হায়দরাবাদ, 15 জুলাই: সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মোর্তাজা, তামিম ইকবালদের মতো বড় তারকারা পারেননি ৷ করে দেখিয়েছে বাংলাদেশের ছোটোরা ৷ অনূর্ধ্ব-19 বিশ্বকাপে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছে বাংলাদেশ ৷ যেকোনও ধরনের ক্রিকেটে এই প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছি দেশটি ৷ টুর্নামেন্টের আন্ডারডগ টিম বাংলাদেশ যে বিশ্বকাপ নিয়ে ঘরে ঢুকবে তা অতি বড় বাংলাদেশি সমর্থকেও ভাবনার বাইরে ছিল ৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়েছে ৷ আর রাতারাতি নায়কের তকমা পেয়েছেন অধিনায়ক আকবর আলি ৷ ফাইনালে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনায় দলের ছেলেদের হয়ে ক্ষমা চান আকবর ৷ ETV ভারতের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সেই ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন বাংলাদেশের এই ভবিষ্যত তারকা ৷
- বিশ্বকাপ জিতে দেশে ফেরার অভিজ্ঞতা
আকবর বলেছেন, "সেই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না ৷ এতো আনন্দ বোধহয় আগে কোনওদিন পাইনি ৷ বাংলাদেশের মানুষরা বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে গেছিল ৷ এয়ারপোর্ট থেকে BCB-র অফিস পর্যন্ত যেতে গিয়ে যে দৃশ্য আমরা দেখেছি তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না ৷ এই অভিজ্ঞতাটা সত্যিই দারুণ ৷"
- ভারত না পাকিস্তান, 22 গজে কঠিন প্রতিপক্ষ কে ?
বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক বলছেন, "ভারতের মোকাবিলা করা কঠিন ৷ ভারত খুব মজবুত টিম ৷ ওদের খেলার ধরনও অসম্ভব ভালো ৷ ভারতের রবি বিষ্ণোইয়ের বিরুদ্ধে খেলা কঠিন ৷"
সুযোগ পেলে অবশ্য়ই IPL-এ খেলতে চান আকবর ৷ তাঁর কথায়, "আমি নিয়মিত IPL দেখি ৷ মুম্বই ইন্ডিয়ান্স আমার পছন্দের টিম ৷ ওদের খেলা দেখতে খুব ভালো লাগে ৷ কোনওদিনও সুযোগ পেলে অবশ্যই মুম্বইয়ের হয়ে খেলব ৷ IPL-এর মতো টুর্নামেন্টে যেকোনও ক্রিকেটার খেলতে চাইবে ৷"
বিশ্বকাপ জয়ের পর সতীর্থদের সঙ্গে - এমএস ধোনি নাকি সাকিব আল হাসান
কঠিন প্রশ্নে একটুও না ঘাবড়ে বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দিয়েছেন আকবর ৷ বলেছেন, "সাকিব আল হাসান বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেটারদের মধ্যে একজন ৷ কিন্তু একজন ফিনিশার ও অধিনায়ক হিসেবে ধোনি হলেন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার ৷" ধোনির মতোই 22 গজে ধীর স্থির হয়ে ঠান্ডা মাথায় নেতৃত্ব দেন আকবর আলি ৷ ইতিমধ্যেই ভারতের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের সঙ্গে তাঁর তুলনা টেনেছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা ৷ কিন্তু তুলনা মোটেও পছন্দ নয় আকবরের ৷ এই প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, এভাবে তুলনা টানা মোটেও ঠিক নয় ৷ ধোনি একজন লেজ়েন্ড ৷
দিদির মৃত্যুর কষ্ট পারফরম্যান্স পড়তে দেননি আকবর - বিরাট কোহলি নাকি স্টিভ স্মিথ
এক্ষেত্রে কোহলিকে বেছে নিয়েছেন আকবর ৷ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, "তিনটি ফরম্যাটেই বিরাটের পারফরম্যান্স দারুণ ৷ স্টিভ স্মিথ টেস্ট ম্যাচে ভালো খেলেন ৷ ব্যাটিং গড় 50-এর উপরে ৷ কিন্তু সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বিরাট কোহলিই হলেন সবার সেরা ৷"
- দুস্থদের পাশে যুব দলের অধিনায়ক
বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে খেলার স্মৃতি সারাজীবনের জন্য সংরক্ষণ করে রাখেন ক্রিকেটাররা ৷ ড্রয়িংরুমে কাঁচের শোকেসে জ্বলজ্বল করে ট্রফি, জার্সি, গ্লাভস, উইকেট ৷ যা প্রতিমুহূর্তে অতীতের সাফল্যের কথা মনে করিয়ে দেয় ৷ কোরোনার এই কঠিন সময়েই বিশ্বকাপের ক্রিকেট সরঞ্জামই নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেন আকবর ৷ এই বিষয়ে তিনি বলেছেন, "বিশ্বকাপের সরঞ্জাম সবার কাছেই প্রিয় ৷ আমার কাছেও তাই ৷ কিন্তু দেশের এই কঠিন সময়ে দুস্থদের পাশে দাঁড়ানোটা আমার বেশি প্রয়োজন বলে মনে হয়েছে ৷ তাই নিলামের সিদ্ধান্ত নিই ৷ আমার ড্রয়িংরুমে শোভা বাড়ানোর থেকে সরঞ্জামগুলি মানুষের প্রয়োজনে কাজে লাগায় আমি খুশি ৷"
- বিশ্বকাপ ফাইনালে দুই দলের হাতাহাতির ঘটনা
আকবরের কথায়, "পুরো ম্যাচটা দেখলে বুঝতে পারবেন কতটা কঠিন ছিল সেই ম্যাচ ৷ প্রচুর চড়াই-উতরাই ছিল ৷ আমার মনে হয়ে দলের ছেলেরা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিল ৷ কী হয়েছিল তা আমি জানি না ৷ কারণ যেখানে ঘটনাটি ঘটে তার উলটোদিকে ছিলাম ৷ ঘটনাটা পাঁচ থেকে দশ সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে যায় ৷ এমনটা না হলেই ভালো হতো ৷ তাহলে টুর্নামেন্টের শেষটা ভালো হতো ৷ ওই ঘটনার পরও আমরা হাত মিলিয়েছি ৷ পরদিন সকালে উঠে একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করেছি ৷ মাঠের বাইরে আমরা সবাই বন্ধুর মতো ৷" ভারতীয় ফ্যানদের প্রতি আকবরের অনুরোধ, "দয়া করে বিষয়টি নিয়ে আর কথা বলবেন না ৷ ওই ঘটনা ভুলে শুধু ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করুন ৷ ওই ঘটনার জন্য আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি ৷"
- বিশ্বকাপ চলাকালীন বড় বোনের মৃত্যু
সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে বড় দিদির ৷ বাড়ির লোকেদের শত চেষ্টা সত্ত্বেও বিশ্বকাপ চলাকালীনই কোনওভাবে খবর পেয়ে গেছিলেন আকবর ৷ প্রিয়জনকে হারানোর কষ্ট, মনের ভেতরের উথালপাথাল অবস্থাটা চোখেমুখে ফুটে উঠতে দেননি আকবর ৷ বরং দিদির ইচ্ছেপূরণ করার জেদ তাঁকে দ্বিগুণ শক্তি দিয়েছিল ৷ আকবরের কথায়, "বিশ্বকাপ জিতে ঘরে ফিরছি ৷ কিন্তু এতো আনন্দের মাঝেও ছিল প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা ৷ জানতাম বাড়িতে আমার জন্য খারাপ খবর অপেক্ষা করছে ৷"