শারজা, 28 সেপ্টেম্বর : মঞ্চটা তৈরি করে দিয়েছিলেন সঞ্জু স্যামসন । শেষটা করলেন রাহুল তেওয়াটিয়া । কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের বিরুদ্ধে রেকর্ড রান তাড়া করে রাজস্থানের জয়ের দুই কারিগর । যাঁদের জন্য চলতি IPL -এর নবম ম্যাচটি প্রতিটি ক্রিকেপ্রেমীর মনে গাঁথা হয়ে থাকবে ।
তবে শুরুটা মোটেও তেমন ছিল না । ময়ঙ্ক আগরওয়ালের 50 বলে 106 রানের দুর্ধর্ষ ইনিংসের উপরই সব আলো ছিল । যার জেরে বিপক্ষকে 223 রানের টার্গেট দিতে পেরেছিল পঞ্জাব । সবাই ভেবেছিল, আগের ম্যাচের মতোই এই বড় লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর আগেই থেমে যাবে রাজস্থান রয়্যালসের ইনিংস । ম্যাচের গতিপ্রকৃতি তেমনই ছিল । কিন্তু এই চেনা গল্পে টুইস্ট আনেন স্যামসন, তেওয়াটিয়া । নিজেদের ব্যাটিং বিক্রমে আগরওয়ালের থেকে সমস্ত লাইমলাইট কেড়ে নেন তাঁরা । টি -20-র মতো ক্ষুদ্রতম ফরম্যাটে একজনের সেঞ্চুরিকে ছাপিয়ে ম্যাচের আলো নিজেদের দিকে ঘোরানো এত সহজ কাজ নয় ।
চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে যেখান থেকে শেষ করেছিলেন রবিবার সেখান থেকেই শুরু করেন সঞ্জু স্যামসন । চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে 32 বলে 74 রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি । রবিবারের গল্পটাও অনেকটা একইরকম । পার্থক্য হল- এদিন দলকে জেতাতে রান তাড়া করতে নেমে ছিলেন সঞ্জু । তাঁর কাজ ছিল 224 রান তাড়া করে জিততে স্টিভ স্মিথকে সাহায্য করা । এই ম্যাচ জেতা মানে রেকর্ড গড়া । কারণ ক্রোড়পতি লিগে এর আগে কোনও টিম 224 রান তাড়া করে জেতেনি । স্যামসন - তেওয়াটিয়া সেই ইতিহাসও গড়ে ফেললেন । সকলের নজরের আড়ালে থাকা তেওয়াটিয়ার ইনিংসের শুরুটা ছিল ভয়ানক । প্রথম 23 বলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে 17 তুলেছিলেন । তারপরই রাহুলের ব্যাট আর ম্যাচের মোড় দুটোই ঘুরল 90 ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে । পরের 8 বলে রাহুলের ব্যাট থেকে এল 36 রান । রাহুলের স্কোরকার্ড অনেকটা এরকম - 0, 1, 0, 0, 0, 1, 1, 1, 1, 0, 0, 0, 0, 0, 1, 1, 1, 0, 0, 6, 0, 2, 1, 6, 6, 6, 6, 0, 6, 6, 0 (উইকেট) । চাপের মধ্যে তাঁর রান তোলার ক্ষমতা আছে এই বিশ্বাসটা তেওয়াটিয়ার মধ্যে ছিল । এদিকে জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়া ব্যাটসম্যান সঞ্জু সব ক্রেডিট তাঁর বাবাকে দিয়েছেন । তাঁর কথায়, "বহু চেষ্টার পরও সুযোগ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম । আমি স্থির করেছিলাম যদি আরও দশ বছর ক্রিকেট আমার মধ্যে থেকে যায়, তবে আমি এই 10 বছরে আমার সমস্ত কিছু ক্রিকেটকে দিতে চাই । এই শক্তি জিন থেকে এসেছে । আমার বাবা খুব শক্তিশালী পুরুষ । "
জস বাটলার দ্রুত ফেরার পর অপর প্রান্তে স্টিভ স্মিথকে পেয়েছিলেন স্যামসন । শারজার ছোটো বাউন্ডারি তাঁর কাছে আদর্শ মনে হলেও একটা সময় ব্যাটে বলে কানেক্ট করতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন তেওয়াটিয়া । তাঁর বিরুদ্ধে দুই স্পিনারকে নামিয়ে দিয়েছিলেন পঞ্জাব অধিনায়ক লোকেশ রাহুল । স্ট্রাইক রোটেট করে স্যামসনকে সুযোগ দিতেও পারছিলেন না । সঞ্জু 42 বলে 85 রানের ইনিংস খেলে আউট হওয়ার পর তেওয়াটিয়ার উপর চাপ বাড়তে থাকে । সেই ছেলেটিই জ়িরো থেকে হিরো বনে গেলেন একটি ওভারে । ওভারের প্রথম শেলডন কটরেলের বাউন্সার গিয়ে আছড়ে ফেলেন বাউন্ডারিতে । ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগ, লং-অফ, মিড-উইকেটের উপর দিয়ে বাকি তিনটি বল পাঠান । পঞ্চম বলটি মিস করার পর ওভারের শেষ বলটিও মিড-উইকেটের উপর দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠান । আউট হওয়ার আগে আরও একটি ছয় মারেন তিনি ।
পরে তিনি বলেন, “আমার জীবনের জঘন্যতম 20টা বল ছিল। আমি নেটে ভালো খেলছিলাম । তাই আমার নিজের উপর বিশ্বাস ছিল ।”