একটা নামজাদা শপিংমল রাতারাতি পালটে ফেলে একটি পাড়াকে। বিশেষ করে বদল আসে এক মুদি দোকানীর জীবনে। এমনই একটি সূক্ষ্ম গল্প পরদায় বর্ণনা করেছেন পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। তাঁর চোখে ধরা পড়েছে বছর কয়েক আগে ফেলে আসা কলকাতা শহর এবং সেই শহরের একটি পাড়া। আসলে এই পাড়াটি একটি রূপকমাত্র। আসল বিষয় হল এই পাড়াটি প্রতিনিধিত্ব করে কলকাতা শহরের মধ্যবিত্ত সমাজকে। যে সমাজে প্রতি রবিবার কিংবা ছুটির দিনে থলে হাতে বাড়ির বাবুরা বেরিয়ে পড়েন বাজার করতে। মাছ, মাংস, সবজি, ফল কেনার পর সেই থলে গিয়ে জমা পড়ে মুদির দোকানে। মুদির দোকানি থলে ভরতি করে দেয় মাস্কাবারি সামান। পাশে পড়ে থাকা খাতায় চলতে থাকে হিসেব-নিকেশ কষা। তাদের কারোর কাছে সোয়াইপ মেশিন নেই। ধার বাকিতে খাতায় কলমে চলে ডেবিট-ক্রেডিটের হিসেব। তেমনই একজন মুদি দোকানি শংকর। যে চরিত্রটিকে পরদায় অসম্ভব ভালো ফুটিয়েছেন কৌশিক গাঙ্গুলি। বরাবরের মতো এই ছবিতেও তাঁর অভিনয় বিশেষ দাগ কেটে যায়।
শুধু শঙ্কর নন, যে পাড়ায় তার দোকান (বাসস্থানও বলা যেতে পারে), সেই পাড়ার বাসিন্দারাও এই ছবিতে সমান গুরুত্বপূর্ণ। কালীর চরিত্রে শাশ্বত এক অনন্য নজির গড়েছেন এই ছবিতে। বহুরূপীর চরিত্রে রুদ্রনীল বেশ ভালো। স্কুল মাস্টারের চরিত্রে অঞ্জন দত্তকে অন্য রকম লেগেছে। বিশেষ করে অঞ্জনের কিছু সংলাপ মনে দাগ কেটে যাবে। শঙ্কর মুদির বিপর্যস্ত অবস্থার কিছু দৃশ্য দেখেও দর্শক চোখের জল ফেলবেন। এই জায়গাতেই বলে বলে ছক্কা মেরেছেন কৌশিক। এ এমন এক পাড়ার গল্প, যা খুব সচরাচর দেখা যায় উত্তর কলকাতায় কিংবা দক্ষিণ কলকাতার শেষ প্রান্তে। যেখানে মানুষ থাকে মানুষের পাশে। পাড়ার অমুককাকুর শরীর খারাপ হলেও তমুক দাদা রাতবিরেতে পাশে এসে দাঁড়ায়। আপদে-বিপদে তারা একে অপরের সঙ্গী।
ছবির শুরুর দিকে এমনই চিত্র ফুটে ওঠে পরদায়। মুদির দোকান অন্নপূর্ণা ভাণ্ডারের তেলচিটে দেওয়াল, খদ্দেরের নিত্য আনাগোনা ও অসম্ভব ব্যস্ততা দিয়ে শুরু হয় ছবি। শঙ্করের ছোটো মেয়েটিও (প্রিয়াঙ্কা) এখানে সমান গুরুত্বপূর্ণ। তার মা নমিতার (শ্রীলা মজুমদার) সাজানো রোজনামচা এক সমাজ চিত্র তুলে ধরে। সেই পাড়াতে তারও রয়েছে একটি লেডিস টেইলারিংয়ের দোকান। সেই পাড়াতেই রয়েছে সেলুনের দোকানও। নিত্য প্রয়োজনের সবকিছুই হাতের সামনে। কিন্তু এক ছাদের তলায় নয়।