কলকাতা: সালটা 1992 ৷ সাদা-কালো টিভিতে সচিন তেন্ডুলকরদের খেলা দেখেছিলেন ছোট্ট বাবুল ৷ বছর দশেকের মেয়েকে এই নামেই চিনত পাড়া-প্রতিবেশীরা ৷ তার আগে পর্যন্ত ক্রিকেট নয়, ফুটবলেই আগ্রহ ছিল ছিপছিপে চেহারার মেয়েটির ৷ লক্ষ্য বদলে দিল সাদা-কালো টিভি এবং বিশ্বকাপ ৷ তারপর কেটে গিয়েছে ঠিক তিন দশক ৷ চাকদার ছোট্ট স্টেশন থেকে 'এক্সপ্রেস' গতিতে ছোটা মেয়েটি এখন কিংবদন্তি, লর্ডসে যার বিদায়ী ম্যাচে হাপুস হয়ে কেঁদেছে ক্রিকেটদুনিয়া ৷ 5 ফুট 11 ইঞ্চির ঝুলন গোস্বামীর উচ্চতা আক্ষরিক অর্থেই 'আকাশছোঁয়া' (Jhulan Goswami) ৷
204টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ঝুলন ৷ বিশ্বের সর্বাধিক 255টি উইকেটের মালকিন এই বঙ্গতনয়া ৷ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী শামনিম ইসমাইলের থেকে 64টি উইকেট বেশি পেয়েছেন ঝুলন ৷ লম্বা স্টেপে দৌড়, বিষাক্ত ইনসুইঙ্গার ৷ ঝুলন রান-আপ শুরু করলেই বুক কাঁপত ব্যাটারদের ৷ 2002 সালে ভারতীয় ক্রিকেটে শুরু হয় ঝুলন-যাত্রা । কিন্তু লম্বা স্টেপে দৌড় অনেক আগেই শুরু করেছিলেন ঝুলন ৷ উইকেট নয়, জীবনের লক্ষ্যপূরণটাই তখন লক্ষ্য ছিল লালপুরের তরুণীর ৷
রাতের অন্ধকার তখনও কাটেনি, কিটব্যাগ নিয়ে স্টেশনে পৌঁছে যেতেন ঝুলন ৷ চলে আসতেন কলকাতার বিবেকানন্দ পার্কে ৷ স্বপন সাঁধুর অধীনে চলত প্রশিক্ষণ ৷ মনে উইকেট ছিটকে দেওয়ার তুমুল খিদে, এয়ার ইন্ডিয়ার ক্যান্টিন কর্মীর মেয়ের এই ছিল সম্বল ৷ ঘণ্টাখানেক ঘাম ঝরিয়ে ফিরে যেতেন বাড়িতে ৷ আর মাঝের সময়টা ? লোকাল ট্রেনে কয়েক ঘণ্টার যাতায়াত, ভিড়ের সঙ্গী হত টিপ্পনী, সমালোচনা ৷ পড়াশোনা, বাড়ির কাজ এবং বিয়ে ৷ এই তিনেই মেয়েদের ভাবা লোকজন কিটব্যাগ কাঁধে ঝুলনকে দেখে মানতে পারতেন না ৷ কিন্তু, তাতে থোড়াই কেয়ার বাইশ গজে দাপানোর স্বপ্নে বুঁদ হয়ে থাকা ঝুলনের ৷ পরে বহুবার বলেছেন, খারাপ লাগত । কিন্তু অন্যরা কী বলছে তা তো নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না । নিজের লক্ষ্যে পৌঁছলে দেখবে এই লোকগুলোই উঠে দাঁড়িয়ে একদিন হাততালি দিচ্ছে ।