মুম্বই, 4 এপ্রিল : ‘‘ভারতে ক্রিকেট শুধুমাত্র কোনও একটি খেলা নয়, এটি একটি ধর্ম ৷ সচিন হলেন ক্রিকেটের ভগবান ৷’’ উক্তিটি অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক স্টিভ ওয়ার ৷ ক্রিকেট ভারতের জাতীয় খেলা নয় ৷ তবে এটি একটি উৎসব, উন্মাদনা, কোটি কোটি মানুষের আবেগ ৷
ভারতে প্রায় প্রত্যেক 5 জন শিশুর মধ্যে একজন দেশের জার্সি পরে ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন দেখে ৷ এই সব দেখেই বোঝা যায় ক্রিকেটের প্রতি লোকের আবেগ, অনুভূতি ৷ কিন্তু ভারতে ক্রিকেট এত স্পেশাল কেন?
1983 সালের 25 জুন ভারতে ক্রিকেটের পরিচিতি চিরতরে বদলে যায় ৷ প্রথমবারের জন্য ক্রিকেট বিশ্বকাপ ঘরে তোলে ভারত ৷ একই সঙ্গে বিশ্ব ক্রিকেটে এক স্লিপিং জায়েন্টের ঘুম ভাঙে ৷ এরপর 1985 সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাবও জয় করে ভারত ৷ তারপর থেকেই ক্রিকেট ভারতে শুধুমাত্র একটি খেলা হিসেবে থাকে না ৷
একসময় ভারতীয় হকি দল পরপর 6টি সোনা জেতে ৷ 1928 থেকে 1972 সালের মধ্যে মোট 10টি পদক জেতে ৷ খেলাধূলার বিশ্বে যেটা ছিল সেই সময় ভারতের অন্যতম সাফল্য ৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও হকি কেন ক্রিকেটের মতো এত জনপ্রিয়তা পেল না ? 1980 সালে অলিম্পিক গেমসে হকিতে সোনা জেতে ভারত ৷ কিন্তু তারপর থেকে ভারতীয় হকি দল বিশ্বকে শাসন করার পরিবর্তে নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে যায় ৷ ঠিক এই সময়ই ভারতে ক্রিকেটের উত্থান শুরু হয় ৷ ধীরে ধীরে হকিকে পিছনে ফেলে অন্যতম জনপ্রিয় খেলা হিসেবে ভারতে ক্রিকেট উঠে আসে ৷
1987 সালের বিশ্বকাপ ভারতে অনুষ্ঠিত হয় ৷ এই টুর্নামেন্ট উপমহাদেশের কোটি কোটি লোকের মধ্যে ছাপ ফেলে যায় ৷ তারপর থেকে ভারতে এই খেলা আরও জয়প্রিয়তা পায় ৷ এই সময় ক্রিকেট ছাড়া অন্য কোনও খেলায় ভারত সাফল্য পায়নি ৷ তাই ভারতীয়দের হৃদয়ে এই খেলা একটি বিশেষ জায়গা করে নেয় ৷
বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ভারতে ব্রডকাস্টিংয়ের বিশাল উন্নতি হয়৷ একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে ক্রিকেটের বাইশ গজে ভারতীয়দের দাপট ৷ তখন দর্শকরা টেলিভিশনের পর্দায় এই দুরন্ত পারফরমেন্সগুলি উপভোগ করতে পারে ৷ ফলে ক্রিকেট ধীরে ধীরে আরও জনপ্রিয়তা পেতে থাকে ৷ একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই ক্রিকেট ভারতীয়দের অলিখিত ধর্মে পরিণত হয় ৷
2011 সালে দেশের মাটিতে ফের বিশ্বকাপ জয় ভারতের একই প্রশ্ন করা হয় ভারতের জাতীয় দলের প্রাক্তন নির্বাচক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৷ রণজি ট্রফি জয়ী বাংলা দলের অধিনায়ক বলেন, "সাফল্য পেলেই হবে না । তা ধরে রাখার জন্য পরিকাঠামোগত উন্নতি করতে হবে । 1983 সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের পর ভারতীয় দল পরপর সাফল্য পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বেনসন হেজেস কাপ, রথম্যানস কাপের মতো সাফল্য এসেছে । এই সাফল্যে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অবদান অনস্বীকার্য । পরিকাঠামোর উন্নয়নে প্রথম থেকে নজর দিয়েছে তাঁরা । নতুন প্রতিভার অন্বেষণ, তাঁদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার কাজ করেছে । তাছাড়া ক্রিকেটে নিয়মিত আইকন উঠে আসা জরুরি । সুনীল গাভাসকর, সচিন তেন্ডুলকর, কপিল দেব, আজহারউদ্দিন, সৌরভ, দ্রাবিড়, সেহওয়াগ, ধোনি, কোহলিরা নিয়মিত ব্যবধানে উঠে এসেছে । তাই ক্রিকেট ঘিরে জনপ্রিয়তা অটুট রয়েছে ৷"
1983 সালে ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয় সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতোই পরিকাঠামোর উন্নতির কথা বলছেন বাংলার আরও দুই ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি ও অশোক দিন্দা ৷ সম্প্রতি দু’জনেই রাজনীতিতে এসেছেন ৷ বিধানসভা নির্বাচনে দু’জন দুই দলের প্রার্থীও বটে ৷ তবে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার প্রশ্ন করা হলে দু’জনই সহমত ৷ মনোজ বলছেন, " ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা কেন এই প্রশ্নের কোনও উত্তর আমার কাছে নেই । বিষয়টি নিয়ে ভাবিওনি । তবে একটা কথা বলতে পারি পরিকাঠামোর দিক থেকে ক্রিকেট এগিয়ে অন্য খেলার তুলনায় । নিয়মিত সাফল্য সেই কারণেই ।" অশোক দিন্দা বলছেন, "যেকোনও কিছু দাঁড়িয়ে থাকে তার কাঠামোর উপর । ক্রিকেট তার ব্যতিক্রম নয় । নিয়মিত সাফল্যে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ।’’
আরও পড়ুন : করোনা থেকে সুস্থ হয়ে কেকেআর শিবিরে যোগ দিলেন নীতীশ রানা
1983 সাল পর্যন্ত ভারতে ক্রিকেট শুধু মাত্র একটি খেলা ছিল ৷ বিশ্বকাপের পর পরিস্থিতি বদল হয় ৷ ভারতীয়দের সঙ্গে ক্রিকেটের প্রেম কাহিনি শুরু হয় ৷ পরবর্তীকালে কিংবদন্তি সচিনের উত্থান, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব ক্রিকেটকে ভারতে অন্য মাত্রায় পৌঁছায় ৷ তবে এখানে বলতেই হয় 2007 সালে টি-20 বিশ্বকাপ জয়, 2011 ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয় ও 2013 সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ে ধোনির অধিনায়কত্ব দেশের মানুষকে ক্রিকেটের প্রতি আরও বেশি করে আকর্ষণ করে ৷ সর্বোপরি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলার জনপ্রিয়তা আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় ৷
প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই নতুন, প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের উত্থান ৷ সঠিক হাতে ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব প্রদান, ভারতীয় ক্রিকেটকে নতুন মাত্রা তৈরিতে সাহায্য করেছে ৷