পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / sports

ICC Cricket World Cup 2023: সাফল্যের শিখর থেকে ব্যর্থতার গহীন খাদে, প্রথমবার 'ক্যালিপসো'হীন ক্রিকেট বিশ্বকাপ

আজ থেকে চার-পাঁচ দশক আগে ক্রিকেটপাগল জনতা বিশ্বজয়ের বাজি ধরত যাকে নিয়ে, সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ 2023 বিশ্বকাপের বাইরে ৷ এই প্রথমবারের জন্য বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ প্রথম দু'বারের (1975, 1979) বিশ্বচ্য়াম্পিয়নরা ৷ একনজরে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের ইতিহাস ৷

ICC Cricket World Cup 2023
প্রথমবার ক্যালিপসোহীন ক্রিকেট বিশ্বকাপ

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 2, 2023, 9:00 PM IST

Updated : Oct 2, 2023, 11:07 PM IST

হায়দরাবাদ, 2 অক্টোবর: বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটের গনগনে আঁচ ৷ আগামী 5 অক্টোবর থেকে যে আঁচে গা সেঁকবেন আপামর ক্রিকেটজনতা ৷ কে জিতবে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত হতে চলা বিশ্বকাপের ত্রয়োদশ সংস্করণ? কেউ বলছেন, আইসিসি ট্রফিজয়ের দশ বছরের খরা কাটিয়ে তৃতীয়বার ট্রফি ঘরে তুলবে ভারত ৷ তো কেউ আবার ভারতের মাটিতে ফের বিশ্বজয়ের দাবিদার হিসেবে দেখছেন ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়াকে ৷ কিন্তু আজ থেকে চার-পাঁচ দশক আগে ক্রিকেটপাগল জনতা বিশ্বজয়ের বাজি ধরত যাকে নিয়ে, সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ 2023 বিশ্বকাপের বাইরে ৷ এই প্রথমবারের জন্য বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ প্রথম দু'বারের (1975, 1979) বিশ্বচ্য়াম্পিয়নরা ৷

ক্রিকেট এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ: 1877 প্রথমবার বল গড়িয়েছিল বাইশ গজে ৷ জেন্টলম্যান'স গেমের জন্ম বিলেতে হলেও ক্রিকেট আরও সমৃদ্ধ হয়েছে তার অনুরাগীদের জন্য ৷ আর ক্রিকেট নিয়ে অনুরাগের কথা বললে প্রথমেই যে দেশের নাম মাথায় আসে, সেটি হল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৷ ছোট ছোট একাধিক দ্বীপ নিয়ে গড়ে ওঠা ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জটি কেবল ক্রিকেট খেলার জন্যই এককাট্টা হয়েছিল এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল ৷ সাত এবং আটের দশকে বাইশ গজে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের একাধিপত্য জন্ম দিয়েছিল উত্তেজক সব মুহূর্তের ৷ যতদিন ক্রিকেট থাকবে তারকাখচিত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কীর্তি খোদিত থাকবে একেবারে উপরের সারিতে ৷

সাফল্যের চূড়া থেকে ব্যর্থতার গহীন খাদে: বাইশ গজে বহু দেশ আসবে যাবে কিন্তু ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাফল্যের কীর্তির ধারেকাছেও হয়তো কেউ পৌঁছতে পারবে না ৷ 1975 প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল আটটি দেশ ৷ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে বাকি দেশগুলো খড়কুটোর মত উড়ে গিয়েছিল ৷ অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ দেশে নিয়ে গিয়েছিল ক্লাইভ লয়েড অ্যান্ড কোম্পানি ৷ 1979 বিশ্বকাপও কার্যত 1975-এর কার্বন কপি ৷ একাধিপত্য বজায় রেখে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বসেরার তাজ পরে ক্যারিবিয়ানরা ৷

সাতের দশকে ওডিআই ক্রিকেটের সূচনা লগ্নে ক্রিকেটবিশ্বে নিজেদের একটা পরিচিতি তৈরি করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৷ তবে চিত্রটা বদলাল আশির দশকে পা রাখার পর ৷ প্রথম দু'টি বিশ্বকাপের মত তৃতীয়বারও প্রুডেনশিয়াল কাপ তথা বিশ্বকাপের আসর বসেছিল ইংল্যান্ডের মাটিতে ৷ তবে বিশ্ব ক্রিকেট পেয়েছিল নয়া চ্যাম্পিয়ন ৷ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বসেরা হয়েছিল কপিল দেবের ভারত ৷ কিন্তু তখনও ওয়েস্ট ইন্ডিজের আধিপত্য বিশ্ব ক্রিকেটে এতটাই বলিষ্ঠ ছিল যে, ভারতের বিশ্বজয়কে অধিকাংশই 'ফ্লুক' বলে দাগিয়ে দিয়েছিল ৷

1975 এবং 1979-তে অপরাজিত বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট পরার পর 1983 একমাত্র ভারতের কাছে হেরে খেতাব হাতছাড়া হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বক্রিকেটে আধিপত্য জারি ছিল বিশ্বকাপের পরেও ৷ তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর হৃত সম্মান পুনরুদ্ধার করতে পারেননি ৷

এর পরবর্তী কাহিনী ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট ফ্যানেদের কাছে আরও মর্মান্তিক ৷ নয়ের দশকে পা রাখতেই একে একে অবসরের রাস্তায় হাঁটেন বিশ্বজয়ী দলের একেকজন সদস্য ৷ অবস্থা এমনই যে 1996 বিশ্বকাপ বাদ দিলে 1983 পরবর্তী আর কোনও বিশ্বকাপের শেষ চার পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি ৷ এটা ঠিক 2004 চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, 2012 এবং 2016 টি-20 বিশ্বকাপে সেরার শিরোপা জিতেছিল ক্যারিবিয়ানরা ৷ তবু স্বর্ণযুগের ত্রিসীমানাতেও আর ফিরতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৷

ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস ব্যাটারি: আধুনিক ক্রিকেটে পেস বোলিং বা গতির কথা এলে আমাদের মাথায় আসে ব্রেট লি, শোয়েব আখতার, শন টেট, শেন বন্ড, ডেল স্টেইনদের নাম ৷ যাঁরা ঘণ্টায় 150 কিমি বা তারও বেশি ৷ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশের এই স্পিডস্টাররা বিপক্ষ ব্যাটারদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ৷ কিন্তু একবার ভাবুন তো, এরকম চার জন স্পিডস্টার যদি একই দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন, তাহলে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের কী অবস্থা হতে পারে?

মাইকেল হোল্ডিং, ম্যালকম মার্শাল, অ্যান্ডি রবার্টস এবং জোয়েল গার্নার ৷ ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বর্ণযুগের এই চার বোলার ছিলেন তেমনই ৷ যাঁদের নামে থরহরি কম্প ছিলেন বিপক্ষ ব্যাটার ৷ তখন না ছিল স্পিডোমিটার, না ছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য হেলমেট বা অন্যান্য নিরাপত্তার উপকরণ ৷ সবচেয়ে বড় কথা বাউন্সার নিয়ে তৎকালীন ক্রিকেটে কোনও বিধিনিষেধও ছিল না ৷ শুনতে মজা লাগলেও এটা সত্যি যে থুতনি, কনুই, পাঁজর কিংবা গোড়ালি, ক্যারিবিয়ান বোলারদের নিশানা থেকে বাদ যেত না বিপক্ষ ব্যাটারদের দেহের কোনও অংশই ৷

ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই চার পেসারের উত্তরাধিকার পরবর্তীতে সাফল্যের সঙ্গেই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন কোর্টনি ওয়ালশ-কার্টলে অ্যামব্রোসরা ৷ কিন্তু নয়ের দশক শেষ হতেই ক্যারিবিয়ান পেস বিভাগ তার গরিমা হারাতে শুরু করে ৷

আরও পড়ুন:অনুপ্রেরণার আরেক নাম মহম্মদ সিরাজ, বিশ্বকাপে টিম ইন্ডিয়ার ট্রাম্প কার্ডও

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটারদের কথা উঠলে আধুনিক ক্রিকেটে ফ্যানদের মাথায় আসে ব্রায়াল চার্লস লারা কিংবা ক্রিস্টোফার হেনরি গেইলের নাম ৷ কিন্তু একটা সময় ছিল যখন ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং লাইন-আপে ছিল ডেসমন্ড হেইনেস, গর্ডন গ্রিনিচ, ভিভিয়ান রিচার্ডস, ক্লাইভ লয়েড, গ্যারফিল্ড সোবার্স, আলভিন কালীচরণের মতো নাম ৷ এখনও সর্বকালের সেরা একাদশ বাছতে বসলে তালিকায় ভিভ রিচার্ডস জায়গা করে নেবেন প্রশ্নাতীত ভাবে ৷ অন্যদিকে স্যর সোবার্স এখনও সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে বিবেচিত হন ৷

পরবর্তীতে ব্রায়ান লারা, শিবনারায়ণ চন্দ্রপল, রামনরেশ সারওয়ান, ক্রিস গেইলরা এলেও বোলিংয়ের মতোই ব্যাটিংয়েও ক্যারিবিয়ানরা আর সেরা সময়ের ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি ৷ ফলস্বরূপ বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের গরিমা স্থান করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায় ৷ একবিংশ শতকে এসে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, জোড়া কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপ জিতলেও কালের নিঠুর পরিহাসে 2023 বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে চলা সেরা 10 দলের মধ্যে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৷ যা প্রথমবার ৷

নির্ধারিত সময়ে ওডিআই ব়্যাংকিংয়ে প্রথম আটে না-থাকায় যোগ্যতা অর্জন পর্বের মধ্যে দিয়ে বিশ্বকাপের মূলপর্বের যোগ্যতা অর্জন করতে হত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৷ যেখানে তাদের খেলতে হত নেদারল্যান্ডস, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জিম্বাবোয়ে, স্কটল্যান্ড, ওমানের মত দলের বিরুদ্ধে ৷

কিন্তু জিম্বাবোয়ে, স্কটল্যান্ড, নেদারল্য়ান্ডসের কাছে হেরে ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ ঘটনার সাক্ষী হতে হয় ক্যারিবিয়ানদের ৷ প্রথমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছাড়া অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ ৷

Last Updated : Oct 2, 2023, 11:07 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details