কলকাতা, 7 মে: নেশায় আম্পায়ার, পেশায় চিকিৎসক । বর্তমান কলকাতার ক্রিকেটে একসঙ্গে চিকিৎসক এবং ম্যাচ পরিচালনার নজির আর নেই । বলতে গেলে ডাক্তার শেখর চৌধুরির ছেড়ে আসা ব্যাটন বয়ে চলেছেন চিকিৎসক তথা আম্পায়ার উজ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় । ঘরোয়া ক্রিকেটে যিনি ডাক্তারদা নামে পরিচিত ।
উত্তরপাড়ায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হিসেবে মানুষটির পসার যথেষ্ট । তবে উজ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়ের পেশা এবং নেশাকে খাটো করা যাবে না । তাই কোরোনা ভীতির মাঝেও ডাক্তারবাবুর চেম্বার ঘণ্টা দুয়েকের জন্যে খোলা থাকছে । স্বাভাবিক সময়ের মতো না হলেও ক্রনিক রোগের রোগীদের ভিড় রয়েছে উজ্বলবাবুর চেম্বারে ।
মাঠের সতীর্থদের নিয়ে চিন্তিত আম্পায়ারদের "ডাক্তারদা" - আম্পায়ার
ক্রিকেটে চিকিৎসক বলতে প্রথম নাম আসে ডব্লিউ জি গ্রেসের । বাঙালিদের মধ্যে চিকিৎসক এবং আম্পায়ারিংয়ের প্যাকেজ ডা: শেখর চৌধুরি । আর বর্তমান সময়ে উজ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় ।
এই ডাক্তারবাবুর আম্পায়ারিংয়ে আসার গল্পটা বেশ আকর্ষণীয় । সকলেই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন । কিন্তু তাঁর ভালো লাগত আম্পায়ারিং । কথায় আছে "যে খায় চিনি, তাকে জোগায় চিন্তামণি"। 22 বছর আগে উত্তরপাড়ায় একটি রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠন ধুমধাম করে প্রতিবছর ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করত । সেখানে বাংলার বিখ্যাত ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণ ছিল বাড়তি আকর্ষণ । ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে থাকতেন CAB-র পাশ করা আম্পায়াররা । কিন্তু একবার নির্ধারিত আম্পায়ারের অনুপস্থিতিতে ডাক পড়েছিল উজ্বলবাবুর । পাড়ার টুর্নামেন্টে ম্যাচ পরিচালনা করায় সুনাম ছিল তাঁর । তবে হঠাৎ পাওয়া এই সুযোগে মাঠে নেমে ঘাবড়ে যাননি । বরং নজরকাড়া ম্যাচ পরিচালনা করেছিলেন । ক্রিকেটের নিয়মের "হাতুড়ে জ্ঞান" সম্বল করে নামজাদা ক্রিকেটারদের সামলে দেওয়ার অভিজ্ঞতা উজ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়কে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে । তাঁকে পেশাদার আম্পারিংয়ে আসার ব্যাপারে উৎসাহ দেন দেবাশিস ভট্টাচার্য । CAB-র পাশ করা আম্পায়ার ছিলেন দেবাশিসবাবু । তিনিই উজ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়কে আম্পায়ার হওয়ার পথ বাতলে দেন । উজ্বলবাবুর কথায়, "সেই সময় আম্পায়ারিংয়ের খুঁটিনাটি কিছুই আমার জানা ছিল না । দেবাশিসদার দেওয়া নিয়মের বই পড়ে পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিলাম । চিকিৎসা আমার পেশা । আর ক্রিকেট আম্পায়ারিং আমার নেশা । এখন নেশা এবং পেশার ভারসাম্য রেখে চালিয়ে যাচ্ছি ।"বাবার অন্ত্যোষ্টির 48 ঘণ্টার মধ্যে ম্যাচ পরিচালনা করেছিলেন । দীর্ঘ 20 বছরের আম্পায়ারিংয়ের অভিজ্ঞতা তাঁর । সেরা অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে গ্রেড ওয়ান আম্পায়ার বলেছেন, "বছর দুয়েক আগে ভবানীপুর বনাম এরিয়ান ম্যাচে একাধিক সিদ্ধান্তের সঠিক বিশ্লেষণের জন্য ক্রিকেটারদের কাছ থেকে বাহবা পেয়েছিলাম । আবার এক তারকা ব্যাটসম্যানকে আইন ভাঙার চেষ্টা না করতে বলে সমঝে দিয়েছিলাম । হয়তো এগুলো স্থানীয় ম্যাচ কিন্তু এই ঘটনাগুলো পরম পাওয়া ।" নভেম্বর থেকে কলকাতা ময়দানে বাইশ গজের যুদ্ধ মানেই ডাক্তার উজ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় চড়কিপাক শুরু । সকালে ম্যাচ পরিচালনা করেই সন্ধ্যায় রোগী দেখতে বসে যান । বিষয়টি ক্লান্তির এবং পরিশ্রমের । "কিন্তু নেশা এবং পেশা দুটোই আমার হৃদয়ের কাছাকাছি । তাই অবহেলা করি কী করে বলুন," আন্তরিক শোনায় উজ্বলবাবুর গলা । ক্রিকেটে চিকিৎসক বলতে প্রথম নাম আসে ডব্লিউ জি গ্রেসের । বাঙালিদের মধ্যে চিকিৎসক এবং আম্পায়ারিংয়ের প্যাকেজ ডা: শেখর চৌধুরি । আর বর্তমান সময়ে উজ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় । কথাগুলো বলতেই কপালে হাত ছোঁয়ালেন উত্তরপাড়ার ডাক্তারবাবু । নিজেকে ওই তালিকায় ফেলতে চান না সাইমন টাফেলের এই ভক্ত ।