কলকাতা : এযুগের একলব্যরা এমন এক দ্রোণাচার্যকে পেয়েছিল, যাঁর দেখানো পথে, প্রশিক্ষণে, শিক্ষায় আজ আকাশ ছুঁয়েছে তাদের স্বপ্ন, ডানা পেয়েছে তাদের চিন্তাশক্তি, আর গরিব-বড়লোকের দ্বৈরথে জায়গা করেছে তাদের মেধা ও শ্রম। সেই দ্রোণাচার্যের নাম আনন্দ কুমার। বিহারের মাস্টারমশাই। হতদরিদ্র, অভাবী অথচ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ৩০জনের একটি ক্লাস তৈরি করেছিলেন আনন্দ। প্রথম বছরেই ৩০জনের এই টিম IIT-র মতো কঠিন পরীক্ষা দেয় এবং প্রত্যেকেই সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পা রাখে ভারতবর্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। সেটি ২০০২ সালের কথা। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত প্রত্যেক বছরই আনন্দ এমন ৩০জন দরিদ্র, মেধাবী ছেলে-মেয়েদের IIT-র জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। কীভাবে শুরু হয় আনন্দর এই যাত্রা, সেই নিয়েই 'সুপার ৩০'। বিকাশ বহল পরিচালিত এই ছবিতে আনন্দের চরিত্রে অভিনয় করেছেন হৃতিক রোশন।
অনেকদিন পর প্রেক্ষাগৃহে আসতে চলেছে হৃতিকের ছবি 'সুপার ৩০'। কলকাতায় ছবির বিশেষ স্ক্রিনিংয়ে উপস্থিত দর্শক মাঝে মাঝে হাততালি দিয়ে উঠেছে। প্রথমত বাহবা দিতে হয় হৃতিকের অভিনয়কে। আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিণত তিনি। আনন্দ কুমারের লড়াইয়ের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন অভিনয় ও চেহারার মাধ্যমে। অনেকগুলো কারণ আছে ছবিটি দেখার :
- যা নেই ভারতে, তা নেই ভারতে, ব্যাসদেবের সৃষ্ট মহাকাব্য 'মহাভারত' সম্পর্কে এমন কথাই বলা হয়। অর্থাৎ, ভারতবর্ষে যা যা আছে, তার সবটাই বর্ণিত হয়েছে মহাভারতে। তার মধ্যে একটি হল, রাজার ছেলেই কেবল রাজা হবে। অন্য কেউ সিংহাসনে বসবে না। তাই রাজার ছেলে অর্জুনের মহাবীর হওয়ার কথা। কারণ, সে রাজার ছেলে এবং ক্ষত্রিয়। সমাজ তাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনুর্বীর হওয়ার অধিকার দিয়েছে। কিন্তু শূদ্র বালক একলব্য? অর্জুনের চেয়ে বেশি প্রতিভাবান হওয়া সত্ত্বেও গুরু দ্রোণাচার্যের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে পারেনি। লুকিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার শাস্তিস্বরূপ তাকে গুরুদক্ষিণা দিতে হয়েছিল হাতের বুড়ো আঙুল কেটে। প্রতিভার জলাঞ্জলি দিতে হয়েছিল দ্রোণাচার্যের পায়ে। কেননা, দ্রোণাচার্য কেবল রাজার ছেলের গুরু। কোনও গরিবের নয়। সেই মিথকে ভেঙে খানখান করে দিয়েছিলেন বিহারের দ্রোণাচার্য আনন্দ কুমার। একসময় তিনি বড়লোক ঘরের ছেলেমেয়েদেরই IIT-র প্রশিক্ষণ দিতেন একটি কোচিং সেন্টারে। পরবর্তীকালে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, অভাবী ছাত্রছাত্রীদেরই প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করবে এর জন্য। একলব্যের দ্রোণাচার্য হবেন তিনি। সুপার ৩০ ছবিটি এই বিষয়টিকেই তুলে ধরেছে। এই ধরনের আরও একটি ছবিতে রানি মুখার্জি অভিনয় করেছেন, নাম 'হিচকি'। তবুও সুপার ৩০ বিশেষ জায়গা করে নেবে চিত্রনাট্যের মহিমা ও অভিনয় গুণে।
- ছবিটিতে মেদ নেই। ভীষণ সংক্ষিপ্ত। টানটান বলা যেতে পারে। ছবিটি দেখতে গিয়ে আপনার পপকর্নের প্রয়োজন নেই। বোর হওয়ার সম্ভাবনা কম।
- হৃতিক নিজেকে ভেঙেছেন এই ছবির জন্য। একজন গ্ল্যামারাস অভিনেতা হয়েও হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য হয়ে অভিনয় করা কতটা কঠিন, তা না দেখলে বোঝা যাবে না। হৃতিকের নিজস্ব লুক একেবারেই বদলে ফেলা হয়েছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় তাঁর বাইসেপ হাত, চকচকে দাঁত ও গোলাপি মারি বড্ড বেমানান লেগেছে। এটুকু পুষিয়ে নেওয়া যায় ছবির চিত্রনাট্য ও হৃতিকের অভিনয় গুণে। এছাড়াও পঙ্কজ ত্রিপাঠীর মতো অভিনেতারা সারাক্ষণ মুগ্ধ করবে আপনাকে।
- সামাজিক জাগরণভিত্তিক ছবি নতুন কিছু নয়। আমরা যেই সময় দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে সমাজ সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য নিত্যনতুন বিষয়বস্তু নিয়ে ছবি তৈরি হচ্ছে গোটা ভারতবর্ষে। বলিউডে সাম্প্রতিককালে পরপর ছবি তৈরি হচ্ছে এই ধরনের। সুপার ৩০-কেও সেই ধারায় ফেলে দেওয়া যায় অনায়াসে। যুব সমাজকে জাগিয়ে তুলতে প্রয়োজন এক যুব নেতার। সেই যুবনেতাদের কাঁধে অনেক দায়িত্ব। তার সংলাপে চাই অনুপ্রেরণামূলক চমক। সবই পাওয়া যাবে এই ছবিতে। যেমন হৃতিকের একটি সংলাপ নাড়িয়ে দেবে আপনার ভিতরটাকে। যেমন 'চক দে ইন্ডিয়া' ছবিতে শাহরুখ খানের একটি সংলাপ ছিল '৭০ মিনিট', তেমনি সুপার ৩০-তেও হৃতিক বলছেন, বড়লোকদের জন্য রাস্তা অনেক মসৃণ। আমাদের গরিবদের জন্য তৈরি করা রয়েছে বড় বড় গর্ত। আমদের মতো গরিবদের সেইসব গর্তে পা না দিয়ে, লাফিয়ে লাফিয়ে যাতায়াত করতে হবে। আমাদের শুরু থেকেই বড় বড় লাফে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে, "বড়ি ছালাং লাগায়েঙ্গে'।