পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / sitara

পর্ণমোচী রিভিউ : বিষয়বস্তু নতুন, বোল্ড অ্যান্ড বিউটিফুল - movie review

ফাইল ফোটো

By

Published : Mar 9, 2019, 4:58 PM IST

বয়ঃসন্ধি মানেই নানারকম রহস্যের হাতছানি। আর সেই রহস্য উন্মোচনের এক অদ্ভুত বাসনা। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তৈরি হয় আগ্রহ। কিন্তু, ভারতীয় সমাজে এখনও সবকিছু রেখে ঢেকে চালিয়ে যাওয়ার ধুম। বয়ঃসন্ধির নিষ্পাপ আগ্রহকে তুলে ধরা হয় পাপ হিসেবে। আর যাঁরা একে পাপ বলেন, তাঁরা যে কতটা ভুল, সেই বিষয়টিকে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে। পরিচালক কৌশিক কর তাঁর একসময় লেখা এবং মঞ্চস্থ নাটককে পরদায় অতি অল্প বাজেটে তুলে ধরেছেন।

পর্ণমোচীর গল্পের কেন্দ্রে ১৩-১৪ বছরের কিশোর অনল। একসময় তাঁর নীল ছবির প্রতি তুমুল আগ্রহ তৈরি হয়। সেটা নেশার পর্যায়ে পৌঁছয়। বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক এই ছবির USP। বাবার মৃত্যুর পর সে জীবনের চূড়ান্ত সত্যের মুখোমুখি হয়। সবটাই কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে। কী সেই সত্য, তা জানতে আপনাকে হলে গিয়ে ছবিটি দেখতে হবে। অনলের চরিত্রে দুরন্ত অভিনয় করেছেন ঋতব্রত। এই নিয়ে অনেকগুলো ছবিতে অভিনয় করলেন নতুন প্রজন্মের এই অভিনেতা। ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় দক্ষতা দেখে তাঁর সম্ভাবনা নিয়ে অনেকেই আশাবাদী। অনলের বাবার চরিত্রে দেখা যায় অনিন্দ পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। একেবারে ভিন্ন চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। শান্ত, বুদ্ধিদীপ্ত বাবার চরিত্রে তাঁর অভিনয় দর্শকদের অনেকদিন মনে থেকে যাবে।

এই ছবিতে অভিনয় করেছেন শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়ও। তিনি রিয়েল লাইফে ঋতব্রতর বাবা। যদিও ছবিতে বাবা-ছেলেকে সেইভাবে একসঙ্গে দেখা যায় না। একটাই সিনে তাঁরা স্ক্রিন শেয়ার করেছেন। ব্যাস, ওইটুকুই। কিন্তু, মুখোমুখি কোনও সংলাপ রাখেননি পরিচালক। শান্তিলালের চরিত্রটি একটি পুলিশ অফিসারের। যিনি ধর্ষকদের থার্ড ডিগ্রি দিলেও, বাড়িতে তাঁর স্ত্রীর প্রতি একই আচরণ করেন। এখানে পরিচালক ঘরে ও বাইরে এক প্রাপ্তবয়স্কের মুখোশ টেনে ছিঁড়ে ফেলেছেন। এমন এক মুখোশ, যা অনেক পরিবারের অন্দরের গল্প। বলা যেতে পারে, হিপোক্রেসির গালে সপাটে থাপ্পড় কষিয়েছেন পরিচালক।

শান্তিলালের স্ত্রীর চরিত্রে কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় সাবলীল। ঋতব্রতর মায়ের চরিত্রে অঙ্কিতাও তাই। ছবিতে স্কুল শিক্ষকের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় সিনেমা এডিটর রবিরঞ্জন মৈত্র ও চলচ্চিত্র পরিচালক রাজর্ষী দেকে। এঁদের সংলাপের মধ্যে সমাজের এক তাৎপর্যপূর্ণ চিত্র ফুটে ওঠে। যে শিক্ষক অনলের মোবাইল কেড়ে পর্ণ মুভি দেখার কারণে ধিক্কার জানায় স্টাফরুমে, সেই একই টেবিলে বসে পর্ণ মুভিটি অন্য শিক্ষকের সঙ্গে শেয়ার করে রসদ খুঁজে পায়। সেখানে রবিরঞ্জনের চরিত্রটি আলাদা মাত্রা পেয়েছে, যিনি সেক্স এডুকেশনের পক্ষে সারাক্ষণ লড়াই করে চলেছেন।

ছবিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সুমেধা। সাহসী দৃশ্যে রুপোলি পর্দায় সুন্দর লেগেছে। কিন্তু, সাবেকি পোশাকে তাঁর লুক ততটাও সুন্দর নয়। সুমেধা ও ঋতব্রতর সম্পর্কের সত্যতা কী, সেটাও ছবির চমক।

ছবিটি দেখতে দেখতে দর্শকের মনে হতে পারে তারা পরদায় নয়, মঞ্চে নাটকটি দেখছেন। কৌশিক যে থিয়েটারের লোক, সেটা বারবার প্রমাণ হবে দৃশ্যায়নে। এর আগে ইডিপাস সিনড্রোম নিয়ে ছবি হয়নি বাংলায়। এটাই প্রথম। তাই সেটাও একটা চমক। ছবিটি দেখতে দেখতে একবারও মনে হবে না সেটি অল্প বাজেটে তৈরি। এখানেই হয়তো পরিচালকের কাজকে অনেকটা এগিয়ে রাখা যায়। পরতে পরতে ভার্চুয়াল দৃশ্য। এদিক-ওদিক ভুল-ত্রুটি থাকলেও, ভালো ছবি। দর্শকের মনে দাগ কাটকে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য হলেও, এটিকে নির্দ্বিধায় শিক্ষণীয় হিসেবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে প্রতিস্থাপিত করা যেতে পারে।

ABOUT THE AUTHOR

...view details