পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / sitara

ফিল্ম রিভিউ : কতটা হাসাল বিবাহ অভিযান?

By

Published : Jun 21, 2019, 11:50 PM IST

Updated : Jun 22, 2019, 11:27 AM IST

বিবাহ অভিযান

কলকাতা : অনেকদিন পর, কোনও বাংলা ছবি এরকম হাসাল। তার কারণ, প্রকৃত অভিনেতারা যদি কমেডির মোড়কে নিজেদের প্রতিস্থাপন করতে শুরু করেন, তাহলে প্রকৃত অর্থেই সেটি সঠিক কমেডির রূপ ধারণ করে। ঠিক যেমনটা ঘটল সদ্যমুক্তিপ্রাপ্ত কমেডি ছবি 'বিবাহ অভিযান'-এর ক্ষেত্রে।


বউ। এই একটি শব্দে থরহরিকম্প বিবাহিত পুরুষ সমাজ, সে যে দেশেই হোক। বউ এক বিষমবস্তু, স্বীকার করেছেন অনেকেই। আর এই বউকে নিয়ে এমন কমেডি নতুন কিছুও নয়। কিন্তু বিরসা দাশগুপ্ত পরিচালিত 'বিবাহ অভিযান' শুধু কমেডি নয়, নির্ভেজাল বাংলা ছবি। এই গুরুগম্ভীর পরিস্থিতিতে যদি স্বস্তির নিশ্বাস খোঁজেন, যদি টেনশনের মধ্যেও মন হালকা করতে চান, আপনার নিকটবর্তী প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সপরিবারে দেখে আসতে পারেন 'বিবাহ অভিযান'।

প্রথমেই অভিনেতাদের প্রসঙ্গে আসি। প্যারালাল সিনেমার দুই অভিনেতা, যাঁরা 'চ্যাপলিন' কিংবা 'ধনঞ্জয়'এর মতো চরিত্র ফুটিয়ে তুলে সমালোচকদের বাহবা কুড়িয়েছেন, তাঁদের অসম্ভব সুন্দরভাবে বাণিজ্যিক ছবিতে হাস্যকৌতুক অভিনয় করিয়েছেন পরিচালক। বিরসাকে এখানে বলতে হয়, আপনার জহুরীর চোখ সঠিক অভিনেতাদের ঠিক চিনে নিয়েছে। আপনি ঠিক চিনে নিয়েছেন অনির্বাণ এবং রুদ্রনীলকে। এর আগে রুদ্রনীল যথেষ্ট পরিমাণে দর্শক হাসিয়েছেন তাঁর অভিনয় দিয়ে। দর্শক তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছেন রুদ্রনীলের অভিনয়। অন্যদিকে অনির্বাণ কমেডি চরিত্রে অনেকটাই আনএক্সপ্লোরড ছিলেন। এই প্রথম অনির্বাণকে এরকম একটি কঠিন চরিত্রে দেখা গেল। অসম্ভব ভালো কমিক সেন্স ফুটিয়ে তুলেছেন অনির্বাণ। অনির্বাণের পরিচিত, গতে বাঁধা শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ ও ব্যক্তিত্বে ভরপুর অভিনয়ের পাশাপাশি যে খিল্লি মোডে যাওয়ার এক সুপ্ত সত্তা লুকিয়ে আছে, তা বিবাহ অভিযান না দেখলে ঠাহর বোঝা যেত না।

আর অঙ্কুশ! এর আগেও অঙ্কুশকে বিভিন্ন কমেডি সিনে দেখে মুগ্ধ হয়েছে দর্শক। অনির্বাণ ও রুদ্রনীলের সঙ্গে সমান তালে তাল মিলিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। অসম্ভব হাসিয়েছেন। ছবির প্রথম হাফে রুদ্রনীল আর অঙ্কুশকে দেখানো হয়েছে। প্রথম হাফে অনির্বাণ নেই। তাঁকে মূলত দেখানো হয়েছে দ্বিতীয় হাফে। ট্রেলারে দেখানো হয়েছে, তাঁরা পালাচ্ছে বউদের অত্যাচারে। অফিসের বসকে মিথ্যে বলে, বউদের মিথ্যে বলে পালিয়ে বাঁচে না তাঁরা। অনেক কাণ্ড ঘটিয়ে তারা ধরা পড়ে ডাকাতদের হাতে।

ট্রেলারেই বলা আছে, সেই ডাকাত অনির্বাণ, অর্থাৎ বুলেট সিং। বুলেট সিং মালতির প্রেমে পাগল। বিয়ের রাতে মালতি রেগে চলে যায় বাপের বাড়ি। শর্ত দেয়, গণশা (পড়ুন অনির্বাণ ভট্টাচার্য) যদি বিখ্যাত না হতে পারে, কোনওদিন তার কাছে ফিরে আসবে না। অমনই নকল ডাকাত সেজে, খবরের কাগজের প্রথম পাতায় নাম তুলে, সে বিখ্যাত হবে। বাকিটা বলা বারণ। কীভাবে কী হয়? সেটা হলে গিয়ে দেখতে হবে।

এখানে তিন নারী চরিত্রে বাংলাদেশের অভিনেত্রী নুসরত ফারিয়া, কলকাতার সোহিনী সরকার ও প্রিয়াঙ্কা সরকার যথাযথভাবে তাঁদের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন পর্দায়। নুসরত ফারিয়ার মুখের সংলাপ শুনে একবারের জন্যেও মনে হয়নি তিনি ওপার বাংলা থেকে এসেছেন। সুন্দরী হওয়ার পাশাপাশি তিনি যে একজন দাপুটে অভিনেত্রী তা প্রমাণ করেছেন। সোহিনী সরকার এবং প্রিয়াঙ্কা সরকারের অভিনয় নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। দর্শক এর আগেও বহুবার এই দুই অভিনেত্রীর অভিনয় দেখেছেন। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এঁদের অভিনয়ের যথেষ্ট সুখ্যাতি আছে, যা বিবাহ অভিযানের মতো আদ্যোপান্ত বাণিজ্যিক ছবিতেও অটুট।

এছাড়াও, ছবিতে অভিনয় করেছেন অম্বরীশ ভট্টাচার্য। পুলিশ কমিশনারের চরিত্রে দেখা গেছে তাঁকে। নিতান্তই গোবেচারা বউয়ের ভয়ে ভীত একজন সজ্জন ব্যক্তি। অম্বরীশ এই ছবির ট্রাম্প কার্ড। ছবিতে আরও একটি বিশেষ সংযোজন আছে। তা হল, অনির্বাণের সংলাপ। যা অতি যত্নে লেখা হয়েছে শুধু অনির্বানের জন্য। বেশকিছু শব্দের মধ্যিখানের অক্ষর দুটি ওলট-পালট করা, কিংবা ইচ্ছে করে শব্দের মাঝখানে 'শ'র প্রয়োগ। যেমন বিখ্যাত শব্দটিকে অনির্বাণ বারবার বলেছেন 'বিশখ্যাত'। ফলতো, সংলাপ শুনতে লেগেছে অদ্ভুত এবং হাস্যস্পদ।

বিরসা দাশগুপ্তকে একটা কথাই বলার - আপনি বারবার এরকম ধরনের হাসির ছবি বানিয়ে যান। আর দর্শককে হাসিয়ে যান। এরকম গুরুগম্ভীর পরিবেশে, স্ট্রেসময় জীবনে স্বস্তি পাওয়ার জন্য AC ঘর নয়, ভরসা এই ধরনের বাংলা ছবি।

Last Updated : Jun 22, 2019, 11:27 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details