করার সঙ্গে সুইংয়ে ব্যাটারদের বোকা বানাতে হবে, পরিকল্পনার এই ছবি বাস্তবায়ন করার ইচ্ছে দ্বিতীয় দিন সেভাবে দেখা যায়নি । আকাশদীপ, মুকেশ, ঈশান পোড়েলদের ব্যর্থতায় বাংলা ম্যাচে ফেরার বদলে ছন্নছাড়া ।
ঘরের মাঠে চেনা দর্শকদের সামনে রঞ্জি জয়ের সুযোগ ফিকে । সৌরাষ্ট্র শিবির বেশি সময় ব্যাট করতে চাইছে । প্রতিপক্ষের ওপর রানের পাহাড় চাপিয়ে বাংলাকে লজ্জার হার ফিরিয়ে দিতে চাইছেন উনাদকাটরা । তাদের সাফল্য যে দু'জন ব্যাটারের ওপর দাঁড়িয়ে, তাঁরা হলেন সেল্ডন ও অর্পিত ভাষাভাদা । প্রথম জন হাফ সেঞ্চুরি করে ফিরে গেলেও দ্বিতীয় জন সেঞ্চুরি থেকে মাত্র 19 রান দূরে । চিরাগ জানিও বড় ইনিংসের দিকে এগোচ্ছেন । 57 রানে ক্রিজে রয়েছেন তিনি । ভাষাবাদা এবং চিরাগের জুটিতে 113 রান তুলে ফেলেছে ।
আরও পড়ুন: অশ্বিন-জাদেজার মাইলস্টোন ! খোয়াজা-হ্যান্ডসকম্বের লড়াইয়েও তিনশোর আগে শেষ অজিরা
শেষবারের বাংলা বনাম সৌরাষ্ট্রের রঞ্জি ফাইনালে ভাষাভাদা সেঞ্চুরি করে বাংলাকে পেছনে ফেলেছিলেন । ইডেনেও একই নজিরের সামনে তিনি । পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপ হচ্ছে, অতিমানবীয় পারফরম্যান্সই বাংলাকে ফেরাতে পারে । বিপর্যয়ের ছবিতে সমস্যার আরেক সংযোজন সুদীপ ঘরামির চোট । চা পানের বিরতির পরেই চোট পেয়ে বাইরে চলে গেলেন । পরবর্তী তিনদিনে তাঁকে পাওয়া যাবে কি না তা ঘিরে বড় প্রশ্নচিহ্ন। খারাপ আলোর জন্য ম্যাচ কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল । অন্ধকার তো বাংলার ড্রেসিংরুম জুড়ে । ইডেনে প্রতিদিনই হাজার পাঁচেক দর্শক আসছেন। সপ্তাহান্তে সংখ্যাটা কমবে বলেই মনে হয় । কারণ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির বদলে ব্যর্থতার সিক্যুয়েল চলছে ক্রিকেটের নন্দন কাননে ।