পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / sitara

রিভিউ : থ্রিলারে নিজের দাপট বুঝিয়ে দিলেন সৃজিত

By

Published : Apr 13, 2019, 12:56 PM IST

Updated : Apr 13, 2019, 3:48 PM IST

ভিঞ্চিদার পোস্টার

বাইশে শ্রাবণ, চতুষ্কোণের পর একটু অন্যধারার ছবিতে মন দিয়েছিলেন পরিচালক সৃজিত মুখার্জি। থ্রিলার থেকে বেরিয়ে তিনি রাজকাহিনি, জ়ুলফিকর, উমা বা এক যে ছিল রাজার মতো ছবি বানিয়েছেন। ছবিগুলি প্রশংসা পেলেও কোথাও যেন দর্শকের কাছে একটা খালি জায়গা ছিল। কিন্তু, নতুন ছবি 'ভিঞ্চি দা' ফের প্রমাণ করল যে থ্রিলারটা ভালোই রান্না করেন সৃজিত। বলতে গেলে, এই ছবিতে পুরনো সৃজিতকে ফিরে পেল দর্শক। 'ভিঞ্চি দা' ছবিটি দেখে হয়তো এমনটাই মনে হবে অনেকের। সেই থ্রিলাররূপী সৃজিত, যাঁর গল্প বলার কায়দা দর্শককে শেষ পর্যন্ত চোখ সরাতে দিত না। এককথায় এই ছবিতে সেই সৃজিতকে পেয়েছেন দর্শক। যদিও এদিকে ওদিকে অল্পস্বল্প ফাঁক ফোকর থেকে গেছে খানিক।

এখানে মজা হল, দর্শক কিন্তু আগে থেকেই জানে খুনি কে? প্রথমেই সেটা বলে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, খুনি কে? ক্ষণিকে এই নিয়ে লুকোচুরির কোনও জায়গায় রাখেননি পরিচালক। দেখানো হয়েছে, খুনি কেন খুনি এবং সে কীভাবে একের পর এক খুন করে সকলের চোখে ধুলো দিচ্ছে (অবশ্যই দর্শকের চোখে নয়)। যে কারণে ছক আরও কঠিন। এই ক্রাইম থ্রিলার হাউ ডান ইট অ্যান্ড হোয়াই ডান ইট থ্রিলার। ট্রেলার যাঁরা দেখেছেন, সকলেই জানেন, ঋত্বিক অর্থাৎ আদি বোস খুনি। একজন সিরিয়াল কিলার। তাহলে ভিঞ্চি দা কে? সে একজন শিল্পী। মেকআপ আর্টিস্ট। টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে মেকাপম্যান। বাবাও তাই ছিলেন। বাবাকে দেখে অনুপ্রেরণায় একই পেশায় আসার সিদ্ধান্ত নেয়। বাবা বিখ্যাত হলেও ভিঞ্চি দা সেভাবে বিখ্যাত হতে পাড়ে না। তবে বংশ পরম্পরায় পাওয়া পেশাকে একেবারে অন্যমাত্রায় নিয়ে চলে যায় সে। তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে আলোচিত মেকআপ পন্থা প্রস্থেটিক মেকআপে সিদ্ধহস্ত হয়ে ওঠে। এতটাই নির্ভেজাল মেকআপ দিতে পারে, যে আসল নকল ভেদাভেদ করা মুশকিল। তবে সেই কারণে কি তাকে ইন্ডাস্ট্রি মাথায় তুলে নাচে? একেবারেই নয়। ইন্ডাস্ট্রি চায় নায়ক-নায়িকার চরিত্র যতই কষ্টের হোক, তাঁরা গ্ল্যামারাস হয়ে ধরা দেবে বড় পরদায়। সেখানেই বিবাদ বাধে ভিঞ্চি দার সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির। তাকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে বলে শুভাকাঙ্ক্ষীরা। রেগেমেগে ভিঞ্চি দা বলে ওঠে, "আমি কি বাংলা সিরিয়ালের বিয়ে করা নতুন বউ, যে মানিয়ে নেব।" এই জায়গায় বেশ সাহসিকতা দেখিয়েছেন পরিচালক। বাংলা সিনেমার বেশকিছু ধামাচাপা দেওয়া সত্যকে তুলে ধরেছেন বড়পরদায়।

ইন্ডাস্ট্রি থেকে ব্রাত্য ভিঞ্চিকে আবিষ্কার করে আদি বোস। নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য কীভাবে তাকে ব্যবহার করে, কি তার পরিণতি, তা অবশ্য সমালোচনায় বলে দিলে দর্শকের মন ভেঙে যাবে। থ্রিলারধর্মী ছবির ক্ষেত্রে গল্প না বলাই শ্রেয়। তাহলে আদি বোস সিরিয়াল কিলার হল কেন?

ছোটো থেকেই অপরাধমনস্ক ছবির খলনায়ক। দোষীকে নির্মম শাস্তি দিতে তার জুড়ি নেই। কিন্তু, শাস্তি দিতে দিতে সে নিজেই কখন অপরাধী হয়ে গেছে, সেটা অবশ্য তার বিবেক দংশনের কারণ নয়। যারা দোষ করে ছাড়া পেয়ে যায়, নিজের মতো তাদের শাস্তি দেয় আদি বোস। এটা কোনও নতুন বিষয়বস্তু নয়। ভালো করে ভেবে দেখলে, আরও অনেক ছবির কথাই মনে পড়বে, যেখানে সাধারণ মানুষ হয়েও অপরাধী দমনে লিপ্ত। যদিও ভিঞ্চি দা ছবির ট্রিটমেন্ট আলাদা। তো কথা হচ্ছিল আদি বোসকে নিয়ে। অপরাধীদের দমন করতে গিয়ে সে বেশকিছু নিরপরাধ মানুষের ক্ষতি করে ফেলে। তাতে যদিও নিরপরাধ মানুষের প্রাণ যায় যাক না। আদি বোসের তাতে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। সে বিশ্বাস করে বৃহৎ মাত্রায় মানব কল্যাণের জন্য মাঝেসাজে দু'একটা খুন বা বলি অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। সে নিজেকে উবারমেনশ্ মনে করে। অর্থাৎ, সুপারম্যান। এটি একটি জার্মান শব্দ। নাৎসিরা ব্যবহার করত নিজেদের শ্রেষ্ঠ বোঝানোর জন্য। ফ্রেডরিক নিৎসে শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন এবং বলেন ঈশ্বরের মৃত্যু। কেন সে এতগুলো খুন করে ভিঞ্চি দা কে বোঝাতে গিয়ে আদি বোস বলে, ঈশ্বরের ক্ষমতা নেই। তিনি মৃত। তাই ক্ষমতাশালী উপরওয়ালাদের শাস্তি দিতে এসেছে তার মত উবারমেনশ্।

কথাগুলো ভিঞ্চিদাকে মারাত্মকভাবে নাড়িয়ে দেয়। তার উপর ভর করে আদি বোস। ভিঞ্চি পার্টনার ইন ক্রাইম হয়ে যায় আদি বোসের। এদিকে ভিঞ্চি দার অসহায় মুহূর্তে তার একমাত্র সহায় হয়ে দাঁড়ায় জয়া (সোহিনী সরকার), তার প্রেমিকা। ছবিতে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ঋত্বিক চক্রবর্তীর অভিনয়। পরিচালকরা বারবার ঋত্বিককে এই ধরনের কঠিন চরিত্রে অভিনয় করান। এবং ঋত্বিক বারবার সেই চরিত্রগুলো খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলেন পরদায়। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেনি। গোটা ছবি জুড়ে ঋত্বিক এগিয়ে, না রুদ্রনীল এগিয়ে, তার একটা অদৃশ্য লড়াই চলতে থাকে। কে কত মার্কসে এগিয়ে, তা অবশ্য দর্শকই ঠিক করবেন। ক্যামিও চরিত্রে ঋদ্ধি সেন ভালো। এক তোতলা যুবতীর চরিত্রে সোহিনীও বেশ মানানসই। ছবিতে সারাক্ষণ পান চিবিয়ে অভিনয় করেছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য, অর্থাৎ পুলিশ ইন্সপেক্টর পোদ্দার। চরিত্রে দাপট ছিল, কিন্তু আরেকটু ব্যবহার করলে বোধহয় ভালো হত।

দু'তিনটে জায়গায় ফাঁক থেকে গেছে। শেষদৃশ্যে সোহিনী এবং রুদ্রনীলের প্রস্থেটিক মেকআপ দেখে মনে হবে তার আগে ভিঞ্চি দার করা প্রস্থেটিক মেকআপের সঙ্গে এর কোনও সাদৃশ্য নেই, তা নিছকই দুর্বল। দু'তিন মাস আগে কোনও মানুষের গলার কণ্ঠস্বর শুনে এবং কোনও রেকর্ডিংয়ে কণ্ঠস্বর শুনে যে ধরে ফেলা যায় তা একই মানুষের, এতটা স্মৃতিশক্তি বোধহয় কারোর থাকে না। এ জায়গাটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। এই ত্রুটি গুলি এড়িয়ে ছবিটি কিন্তু বেশ টানটান। দর্শকের ভালোলাগবে।

Last Updated : Apr 13, 2019, 3:48 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details